আগরতলা, ৪ আগস্ট (হি. স.) : ত্রিপুরায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দেখছেন না বিজেপির নতুন প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক কিশোর বর্মণ। তাঁর কথায়, সিপিএমের প্রতি মানুষ এতটাই বীতশ্রদ্ধ, যে কোন মূল্যে তাঁরা ক্ষমতায় ফিরে না আসুক চাইছেন সবাই। আজ হিন্দুস্থান সমাচারের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে এভাবেই ত্রিপুরায় বিজেপির সাংগঠনিক অবস্থার বর্ণনা দিলেন তিনি। তাঁর সাফ কথা, এখন পার্টি অফিস থেকে সরকার পরিচালিত হচ্ছে না। একেই বলে পরিবর্তন।
দীর্ঘ সময় ত্রিপুরার বাইরে বিজেপির সাংগঠনিক দায়িত্ব সামলেছেন কিশোর বর্মণ। সদ্য পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের দলের গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখন তাঁকে ত্রিপুরার কামান সামলাতে পাঠিয়েছেন। বুথ স্তরে কাজ করতে পছন্দ কিশোর বর্মনের মতে, সংগঠনে কর্মী সংখ্যা প্রচুর। তাঁদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে কাজ ভাগ করে দেওয়াই লক্ষ্য।
তিনি বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর পর ত্রিপুরায় ফিরে বহু পরিবর্তন চোখে পড়ছে। তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় অতীতে সিপিএমের পতাকা না ধরলে চাকুরী থেকে শুরু করে ভাতা কিংবা অন্যান্য সরকারি সুযোগ সুবিধা কিছুই পাওয়া যেত না। আজ তার পরিবর্তন হয়েছে। তাঁর কটাক্ষ, আগে পার্টি অফিস থেকে সরকার পরিচালিত হতো। অথচ, এখন সরকার স্বতন্ত্রভাবে জনগণের কাছে পৌছে যাচ্ছে। অনলাইনে মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন।
তিনি তুলনা টেনে এনে বলেন, ত্রিপুরায় করোনার টিকাকরণে ৯০ শতাংশ সফলতা অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের মানুষের জন্য টিকা পাঠাচ্ছেন, ত্রিপুরা সরকার বিনামূল্যে ওই টিকা মানুষের কাছে পৌছে দিচ্ছে। অথচ, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের ক্যাডাররা টিকার বিনিময়ে অর্থ সংগ্রহ করছে। তাঁর অভিযোগ, সরকারী প্রক্রিয়ায় ৩১৫ টাকার বিনিময়ে জনগণ টিকা পাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, বিজেপি সমর্থকদের টিকা দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর দাবি, বিজেপি করার অপরাধে পশ্চিমবঙ্গে করোনার টিকা পাচ্ছেন না মানুষ, ত্রিপুরায় দলমত নির্বিশেষে সকলেই সরকারি সুযোগ সুবিধা পেয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিদ্রুপ করে বলেন, জালিয়াতির চরম সীমায় পৌছে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সাংসদের শরীরে ভুয়ো টিকা দেওয়া হয়েছে।
তাঁর দাবি, বিরোধীরা ত্রিপুরায় কোন ইস্যু খুঁজে পাচ্ছেন না। তাই, কেবল বিরোধিতার জন্য ত্রিপুরা সরকারের বিরুদ্ধে আবোল-তাবোল বকছেন। তাঁর মতে, ত্রিপুরায় তৃণমূলের সাথে সিপিএমের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে গাঁট বাঁধার সম্ভাবনা নিয়ে আখেরে বিজেপির উপকার হয়েছে। কারণ, নীতি, আদর্শ বিসর্জন দিয়ে তৃণমূলের সাথে সমঝোতা প্রকৃত কমিউনিস্টরা মেনে নিতে পারছেন না। তাই, অনেকেই এখন বিজেপির সাথে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছেন।
তাঁর মতে, কংগ্রেসের পরিবর্তীত রূপ তৃণমূল। তাঁদের সম্পর্কে যাঁরা প্রকৃত সত্য জানেন তাঁরা কখনই তৃণমূলকে সমর্থন করবেন না। ফলে, ত্রিপুরা যাঁরা এখনো কমিউনিজম কিংবা কংগ্রেসের মতাদর্শে বিশ্বাস রাখেন তাঁরা আদর্শের বিসর্জন মেনে পারবেন না। তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় তৃণমূল যত বেশি তত্পরতা দেখাবে আখেরে বিজেপির তত বেশি লাভ হবে।
তাঁর কথায়, পশ্চিমবঙ্গে তৈরী পরিস্থিতির জন্য বিভিন্ন দিক দিয়ে তৃণমূল কোনঠাসা। ফলে, সেই ইস্যু থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্যই তাঁরা ত্রিপুরার প্রতি অতি বেশি আগ্রহী হয়েছেন। বাস্তবে, ত্রিপুরায় তাঁদের কোন অস্তিত্ব নেই। ফলে, বিধানসভা নির্বাচনে তার কোন প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন না। তাঁর সাফ কথা, ত্রিপুরায় আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রকৃত অর্থে বিজেপি কোন প্রতিদ্বন্দ্বী দেখতে পাচ্ছে না।
এদিন তিনি বলেন, বিজেপি ছোট-বড় সমস্ত দলকেই শ্রদ্ধা করে। তাই, জোট ধর্ম বজায় থাকুক সেই চেষ্টা করি আমরা। তাতে, কখনো লোকসান সইতে হয়, আমরা তা সাদরে গ্রহণ করে থাকি। তাঁর মতে, প্রত্যেক নির্বাচনের ধরণ আলাদা, ইস্যু থেকে শুরু করে ভাবাবেগ সব কিছুই আলাদা হয়ে থাকে। ফলে, এডিসি নির্বাচনের ফলাফল দিয়ে বিধানসভা নির্বাচন বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয় বলে তিনি দাবি করেন। তাঁর মতে, সাংগঠনিকভাবে আমরা আগের তুলনায় অনেক শক্তিশালী হয়েছি। আগামী দিনে আরও শ্রীবৃদ্ধি হবে। তাই, নির্বাচন নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয় বিজেপি।
তাঁর দাবি, বিজেপি অনেক বড় দল এবং দলের সকলেই এক পরিবারের সদস্য। আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকতেই পারে, কিন্ত দিনের শেষে সকলেই আমরা এক ও অভিন্ন। ফলে, বিরোধীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাঁর মতে, বিরোধীরা আপ্রাণ চেষ্টা করছে ত্রিপুরায় উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ থেমে যাক। কিন্ত, জনভিত্তিহীন বিরোধীদের ডাকে আজ মানুষ তেমন সাড়া দিচ্ছেন না। কারণ, নতুন সরকার এবং বিগত সরকারের মধ্যে যখনই তুলনা করা হচ্ছে, পাল্লা বিজেপি জোট সরকারের ভারী হচ্ছে। তাই, মানুষকে সাথে নিয়ে উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে অবিচল বিজেপি। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তার প্রতিফলন দেখা যাবে দৃঢ়তার সাথে বলেন তিনি।