- মদ্যপানজনিত সমস্যা কি?
- মদ্যপান ছাড়া ফ্যাটি লিভার অসুখ কি?
- হেপাটাইটিস বি কি?
- হেপাটাইটিস সি কি?
- লিভার ক্যানসার কি?
- অ্যাকিউট লিভার ফেলিওর কি?
- এই প্রতিকূল সময়ে লিভার প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে কি?
লিভার হল মানব দেহের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেহযন্ত্র যা পরিপাক ও মানব দেহ থেকে দূষিত পদার্থ দূর করায় মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। এটি পরিপাকের জন্য অত্যাবশ্যকীয় রাসায়নিক নিঃসৃত করে এবং অনাবশ্যক যৌগগুলি ভেঙে ফেলে দেহ থেকে বের করে দেয়। আমাদের লিভারকে অবশ্যই অগণিত সমস্যা থেকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করতে হবে। বহু ক্ষেত্রেই এগুলি গুরুতর লিভারের অসুখে পরিণত হতে পারে।
লিভারের অসুখের প্রধান কারণগুলি সম্পর্কে জানতে পড়তে থাকুন।
মদ্যপানজনিত সমস্যা কি?
অ্যালকোহল নির্ভরতা বা অ্যালকোহলের অপব্যবহার শব্দগুলি এখন আর মদ্যপানের সাথে সম্পর্কিত সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় না। লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে মদ্যপানজনিত লিভারের অসুখ এখনও একটি অন্যতম প্রধান কারণ। এই ক্ষেত্রে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং রোগবিস্তার সংক্রান্ত বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে জীবন বিকল করতে সক্ষম এমনকি প্রাণঘাতী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে যা সবথেকে বেশী ক্ষতি করে অল্পবয়সীদের। সুতরাং, এটি হল অকালমৃত্যুর একটি অন্যতম সাধারণ কারণ।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে গুরুতর অ্যালকোহল হেপাটাইটিস রোগ সারিয়ে তোলার বহু প্রচেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগীরা অত্যন্ত অসুস্থ হন এবং তাদের লিভার প্রতিস্থাপন করার দরকার হয়ে পড়ে। এই রোগীদের চিকিৎসা করা খুবই কঠিন কাজ হয়। ফিকাল মাইক্রোবায়োটা ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন ও প্লাজমা পরিবর্তনের মত বহু চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা স্বত্বেও এই থেরাপিগুলির কোনটিই অব্যর্থ হয়ে উঠতে পারেনি।
অসুস্থ রোগীর ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যিনি লিভার ফেলিওর সিনড্রোমে ভুগছেন, তার একমাত্র সমাধান হতে পারে লিভার প্রতিস্থাপন। এই পদ্ধতি যদিও বেশ কঠিন ও কষ্টকর হতে পারে, রোগীকে অবশ্যই যথেষ্ট মানসিক ও সামাজিক সমর্থন দিতে হবে।
সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল পরিমিত মদ্যপানের উপদেশ দেওয়া এবং আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে যে অতিরিক্ত মদ্যপান অথবা খাওয়ার সময়ের বাইরে মদ্যপান লিভারকে সবথেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত করে।
মদ্যপান ছাড়া ফ্যাটি লিভার অসুখ কি?
মদ্যপান ছাড়া ফ্যাটি লিভার অসুখ হল একটি উপসর্গ যেখানে লিভারে ফ্যাট জমে যায়, এই ফ্যাটের পরিমাণের তারতম্য থাকতে পারে কিন্তু তা লিভার কোষের অন্ততপক্ষে 5% এর বেশী হবে, তা যদি লিভার ফ্যাট বা ট্রাইগ্লিসারাইড হয়, তাহলে আমরা একে ফ্যাটি লিভার বলি। ফ্যাটি লিভারের রোগীদের ক্ষেত্রে প্রদাহ, অনেকের ক্ষেত্রে ক্ষত দেখতে পাওয়া যায়, একে ন্যাশ সিরোসিস বলা হয়। এটি সারা বিশ্বে এবং আমাদের দেশেও দুরারোগ্য লিভার অসুখের অন্যতম সবথেকে সাধারণ কারণ। এমনকি অল্পবয়সী শিশু ও কিশোর-কিশোরীরাও এই সমস্যার শিকার হচ্ছে। এটি কিছুটা জিনগত, এপিজেনেটিক, পরিবেশগত ও জীবনযাত্রার কারণে ঘটে। বাচ্চারা টিভি, ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেয় আর যা ইচ্ছে হয় খেতে থাকে। এই রোগের জন্য সবথেকে বেশী করে দায়ী হল কার্বোনেটেড পানীয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওজন কমানো ছাড়া এই সমস্যার কোন প্রমাণিত থেরাপি নেই, এবং ওজন কমানোও বেশ কঠিন কাজ কারণ এই রোগীদের ওজন বেশী হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জয়েন্টের সমস্যা ও ঘুমের ব্যাঘাতের সমস্যাও থাকে। সাথে থাকতে পারা অন্যান্য সমস্যাগুলি হল হৃৎপিণ্ড ও রক্ত চলাচলের সমস্যা, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, হাইপোহাইরয়েডিজম, ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়া, লিপিডের অস্বাভাবিকতা এবং এই রোগীদের মধ্যে হৃদরোগ ও দেহের বিভিন্ন অংশে ক্যানসার হওয়ার প্রবণতাও থাকে। বস্তুত, এই সমস্যার জন্যই পশ্চিমি দেশগুলিতে এবং এখন আমাদের দেশেও সবথেকে বেশী লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়।
আগেই বলা হয়েছে, এর কোন প্রমাণিত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। এক্ষেত্রে একমাত্র কাজ করে ওজন কমানো এবং তা করতে হয় ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ কমানোর সাথে নিয়মিত শরীরচর্চা করার মাধ্যমে। দেখা গেছে যে যদি প্রাথমিক ওজনের 10% কমানো যায় তাহলে লিভারের ক্ষতস্থানের কলাগুলিকে আগের অবস্থায় ফেরানো সম্ভব হয়। তবে, এটা খুবই কম ঘটে এবং অতি অল্প সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটতে দেখা গেছে।
এটি একটি জীবনযাত্রাঘটিত সমস্যা, এবং সেইজন্য বাবা-মায়েদের নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। ক্লিনিকে রোগীদের পরীক্ষা করার সময় কোন বিপাকজনিত অস্বাভাবিকতা, যার ফলস্বরূপ এই রোগ হয়েছে, তা আছে কিনা ভালোভাবে দেখে নিতে হবে এবং সেই সমস্যার চিকিৎসা করতে হবে। সেই সমস্যা ডায়াবেটিজ হোক বা হাইপারটেনশন, ডিসপ্লেডেমেনিয়া হোক, এই সব রোগেরই চিকিৎসা করে নিরাময় পাওয়া সম্ভব হয় এবং তার ফলে রোগীর উপসর্গের উপরেও সুপ্রভাব দেখা যায়।
হেপাটাইটিস বি কি?
হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সি হল লিভারের অসুখের প্রধান ভাইরাস। আমরা সকলেই জানি যে হেপাটাইটিস বি-এর ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত কার্যকর টিকা আছে, এবং সকলের এই টিকা নিয়ে রাখা উচিৎ। বস্তুত, নির্দেশিকায় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে শিশুর জন্মের সময়েই এই টিকা সদ্যজাতকে দেওয়া উচিৎ। এটি অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদেরও দেওয়া যেতে পারে, তবে আমরা জানি যে এই টিকার কার্যকারিতা প্রত্যাশা অনুযায়ী সুদূরপ্রসারী নয়। ক্রনিক হেপাটাইটিস বি-এর শিকার হলে প্রায় সারা জীবন ধরেই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। এই ক্ষেত্রে ক্রমাগত কাজ ও গবেষণা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিন্তু এখনও আমরা এই উপসর্গের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা স্থির করতে পারিনি।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কারণে যে রোগীদের মধ্যে সিরোসিস ধরা পড়ে তাদের আরও একটি সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়, এটি হল আমাদের দেশে লিভার ক্যানসারের সবথেকে সাধারণ কারণ। এটা খুব ভালো করে মাথায় রাখতে হবে যে একবার সিরোসিস ধরা পড়ার পরে রোগীকে সারা জীবন তত্বাবধানে রাখতে হবে। সেইজন্য, প্রতি 6 মাসে একবার তাকে আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে স্ক্যান করা হবে এবং তার টিউমার ও পরিবারিক ইতিহাসে লিভার ক্যানসার চিহ্নিত করা হবে।
হেপাটাইটিস সি কি?
চিকিৎসা ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সাফল্যের বিষয়। এক সময় এর চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার ছিল এবং আমাদের প্রায়ই ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে হত। কিন্তু 2014 সালে আমরা কিছু যুগান্তকারী ওষুধ পাই যা সরাসরি অ্যান্টিভাইরাসের মত কাজ করতে শুরু করে। এই ওষুধগুলি স্বল্প মেয়াদে, অর্থাৎ 20 থেকে 24 সপ্তাহ ধরে প্রয়োগ করে এই ভাইরাস দূর করা সম্ভব। আর যেহেতু এই ভাইরাসগুলির ক্ষেত্রে ভাইরাস কোষের নিউক্লিয়াসের সাথে কোন সংযোগ থাকে না, রোগী ওষুধে সাড়া দিলে এই ভাইরাস সম্পূর্ণরূপে দূর হয় এবং আর কখনও ফিরে আসে না।
লিভার ক্যানসার কি?
লিভার ক্যানসার হল মানব দেহের চতুর্থ বা পঞ্চম স্থানে থাকা সবথেকে সাধারণ প্রকারের ক্যানসার এবং এটি অত্যন্ত আক্রমণাত্মক প্রকারের টিউমার। ক্রমবর্ধিত আকারে দেখা গেছে যে এটি এনএএফএলডি সিনড্রোমের কারণে ঘটে। এনএএফএলডি সিনড্রোমের সমস্যা হল লিভার টিউমার তৈরি করার জন্য আপনার সিরোসিস হওয়ারও দরকার পড়ে না। তার মানে হল এই রোগীদের ক্ষেত্রে সিরোসিস ছাড়াই লিভার ক্যানসার দেখা দিতে পারে। সুতরাং এই রোগীদের ক্ষেত্রে তত্বাবধানের কৌশল ভালোভাবে গঠন করা হয় না। আবারও বলা দরকার যে এই টিউমারগুলি প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করতে হবে, যদি উপসর্গ-পূর্ব পর্যায়ে এটি শনাক্ত করা যায় তাহলে সেরে যাওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশী থাকে। রোগ সারানোর জন্য অস্ত্রোপচার করে টিউমার বাদ দেওয়া যেতে পারে অথবা যদি টিউমারের প্রভাব লিভারের বিভিন্ন অংশে দেখা দেয়, তাহলে লিভার প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। অথবা যদি মনে মনে হয় যে টিউমারটি এমনভাবে তৈরি হয়েছে যে এটি রোগীর দেহ থেকে বাদ দেওয়া যাবে না তাহলে আপনাকে ডাউন স্টেজিং পদ্ধতি সম্পাদন করতে হবে। এই পদ্ধতিতে টিউমারের আয়তন কমিয়ে দেওয়া হয় এবং তারপরে রোগীর দেহকে এমনভাবে কাটা হয় যাতে টিউমার বাদ দেওয়া যেতে পারে অথবা লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে এই ধরণের টিউমারের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ, এগুলি খুবই বিপজ্জনক হয় এবং মৃত্যুর সম্ভাবনাও অনেক বেশী থাকে। এই টিউমারগুলির বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত থেরাপির ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি ঘটেছে এবং তা সম্ভব হয়েছে এই নতুন ওষুধগুলির সাহায্যে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সেইজন্য এগুলিকে বলা হয় ইমিউন চেক নাবুটাস। এটি অত্যন্ত সক্রিয় এক গবেষণার বিষয় এবং অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাদ দিতে না পারা চূড়ান্ত পর্যায়ের লিভার ক্যানসারের ক্ষেত্রেও এটি যুগান্তকারী সুফল দেখাবে।
অ্যাকিউট লিভার ফেলিওর কি?
লিভার ফেলিওর বা অ্যাকিউট লিভার ফেলিওর বলতে বোঝায় লিভারের অসুখ না থাকা ব্যক্তির লিভার কাজ না করা। এটা বেশ কঠিন সমস্যা এবং এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেশ কম হওয়া সত্বেও বড় চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে এই নির্দিষ্ট উপসর্গ প্রতি বছর 12 থেকে 20 জন রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়। এই উপসর্গের ক্ষেত্রে কি কোন চিকিৎসাগত অগ্রগতি হয়েছে? হ্যাঁ। যাদের ক্ষেত্রে তীব্র প্রভাব দেখা গেছে, যাকে আমরা বলি হাইপারঅ্যাকিউট লিভার ফেলিওর, তাদের একটি প্লাজমা পরিবর্তনের মত নিবিড় চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে সেরে উঠতে পারেন। যদিও আরোগ্যলাভ ঘটা বা রোগীর সেরে ওঠার সম্ভাবনা নির্ভর করবে এটিওলজির উপর, অর্থাৎ লিভার ফেলিওরের কারণই রোগীর পরিণতি নির্ধারণ করবে। যেসব রোগীরা চূড়ান্ত পর্যায়ের কোমায় চলে যান, তাদের সাধারণত লিভার প্রতিস্থাপন করতে হয় কারণ তা না করলে তাদের মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে 60% থেকে 80%। তীব্রতার উপসর্গ আরও বেশী করে দেখা যায় ক্রনিক লিভার ফেলিওরে, যার অর্থ হল যে রোগীরা বহুকাল ধরে লিভারের রোগে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে অ্যাকিউট লিভার ফেলিওর দেখা দিতে পারে। তখন রোগীর মধ্যে শুধুমাত্র লিভারের অক্ষমতাই দেখা যায় না, সেইসঙ্গে কিডনি, মস্তিষ্কের মত অন্যান্য দেহযন্ত্রের অক্ষমতাও দেখা দিতে শুরু করে। এই লক্ষণ অ্যাকিউট লিভার ফেলিওরের তুলনায় চার থেকে পাঁচ গুন বেশী লক্ষ্য করা যায় এবং আবারও, এই রোগীদের উন্নত লিভারের চিকিৎসা ও অর্গ্যান সাপোর্ট সিস্টেম প্রদান করে সাহায্য করতে পারি এবং যদি মনে হয় রোগীর কোন উন্নতি ঘটছে না তাহলে এদের লিভার প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
এই প্রতিকূল সময়ে লিভার প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে কি?
বিশেষ করে গত দেড় বছরে চলা অতিমারীর সময়ে। অতিমারীর শুরুর দিকে প্রতিস্থাপন করার পরামর্শ দেওয়া বেশ সমস্যাজনক ছিল কারণ সকলেই খুব ভয় পেয়েছিলেন, আমাদের ভয় ছিল প্রতিস্থাপনের পরে এই রোগীদের ইমিউনো সেপারেশনে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে কি কোন খারাপ প্রভাব পড়তে পারে? আমরা দ্রুত বুঝতে পেরে যাই যে তেমনটা হবে না, মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে এবং প্রতিস্থাপনের সংখ্যা কোভিড-পূর্ব সময়ের সমান হয়ে যায়। লিভার প্রতিস্থাপনে ব্যাপক অগ্রগতি ঘটেছে এবং এর বহু কারণের কয়েকটি হল ভালোভাবে ও সতর্কতার সাথে রোগী বাছাই করা, অস্ত্রোপচার ও অ্যানেস্থেশিয়ার পদ্ধতি উন্নত হওয়া এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণভাবে রোগীদের প্রতিস্থাপন-পরবর্তী চিকিৎসাও যথাযথভাবে প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিস্থাপনের পরে রোগীর হাসপাতালে থাকার গড় সময়ও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে মাত্র 7 থেকে 10 দিন হয়ে গেছে। তাছাড়া প্রতিস্থাপনের পরে এই রোগীদের ক্ষেত্রে লো ইমিউন সেপারেশন ব্যবহারের ঝোঁকও বেড়েছে। যথাযথভাবে কাজ করতে না পারা দেহযন্ত্র তৈরি বা উপশমিত করার পদ্ধতিতেও উন্নতি ঘটেছে, একে মেশিন পারফিউশন বলা হয়। এটি আমাদের দেশে উপলব্ধ থাকলেও বেশ দামী এবং এই প্রক্রিয়ার খরচ বেশীরভাগ মানুষের সাধ্যের বাইরে।
সবশেষে, গত কয়েক মাসে লিভারের রোগে অসুস্থ রোগীদের উপর কোভিডের যে প্রভাব পড়েছে তাতে আমরা বুঝতে পেরেছি যে কোভিড বিভিন্নভাবে লিভারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই ভাইরাস লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বা লিভারকে উত্তেজিত করতে পারে। কোভিডের চিকিৎসায় ব্যবহৃত বহু ওষুধই হল হেপাটোটক্সিক, অর্থাৎ লিভারের ক্ষতি করার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া যে রোগীদের আগে থেকেই দীর্ঘস্থায়ী লিভারের রোগ আছে তারা যদি কোভিড রোগীদের সংস্পর্শে আসে তাহলে লিভারের কাজ দ্রুত খারাপ হতে থাকে। আগে আমাদের ধারণা ছিল যে শুধুমাত্র অতিরিক্ত ওজন থাকা মানুষদেরই কোভিডের ঝুঁকি আছে আর তার পরিণতি বিপজ্জনক হতে পারে, কিন্তু সারা বিশ্বের বহু কর্মীদের দ্বারা শনাক্ত করা গেছে যে ফ্যাটি লিভারের রোগীদেরও মারাত্মক কোভিড সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
ইমিউন সেপারেশন থাকা রোগী এবং দুরারোগ্য অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যথেষ্ট সাবধানে থাকতে হবে। তারা যদি কোভিড-19 ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যান, তাদের ইমিউন সেপারেশন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে দেহ থেকে ভাইরাস বেরিয়ে যায় এবং পিসিআর দ্বারা পরীক্ষায় একবার নেগেটিভ ধরা পড়লে আর তাদের উপসর্গগুলি দূর হলে এই রোগীদের ধীরে ধীরে তাদের পূর্ব ইমিউন সাপ্রেশনে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
লিভার সুস্থ রাখার জন্য পরিমিত আহার, কায়িক শ্রম করতে হবে এবং মদ্যপান করা, জাঙ্ক ফুড, কার্বোনেটেড পানীয় খাওয়া, ব্যায়াম না করা ও অবিবেচক হওয়ার মত বিষয় থেকে দূরে থাকতে হবে।