নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ নভেম্বর।। দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার মতাই এলাকায় এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার বাপের বাড়ির লোকজন। অভিযুক্ত স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের গ্রেপ্তারের দাবিতে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আত্মীয়-স্বজনরা। বিলোনিয়ার মতাই এলাকা থেকে কুড়ি বছর বয়সি অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ সুপ্রিয়া বৈদ্যের পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ নিয়ে- উত্তেজনা ছড়ায় বিলোনিয়া মহিলা থানা চত্বরে । যদিও বা অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে গৃহবধূ সুপ্রিয়ার শশুর বাড়ির লোকজনেরা চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালালেও মৃতার বাপের বাড়ির লোকজনেরা অভিযোগ করেছেন সুপ্রিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বাপের বাড়ির তরফ থেকে বিলোনিয়া মহিলা থানাতে গৃহবধূর স্বামী অলক শীল শর্মা সহ শশুর , শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা নিয়েছে শুনে ক্ষোভে বিলোনিয়া মহিলা থানা ঘেরাও করে মৃতার বাপের বাড়ির লোকজনরা। অভিযুক্তদের গ্ৰেপ্তারের জুড়লো দাবি করে গৃহবধূর বাপের বাড়ির লোকজনেরা। এছাড়া তারা আরো হুঁশিয়ারি দেয় যদি চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আসামি গ্রেফতার না হয় তাহলে তারা থানা ঘেরাওসহ বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করতে বাধ্য হবে।গত দেড় বছর পূর্বে বড়পাথরী পূর্ব পিপারিয়া খোলা এলাকার নিবাসী- কৃষ্ণ বৈদ্যের একমাত্র মেয়ে সুপ্রিয়া বৈদ্যের সাথে সামাজিক নিয়ম বিধি মেনে- বিয়ে দেওয়া হয় মতাই এলাকার গোপাল শীল শর্মার পুত্র অলক শীল শর্মা সাথে। বিবাহের পর থেকে গৃহবধূ সুপ্রিয়াকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে অত্যাচারের শিকার হতে হয় নিজের স্বামী শাশুড়ি এবং ননাস এর হাতে। কখনো বা যৌতুকের জন্য চাপ সৃষ্টি করে- আবার কখনোবা পৈত্রিক রাবার বাগানের সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয় গৃহবধূ সুপ্রিয়ার উপর। এরইমধ্যে রবিবার দুপুরে সুপ্রিয়ার বড় ভাই সুপ্রিয়াকে বাপের বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে- শাশুড়ি এবং স্বামীর পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় -তাদের অনিচ্ছায় সুপ্রিয়াকে বাড়ি থেকে গেলে ওকে হত্যা করা হবে- এমনই অভিযোগ করা হয় সুপ্রিয়ার বড় ভাইয়ের পক্ষ থেকে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বোনকে না নিয়ে ফিরে যেতে হয় সুপ্রিয়ার বড় ভাইকে।তবে ঘটনা এখানেই শেষ নয়। সোমবার দুপুর প্রায় দেড়টা নাগাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এর তরফ থেকে- ফোন করে সুপ্রিয়ার বাপের বাড়িতে সুপ্রিয়ার মৃত্যুর খবর দিয়ে জানানো হয়- সুপ্রিয়ার মৃতদেহ মতাই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রাখা আছে ।খবর শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে সুপ্রিয়ার বাপের বাড়ির লোকজনদের। সুপ্রিয়ার শ্বশুরবাড়ির অভিযোগ আনুমানিক সাড়ে বারোটা নাগাদ সুপ্রিয়া গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে এবং শশুরবাড়ি থেকে মরদেহ নিয়ে আসা হয় মতাই প্রাথমিক হাসপাতালে।
খবর পেয়ে বিলোনিয়া মহিলা থানার পুলিশ ছুটে যায় ঘটনাস্থলে। তদন্তের স্বার্থে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বাড়ির লোকজনদের। এদিকে মৃত্যুর খবর শুনে সুপ্রিয়ার বাপের বাড়ির লোকজন এবং প্রতিবেশিরা মিলে শতাধিক লোকজন – সুপ্রিয়ার শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে খুনের অভিযোগ এনে প্রতিবাদ জানায় বিলোনিয়া মহিলা থানা চত্বরে। ঘটনা বেগতিক দেখে বিলোনিয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সৌম্য দেববর্মা ছুটে যান ঘটনাস্থলে।মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ ও টি এস আর বাহিনী ।মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সৌম্য দেববর্মা তদন্তের স্বার্থে কথা বলেন সুপ্রিয়ার পরিবারের লোকজনদের সাথে এবং সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস প্রদান করেন। সুপ্রিয়ার বড় ভাই সুপ্রিয়ার স্বামী শাশুড়ী এবং ননাসের বিরুদ্ধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে একটি খুনের মামলা দায়ের করেন বিলোনিয়া মহিলা থানায়। অন্তঃসত্ত্বা সুপ্রিয়ার এই মৃত্যুর পেছনে সত্যিকারের কি রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে, পুলিশ যাতে সঠিক তদন্ত ক্রমে রহস্য উদঘাটন করে এবং আসামিরা শাস্তি পায় সেই দাবিও তুলেছে । আদৌ কি গৃহবধূ সুপ্রিয়ার মৃত্যুর পেছনে যারা জড়িত তারা শাস্তি পাবে ?এখন এইটা লাখ টাকার প্রশ্ন । নাকি ঠান্ডা করে চলে যাবে সুপ্রিয়ার কেস ফাইল প্রশ্ন চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে ।