নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ জুন৷৷ সোমবার বিজেপি রাজ্য দফতরে ত্রিপুরা প্রদেশ কার্য্যকারিণী বৈঠক ছিল৷ সেখানে যোগ দিয়ে বুথ স্তরের সংগঠন মজবুত করতে সমস্ত কার্যকর্তাদের উদ্দেশে ’’ট্রিপল স’’ ফর্মুলার কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব৷তিনি বলেন, ’সংগঠনকে আরও বিকশিত করতে ‘ট্রিপল স’ মন্ত্র নিয়ে আমাদের চলতে হবে৷’
কী এই ’’ট্রিপল স’’? ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ’এই ‘ট্রিপল স’ হলসংবাদ, স্বভাব এবং সদাচার৷’ এরপর তিনটি শব্দের ব্যাখ্যা করে সাংগঠনিক তাতপর্য বোঝান মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, একজন আদর্শ সংগঠককে আগে ভাল শ্রোতা হতে হবে৷ অনেকে অনেক কিছু বলবেন৷ কিন্তু সংগঠককে যাচাই করে নিতে হবে কোন সংবাদটা ঠিক, কোনটা ভুল৷ সংগঠনে অনেক রকম আলোচনা হয়৷ কিন্তু আমাদের ইতিবাচকতার দিকে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে৷ যেমন প্রধানমন্ত্রীর কার্য শৈলীর চর্চা আমাদের নিয়মিত চালাতে হবে৷ তার মধ্যে ইতিবাচকতা নিহিত রয়েছে৷ এই সংবাদে আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে৷
অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার মানদণ্ডে নিজেকে প্রস্তুত করার নামই স্বভাব৷ ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতিটি কার্যকর্তাকে সেই ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে মানুষের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে৷ এই গোটা প্রক্রিয়াই আত্ম অনুশীলন৷
আর সদাচার হলো, একজন সংগঠকের কথাবার্তা, আচারব্যবহার, চালচলন, ভাষার শৈলী৷ এই সমস্ত দিক একজন সংগঠককে উৎকৃষ্ট করে তোলে৷’
তাঁর কথায়, ’এই তিনটি ‘স’ কে যদি আমরা আত্মস্থ করে বুথ স্তরে নিবিড় ভাবে সংগঠনের কাজকে পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে আমি বলতে পারি ত্রিপুরার মাটিতে ভারতীয় জনতা পার্টি এবং তার সরকার দীর্ঘ সময় ধরে চলবে৷ কোনও শক্তি তাকে প্রতিহত করতে পারবে না৷’
বিজেপি জমানায় কৃষকদের মানোন্নয়নের পরিসংখ্যানের কথাও বত্তৃণতায় তুলে ধরেন বিপ্লব দেব৷ তিনি বলেন, ’মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজির মার্গ দর্শনে ত্রিপুরা সরকার কাজ করে চলেছে৷ আগে ত্রিপুরায় কৃষকদের মাসিক গড় আয় ছিল ৬,০৮০ টাকা৷ আমাদের লক্ষ্য ২০২২ সালের মধ্যে সেই অঙ্ককে ১৩,৫৯০ টাকায় নিয়ে যাওয়া৷ সরকারের নিরলস প্রয়াসে এখন ত্রিপুরার কৃষকদের মাসিক গড় আয় ১১,০৯৬ টাকায় পৌঁছে গিয়েছে৷’
তা ছাড়া পিএম কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পে ত্রিপুরার প্রাপ্ত অর্থ রাশির কথাও উল্লেখ করেন দেব৷ তিনি বলেন, ’২ লক্ষ ৩০ হাজার কৃষক লাভান্বিত হচ্ছেন৷ এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পে ত্রিপুরায় এসেছে ৩১৫ কোটি টাকা৷ আমাদের মতো ছোট রাজ্যের ক্ষেত্রে যা বিরাট ব্যাপার৷ তা ছাড়া ধানের সহায়ক মূল্য বাবদ ১০৯ কোটি টাকা এসেছে ত্রিপুরায়৷ ডিসেম্বর থেকে ধানের সহায়ক মূল্য কুইন্টাল প্রতি ১৯৪০ টাকা করে পাবেন কৃষকরা৷ আগেকার সরকারের সময়ে এমএসপি-র ব্যাপারই ছিল না৷ মুখে কৃষকদের কথা বললেও সবচেয়ে বেশি যদি কৃষক আর শ্রমিকদের কেউ শোষন করে থাকে তাহলে সেটা কমিউনিস্ট পার্টি৷ দিল্লিতে কৃষকদের নামে আন্দোলন চালালেও ত্রিপুরা থেকে এক জন কৃষককেও সেখানে নিয়ে যেতে পারেনি৷ কারণ আজকে ত্রিপুরার কৃষকরা সবুজ ক্ষেতে তাঁদের সোনার ফসল ফলাচ্ছেন এবং লাভান্বিত হচ্ছেন৷’
তেইশের মহড়া যখন শুরু হয়ে গিয়েছে তখন এদিন আঠারোর ভোটের জয়কে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন বিপ্লব দেব৷ তিনি বলেন, ’ত্রিপুরা প্রদেশের কার্যকর্তারা ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের সাক্ষী৷ কারণ অতি কম সময়ের মধ্যে আমরা ত্রিপুরায় বিরোধী দল থেকে সরকারের দায়িত্বে এসেছি৷ আগে একটাও জেলা পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত ছিল না ভারতীয় জনতা পার্টির৷ কিন্তু সমস্ত জেলা পরিষদ, সমস্ত পঞ্চায়েত সমিতি, প্রায় সব গ্রাম পঞ্চায়েত আজকে আমাদের৷ দুটি লোকসভার দুটিতেই ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতিনিধি৷’
সিপিএমের সমালোচনা করে বলেন ওরা পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল৷ কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি সরকারে এসেছে সামন দিয়ে, মানুষের হৃদয় জয় করে৷ মানুষ যে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার সেই মতো কাজ করছে৷
আমরা যখন সরকারে এলাম তখন নিন্দুকদের কেউ কেউ বলেছিল, প্রথমবার বিধায়ক হয়েই মন্ত্রী, কোনও অভিজ্ঞতা নেই৷ কাদের থেকে অভিজ্ঞতা নেব, চোরেদের থেকে? আগের সরকারের দু’নম্বর মন্ত্রীকে জেলে পুড়তে হয়েছে, তৎকালীন মুখ্যসচিবকে জেলে পুড়তে হয়েছে৷ ভগবানের আশীর্বাদে এমন অভিজ্ঞতা আমাদের হয়নি৷