Granted conditional bail : ত্রিপুরায় কথিত সাম্প্রদায়িক হিংসার মিথ্যা ও ভুয়ো খবর প্রচারের দায়ে গ্রেফতার দুই তরুণী সাংবাদিকের শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৫ নভেম্বর৷৷ ত্রিপুরায় কথিত সাম্প্রদায়িক হিংসার মিথ্যা ও ভুয়ো খবর প্রচারের দায়ে গ্রেফতার দিল্লি-ভিত্তিক দুই যুবতী সাংবাদিককে আজ সোমবার শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত৷ গতকাল অসমের করিমগঞ্জ জেলার অন্তর্গত নিলামবাজার থানার পুলিশ দুই তরুণী সাংবাদিককে আটক করেছিল৷ এর পর ভোররাতে ত্রিপুরা পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে রাজ্যে নিয়ে এসেছিল৷ আজ তাঁদের গোমতি জেলা মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে সোপর্দ করেছিল পুলিশ৷ আদালত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেছে৷
দিল্লি-ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল এইচডব্লিউ নিউজ নেটওয়ার্কের ওই দুই তরুণী সাংবাদিক সমৃদ্ধি কে সকুনিয়া এবং স্বর্ণা ঝা ৭৫ হাজার টাকা করে ব্যক্তিগত বন্ড এবং আগামীকাল মঙ্গলবার কাঁকড়াবন থানায় হাজিরা দেওয়ার পর মুক্তি পাবেন৷ এদিকে, তথ্য ও সংসৃকতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী ওই দুই সাংবাদিককে রাজনৈতিক দলের দোসর বলে মন্তব্য করেছেন৷


জানা গেছে, ত্রিপুরায় তথাকথিত সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সম্পর্কিত খবর সংগ্রহ করতে গত বৃহস্পতিবার এসেছিলেন সমৃদ্ধি এবং স্বর্ণা৷ এখানে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের উসকানি দিয়ে বিশ্বহিন্দু পরিষদের বিরুদ্ধে তাঁদের মুখ থেকে মিথ্যা বক্তব্য বের করার অপচেষ্টা করেছিলেন বলে উভয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ৷ ইত্যবসরে ত্রিপুরায় তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্মের নামে জনতাকে উসকানো এবং অপরাধজনিত ষড়যন্ত্র রচনার দায়ে উত্তর ত্রিপুরা জেলার ফটিকরায় থানায় এবং গোমতি জেলার কাঁকড়াবন থানায় মামলা রুজু হয়েছে৷ এরই মধ্যে পুলিশের কাছে খবর যায়, এঁরা ত্রিপুরা থেকে দিল্লির উদ্দেশে পালত্রচ্ছেন৷ এই খবরের ভিত্তিতে গোমতির পুলিশ সুপার যোগাযোগ করেন অসমের করিমগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে৷ করিমগঞ্জের পুলিশ সুপার ত্রিপুরা-অসম জাতীয় সড়ক সংলগ্ণ সব থানাকে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে ফেক খবর ছড়ানোকারিণী দুই সাংবাদিককে ধরতে নির্দেশ দেন৷ এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রবিবার নিলামবাজার থানা কর্তৃপক্ষ দলবল নিয়ে জাতীয় সড়কে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করেন৷ ত্রিপুরা পুলিশ তাঁদের অসম থেকে ত্রিপুরায় নিয়ে আসে এবং দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর উভয়কে গ্রেফতার করে৷
তাঁদের বিরুদ্ধে কাঁকড়াবন থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩এ, ১৫৩বি, ১৯৩, ৫০৪, ২০৪ এবং ১২০বি ধারায় মামলা রুজু হয়েছে৷ মামলা নম্বর ৮২/২০২১৷ এ-বিষয়ে তথ্য ও সংসৃকতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, ত্রিপুরায় শান্তি-সম্প্রীতি নষ্ট করার বদউদ্দেশ্যে ওই দুই সাংবাদিক রাজ্যে এসেছেন৷ ত্রিপুরাকে বদনাম করার জন্য রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে মিথ্যা খবর রটিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টা করেছেন তাঁরা৷


সুশান্তবাবু বলেন, গত ১১ নভেম্বর সমৃদ্ধি কে সকুনিয়া এবং স্বর্ণা ঝা ত্রিপুরায় আসেন এবং তাঁরা উনকোটি জেলায় গিয়ে সংখ্যালঘু মানুষদের কাছে উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন৷ তাঁরা নিজেদের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকেও মিথ্যা খবর ছড়িয়েছেন৷ তাই তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় পুলিশ দুজনকে সহযোগিতা করতে বলেছিল৷ কিন্তু সহযোগিতা করার বদলে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তাঁরা৷
তথ্য মন্ত্রী দৃঢ়তার সাথে বলেন, ত্রিপুরার মসজিদে আগুন কিংবা ভাঙচুর এবং সংখ্যালঘু অংশের মানুষকে মারধরের কোনও ঘটনাই ঘটেনি৷ অথচ সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ত্রিপুরায় ঢুকে ওই দুই সাংবাদিক মিথ্যা ও অসত্য খবর প্রচার করেছেন৷ তাঁর দাবি, ওই দুই সাংবাদিক রাজনৈতিক দলের দোসর হিসেবে ত্রিপুরায় এসেছেন৷ তাঁরা ত্রিপুরাকে লণ্ডভণ্ড করতে চাইছেন৷ তিনি প্রশ্ণ তুলেন, তাঁরা কোনও অন্যায় না করে থাকলে পুলিশের ডাকে ভয় পেয়েছেন কেন? আগরতলা দিয়ে বিমানে দিল্লি যাওয়ার বদলে অসমে কেন পালিয়ে গেছেন?
এদিকে, আজ গোমতি জেলা মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালত ওই দুই সাংবাদিককে ৭৫ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন মঞ্জুর করেছে৷ শুধু তাই নয়া জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর দিন থেকে প্রতি মাসের প্রথম দিন মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের সামনে উপস্থিত হতে হবে যতদিন না পর্যন্ত পরবর্তী নির্দেশ না মিলে৷ তাছাড়া তারা দেশ ছেড়ে অন্য কোন রাষ্ট্রে যেতে পারবেন না৷ পুনরায় তাঁদের হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ শুধু তা—ই নয়, আগামীকাল তাঁদের কাঁকড়াবন থানায় হাজিরা দিতে হবে৷ পাশাপাশি, ওই মামলায় পুলিশকে দ্রুত চার্জশিট জমা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে আদালত৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *