Conspiring to satisfy political interests : রাজ্যের উন্নয়নের গতিকে রুখে দিতে সক্রিয় একটা অংশ রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে ষড়যন্ত্র করছে : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ আগস্ট৷৷ ত্রিপুরার উন্নয়নের গতিকে রুখে দিতে সক্রিয় একটা অংশ, রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে রাজ্যে ষড়যন্ত্র করছে৷ কিন্তু ত্রিপুরার সচেতন নাগরিকগন, ত্রিপুরেশ্বরী মায়ের এই ভূমিতে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র স্বার্থক হতে দেবেন না৷
কিছু দল যারা ত্রিপুরায় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে তারা উন্নয়নের নিরিখে অনেকাংশেই ত্রিপুরা থেকে পিছিয়ে৷ রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি নয়, বরং রাজ্যের সর্বাঙ্গীন বিকাশই আমাদের প্রধান লক্ষ্য৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের নিরিখে ত্রিপুরা আজ গোটা দেশে নজির তৈরী করছে৷


বিগত দিনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে, প্রকৃত সুবিধাপ্রাপকদের বঞ্চিত করা হয়েছে৷ কিন্ত বর্তমানে কোনো ধরনের রং বিচার না করেই, বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের সহায়তা সমস্ত স্তরের সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে৷ রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি নয়, মানব সেবাই আমাদের মূল ধর্ম৷
সঠিক ’নিয়ম, নীতি ও নিয়ত’ এই তিনটি ’ন’-কে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার৷ রাজনৈতিক রঙয়ের উর্ধে উঠে ঘরে ঘরে রোজগার তৈরির মাধ্যমে আত্মনির্ভর পরিবার তৈরি করে রাজ্যের অর্থনৈতিক মানোন্নয়ন সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র৷
বর্তমানে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য বেশ কিছু ক্ষেত্রে ত্রিপুরা গোটা দেশে মার্গদর্শন করছে৷ আজ জিরানীয়া আর ডি ব্লক, কৃষি মহকুমা ও এস এল বি সি-র উদ্যোগে আয়োজিত বিশেষ কৃষি ঋণ শিবিরের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কৃষকদের অর্থনৈতিক মানোন্নয়ন না করে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়৷ অন্নদাতাদের সার্বিক কল্যাণে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের সুুফল পাচ্ছেন রাজ্যের কৃষকগণ৷

কৃষকদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা, বীমার মাধ্যমে ফসলের সুুরক্ষা, ফসলের ক্ষতিপূরণ আদায়ের নিশ্চয়তা, সহায়কমূল্যে ধান ক্রয় ও কিষাণ রেলের সহায়তায় উৎপাদিত ফসল স্বল্প খরচে বহির্রাজ্যের বাজারে বিক্রির সুুযোগ পাওয়ার ফলে রাজ্যের কৃষকদের আর্থিক মান উন্নত হচ্ছে৷ বেড়েছে কৃষকদের মাথাপিছু গড় আয়৷ সমাজের অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুুযোগ পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে রোজগার সুুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার৷ আত্মনির্ভর পরিবার গড়ার লক্ষ্যেও বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে৷ প্রকৃত সুুবিধাভোগীরা যেন কোনওভাবেই বি’ত না হন সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সবকা সাথ সবকা বিকাশের লক্ষ্যে সমস্ত অংশের নাগরিকদের কল্যাণে কাজ করছে সরকার৷ কেন্দ্রীয় ব’নার অজহাত না তুলে রাজ্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের ফলে ত্রিপুরা উন্নয়নের নিরিখে গোটা দেশে আজ নজির তৈরি করেছে৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাজ্যে কোভিড অতিমারী মোকাবিলায় বড়মাত্রায় টিকাকরণ সম্ভব হয়েছে৷ কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও সরকারের সঠিক ব্যবস্থাপনার ফলে অনাহারে রাজ্যে একজন ব্যক্তিরও প্রাণহানি হয়নি৷ প্রয়োজন রয়েছে এমন পরিবারের জন্য রেশন সামগ্রী, নভেম্বর মাস পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে ৫ কেজি করে চাল প্রদান ও অন্যান্য প্রকল্পের সহায়তায় কোভিড অতিমারীর মধ্যে কারোরই অন্নের অভাব হয়নি৷ গোটা দেশে প্রধানমন্ত্রী যে কোভিড টিকাকরণের উদ্যোগ নিয়েছেন সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করে চলেছে রাজ্য সরকার৷ জিরানীয়া মহকুমার প্রায় ৯৭ শতাংশ টিকাকরণ সম্পন্ন হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই৷ এরজন্য এই অঞ্চলের সচেতন নাগরিকদের ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ বিগত দিনে একটা অংশ থেকে ত্রিপুরাকে পিছিয়ে পড়া রাজ্য হিসেবে পরিগণিত করা হতো৷ কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য গোটা দেশে পরিচিতি পাচ্ছে ত্রিপুরা৷ আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েদের উন্নত শিক্ষার কথা বিবেচনা করে সি বি এস ই বিদ্যালয় সহ মাত্র তিনমাসের মধ্যে এন সি ই আর টি পাঠক্রম চালু করেছে রাজ্য সরকার৷ এছাড়াও সমস্ত ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সঠিক ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে৷


মুখ্যমন্ত্রী এদিন বর্তমান সরকারের সময়ে বিভিন্ন সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরে বলেন, অ্যানুয়েল ক্রেডিট প্ল্যান ৭২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে, এম এস এম ই সেক্টরে বিনিয়োগ বৃদ্ধি হয়েছে ৬৬ শতাংশ, প্রধানমন্ত্রী সুুরক্ষা বীমায় বৃদ্ধি হয়েছে ৫২ শতাংশ, প্রধানমন্ত্রী জীবনজ্যোতি যোজনায় বৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ শতাংশ, অটল পেনশন যোজনায় বৃদ্ধি হয়েছে ৩১৩ শতাংশ, প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনায় বৃদ্ধি হয়েছে ৯৬.৬৯ শতাংশ, প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনায় বৃদ্ধি হয়েছে ১১০৯ শতাংশ৷ এক্ষেত্রে দাবি ও নিপত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি হয়েছে ২৫ শতাংশ৷ এদিনের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সুুবিধাভোগীদের হাতে ক’ষি যন্ত্রপাতি, কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, মাছের পোনা, শূকর ছানা সহ অন্যান্য সহায়তা তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী৷


অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধায়ক সুুশান্ত চৌধুরী বলেন, রাজ্যের সর্বাঙ্গীন উন্নয়নে ক’ষক থেকে শুরু করে সমস্ত অংশের নাগরিকদের সার্বিক বিকাশে নিরন্তর কাজ করে চলেছে রাজ্য সরকার৷ কোভিড অতিমারীকে সামনে রেখে একটা সময়ে যখন গোটা দেশে মানব জীবন প্রায় স্তব্ধ ঠিক সেই সময়ে ক’ষি ক্ষেত্রের উন্নয়নে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার৷ ক’ষি ঋণের এই বিশেষ শিবিরে সহায়তায় রাজ্যের ক’ষকরা লাভবান হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি৷ বিধায়ক সুুশান্ত চৌধুরী বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতির মূল ভিত কৃষকগণ৷ তারজন্য ক’ষকদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সরকারের গুরুত্বের জায়গা৷ কিষাণ ক্রেডিট কার্ড সহ কৃষকদের কল্যাণে সমস্ত প্রকল্পের সহায়তায় আরও দ্রত বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি৷


ক’ষি ও ক’ষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব সি কে জমাতিয়া বলেন, পা’াব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইণ্ডিয়া, ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ও কানাড়া ব্যাঙ্ক এই চারটি ব্যাঙ্কের সহায়তায় এই বিশেষ ক’ষি ঋণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে৷ সমস্ত রাজ্যব্যাপী ৭০টি গ্রাম প’ায়েত ও ভিসিতে একযোগে এই বিশেষ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে৷ যার মূল লক্ষ্য মৎস্যপালন, পশুপালন ও কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত সুুবিধাভোগীদের মধ্যে দ্রত বিভিন্ন সুুবিধা পৌঁছে দেওয়া৷ তিনি বলেন, ফসল বীমা যোজনা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কৃষক কল্যাণে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের সুুবিধা পাচ্ছেন রাজ্যের কৃষকরা৷ কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী ফসল সুুরক্ষা কর্মসূচির ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে৷ কৃষকদের কল্যাণে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের ১০০ শতাংশ সুুফল কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর৷

অনুষ্ঠানে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধন বলেন, কোভিড অতিমারীর সমস্ত নিয়মবিধি মেনে আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে জনকল্যাণে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাজ্য সরকার৷ স্বনির্ভর পরিবারের মাধ্যমে আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে মৎস্য পালন, পশু পালন ও কৃষি কাজের মাধ্যমে জীবিকা ও অর্থনৈতিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে এই শিবির বিশেষ ভূমিকা নেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷


অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এস এল বি সির কনভেনার (ডিজিএম পি এন বি) আনন্ত কুমার বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশিত পথে শুধুমাত্র ব্যাঙ্কের মধ্যে বসে না থেকে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ভিসি এলাকা পর্যন্ত ক’ষি ও অন্যান্য জীবিকা নির্ভর কাজে সহায়তার লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এদিনের অনুষ্ঠানে অর্থ দপ্তরের সচিব বিজেশ পাণ্ডে, গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব সৌম্যা গুপ্তা, মৎস্য ও পশুপালন দপ্তরের সচিব দীপা নায়ার, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধন, অর্থ দপ্তরের যুগ্ম সচিব বিশাল কুমার, জিরানীয়া প’ায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন প্রমুখ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *