নিজস্ব প্রতিনিধি, বিলোনীয়া/ আগরতলা, ২৭ জুন৷৷ রাজ্যে রাজনৈতিক সন্ত্রাস যেন কিছুতেই থামতে চাইছে না৷ প্রতিদিন রাজ্যে কোন না কোন মহকুমা উত্তপ্ত হয়ে উঠছে শাসক দল বিজেপি এবং বিরোধীদল সিপিআইএম কর্মী-সমর্থকরা৷ ফলে আইন শৃঙ্খলতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ণ৷ রবিবার দুপুরে বিলোনিয়া মহকুমা রাজনগর বাজার সংলগ্ণ মোটর স্ট্যান্ড এলাকায় সিপিআইএম -এর ৫ দফা দাবিতে মিছিল সংঘটিত হয়৷মিছিল উপর আচমকা শাসক দলের দুসৃকতিকারীরা লাঠিসোটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে অভিযোগ৷ দুই দলের মধ্যে বাদে সংঘর্ষ৷ দফায় দফায় সংঘর্ষ৷ শুরু হয় দুই দলের মধ্যে ইট-পাটকেল৷ ঘটনায় গুরুতর ভাবে আহত হয় বাম বিধায়ক সুধন দাস এবং রাজনগর মন্ডল সভাপতি রঞ্জিত সরকার৷ ঘটনাস্থলে আহত হয় দুই দলেরই ৭ জন কর্মী-সমর্থক৷
বিধায়ক সুধন দাস মাথায় গুরুতর ভাবে আঘাত পান৷ অপরদিকে মন্ডল সভাপতি রঞ্জিত সরকার ও ভজন দাস নামে কর্মী আহত হয়৷ রঞ্জিত সরকার এবং ভজন দাস গুরুতর আহত হওয়ায় তাদের বিলোনিয়া হাসপাতাল থেকে গোমতী জেলা হাসপাতালে রেফার করা হয়৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে ৬ টি কাঁদান সেল ছুঁড়তে হয়েছে৷ পরিস্থিতি গোটা এলাকায় থমথমে৷ এলাকা নিয়োজিত করা হয়েছে পুলিশ, টি এস আর আধা সামরিক বাহিনী৷ পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে৷ তবে এলাকায় এ ধরনের সন্ত্রাসের ঘটনায় পুলিশের কাছে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানানো হয়েছে উভয় রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে৷ পরবর্তী সময়ে সিপিআইএমের পক্ষ থেকে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়৷ অভিযোগ তোলা হয় সারা রাজ্যে গণতন্ত্র পদদলিত হচ্ছে৷ আইন-শৃঙ্খলাতা নেই বললেই চলে৷
সিপিএম রাজ্য কমিটির তরফ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজ বিলোনীয়া মহকুমার রাজনগরে সি পি আই (এম) রাজ্য কমিটি সদস্য বিধায়ক সুধন দাস ও অন্যান্য পার্টি নেতা-কর্মীদের ওপর বি জে পি কর্মীদের ফ্যাসিস্টসুলভ আক্রমণ এবং গতরাতে কমলপুরের ছোট সুরমায় পঞ্চায়েত সদস্যা আশারানী নমঃসুদ্রের বাড়িতে হামলা ও অগ্ণিসংযোগ এবং সি পি আই (এম) কর্মীদের ওপর বি জে পি’র বাইক বাহিনীর আক্রমণের তীব্র নিন্দা করছে সি পি আই (এম) রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী৷
পেট্রোলজাত জ্বালানীর ক্রমাগত দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে ৫টি বামপন্থী দলের সর্বভারতীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আজ রাজনগরে সি পি আই (এম) একটি মিছিল সংগঠিত করে মোটরষ্ট্যান্ডে পথসভায় মিলিত হলে বি জে পি কর্মীরা সি পি আই (এম) নেতা ও কর্মীদের ওপর যথেচ্ছ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে৷ বিধায়ক সুধন দাসের মাথা ও হাত গুরুতর জখম হয়৷ আরও কয়েকজন পার্টি নেতা ও কর্মী আহত হন৷ বি জে পি দুর্বৃত্তরা সুধন দাসের বাড়িতে পটকা ও ইট নিক্ষেপ করে৷ বিধায়কের স্ত্রী জয়া বানার্জী বুকে আঘাত পান৷ বিলোনীয়া শহরে বি জে পি কর্মীরা হাসপাতালের সামনে জড়ো হওয়ায় বিধায়কসহ আহতদের হাসপাতালেও নেয়া যায় নি৷
গতরাত সাড়ে ৯ টা নাগাদ কমলপুরের ছোট সুরমায় বি জে পি দুর্বৃত্তরা বাইক ও গাড়ি করে এসে পঞ্চায়েত সদস্যা আশারানী নমঃসুদ্রের বাড়ি আক্রমণ করে ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ সি পি আই (এম) কর্মীদের ওপর আক্রমণ করে ২ জনকে গুরুতর আহত করে৷ ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসার আগেই এলাকাবাসী ছুটে এসে আগুন নেভান৷ পঞ্চায়েত সদস্যা আশারানী নমঃসুদ্র গতকালই বি জে পি ছেড়ে সি পি আই (এম) সমর্থক হিসেবে যোগ দেয়ার ঘোষণা করেছিলেন৷ এ জন্যই বি জে পি এই প্রতিহিংসামূলক আক্রমণ সংগঠিত করে৷
মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের প্রতিশ্রুতি সত্বেও শাসক দলের দুর্বৃত্ত বাহিনীর অব্যাহত ফ্যাসিস্টসুলভ আক্রমণের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সমস্ত গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে আইনের শাসন ফেরাতে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে সি পি আই (এম) আহ্বান জানাচ্ছে৷