Replacing the old thinking : পুরাতন চিন্তা ভাবনাকে পাল্টে ত্রিপুরা এখন অগ্রগতির দিকে এগিয়ে চলছে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ নভেম্বর৷৷ রাজ্যের বিকাশে পুরাতন চিন্তা ভাবনাকে পাল্টে ত্রিপুরা এখন অগ্রগতির দিকে এগিয়ে চলছে৷ বর্তমানে ত্রিপুরায় ডাবল ইি’ন সরকার পূর্ণশক্তি এবং আন্তরিকতার সাথে ত্রিপুরা সহ দেশের সর্বাত্মক উন্নয়নে নিয়োজিত৷ আগরতলা ও দিল্লী এখন একসাথে উন্নয়নের দিশায় ত্রিপুরার বিকাশের জন্য নীতি প্রনয়ণ করছে যাতে ত্রিপুরাকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়া যায়৷
আজ দুপুরে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পে আওতাভুক্ত রাজ্যের সুুবিধাভোগীদের মধ্যে ঘর নির্মাণের জন্য প্রথম কিস্তির টাকা প্রদান করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একথা বলেন৷ উল্লেখ্য, আজ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পের আওতাভুক্ত ত্রিপুরার ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৮০৫ জন সুুবিধাভোগীকে প্রথম কিস্তির টাকা প্রদান করা হয়েছে৷ এই প্রকল্পে পাকা ঘর নির্মাণে প্রথম কিস্তির ৪৮ হাজার টাকা করে সুুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি দেওয়া হয়েছে৷ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের নেত’ত্বাধীন রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার ত্রিপুরার অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দায়বদ্ধ৷


প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পের অধীনে দেওয়া প্রথম কিস্তি আজ ত্রিপুরার স্বপকে নতুন গতি দিয়েছে৷ তিনি বলেন, এক সময় উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলি বিভিন্ন কারনে উপেক্ষিত ছিল৷ কিন্তু বর্তমানে দেশের সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের ভাবনা প্রতিফলিত হচ্ছে৷ উন্নয়নকে এখন দেশের ঐক্য অখণ্ডতার সমার্থক বলে মনে করা হয়৷ প্রধানমন্ত্রী ভারতের আত্মবিশ্বাসী নারীদের দেশের উন্নয়নে ভূমিকা ও অবদানের কথাও তুলে ধরেন৷ মহিলা স্বসহায়ক গোষ্ঠীগুলিকে জনধন অ্যাকাউন্টের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে৷ এই ধরনের স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীদের জন্য উপলদ্ধ জামানতমুক্ত ঋণ দ্বিগুন করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, প্রায় ৪ হাজার মহিলা স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী রাজ্যে ছিল৷ ২০১৮ সালের পর রাজ্যে আগের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় নতুন স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী গঠিত হয়েছে৷ মহিলা স্বসহায়ক দলে যুক্ত মহিলারা ক’ষি, বাঁশ বেঁত নির্ভর বিভিন্ন শিল্প সামগ্রী তৈরির সাথে যুক্ত হচ্ছেন৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে সরাসরি সুুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাচ্ছে৷
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার স্বাচ্ছন্দের কথাও তুলে ধরেন৷
তিনি বলেন, আগে সাধারণ মানুষ প্রতিটি কাজে সরকারি অফিসে হয়রানির শিকার হতেন, কিন্তু এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে৷ সরকার নিজেও এখন জনগণের কাছে সমস্ত সুুযোগ সুুবিধা নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, ক’ষকদের উৎপাদিত ফসল বিক্রিতে যাতে কোন ধরণের অসুুবিধা না হয় তার জন্য ত্রিপুরা সরকার নূ্যনতম সহায়ক মূল্যে ক’ষকদের উৎপাদিত ফসল বিক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে উত্তর পূর্বা’ল ও দেশের অন্যান্য অ’লের জনজাতি যোদ্ধারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন৷ এই ঐতিহ্যকে সম্মান জানাতে এবং এই উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷ এর ধারাবাহিকতায় দেশের সরকার আজাদি কা অমৃত মহোৎসবে আরও একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এখন থেকে প্রতি বছর ১৫ নভেম্বর ভগবান বিরসা মুণ্ডার জন্মবার্ষিকী দিনটিকে আদিবাসী গৌরব দিবস হিসেবে উদযাপন করা হবে৷


ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বা’লে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রের বিকাশে আধুনিক পরিকাঠামো ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে৷ উত্তরপূর্বা’ল সহ ত্রিপুরার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে নতুন রেললাইন, অসামরিক বিমান পরিবহন, জাতীয় সড়ক সহ একাধিক প্রকল্পের কাজ চলছে৷ উত্তর পূর্বা’ল রাজ্যগুলির এই অভূতপূর্ব উন্নয়ন আগামী দিনে দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবে৷ সচিবালয় থেকে ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, ত্রিপুরাবাসীর জন্য আজ এক ঐতিহাসিক দিন৷ আজ এক সাথে ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৮০৫ জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রতিজনকে ৪৮ হাজার টাকা করে মোট ৭০৯ কোটি ৪৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, পূর্বে যাদের টিনের ছাদের ঘর ছিল তাদের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পে নিয়মানুসারে ঘর পাওয়ার সুুবিধা ছিলনা৷ বর্তমান রাজ্য সরকার সেই সমস্যা কেন্দ্রীয় সরকারের গোচরে নিয়ে আসেন৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের এই সমস্যার সমাধানে নিয়ম নির্দেশিকার প্রতিবন্ধকতা দূর করে এবং ত্রিপুরা সহ আসাম রাজ্যের ভৌগোলিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে নতুন নিয়ম এনে যাদের টিনের ছাদের ঘর রয়েছে তাদেরকেও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পের আওতাভুক্ত করে ঘর দেওয়ার সুুযোগ করে দিয়েছে৷ এজন্যই আজ বিপুল সংখ্যায় ঘর দেওয়া সম্ভব হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই ঘর নির্মাণের কাজ শেষের পর আরও ৭০ হাজার সুুবিধাভোগীকে আগামী মার্চ-এপ্রিলে ঘর দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ পাশাপাশি আরও ২২ হাজার ঘর দেওয়ার কাজ প্রক্রিয়াধীন৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার পাশাপাশি অন্যান্য প্রকল্পগুলির সুুফলও রাজ্যবাসী পাচ্ছেন৷ প্রধানমন্ত্রী প্রদর্শিত পথে বর্তমান রাজ্য সরকার রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে চলেছে৷ মহিলা স্বসহায়ক দল গঠনের মাধ্যমে রাজ্যের মহিলাদের স্বশক্তিকরণের পাশাপাশি তাদের আত্মনির্ভরতার দিকগুলিও তিনি তুলে ধরেণ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রাজ্যের স্বসহায়ক দলগুলিতে প্রায় ২ লক্ষ ৭৮ হাজার মহিলা যুক্ত রয়েছেন৷ তারা স্বনির্ভরতার দিকেও অগ্রসর হচ্ছেন৷ স্বসহায়ক দলগুলির জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনের অধীনে যে ঋণ পাওয়ার সুুবিধা রয়েছে সেই ঋণের সুুদের হার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে৷ এর ফলে রাজ্যের মহিলারা অনেকটাই উপক’ত হবেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মহিলাদের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী স্বসহায়ক দলের মাধ্যমে বর্তমানে রাজ্যের রেশন দোকানগুলিতে বিক্রি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরার বিভিন্ন সমবায় সমিতি সমূহ আজ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গেছে৷ বর্তমান রাজ্য সরকারের সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে ত্রিপুরা আজ স্বনির্ভরতার পথে অনেকটাই অগ্রসর৷ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন এবং প’ায়েতীরাজ মন্ত্রী গিরিরাজ সিং সহ রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মণকে ধন্যবাদ ’াপন করেন৷


ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পের আওতাভুক্ত রাজ্যের বিভিন্ন জেলার সুুবিধাভোগীদের এই প্রকল্পে ঘর প্রদান সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন৷ এদিনের অনুষ্ঠানে বিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন এবং প’ায়েতী রাজ মন্ত্রী গিরিরাজ সিং৷ ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে সচিবালয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা, মুখ্য সচিব কুমার অলক, স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা, গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব সৌম্যা গুপ্তা সহ অন্যান্য শীর্ষ আধিকারিকগণ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন৷
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পে সুুবিধাভোগী উত্তর ত্রিপুরা জেলার যুবরাজনগরের সমীরণ নাথ, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার কাদের বিয়া, সিপাহীজলা জেলার সোমা মজমদার ও ধলাই জেলার অনিতা কুকি দেববর্মার সাথে মতবিনিময় করেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *