বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত রাজ্য নেয়া হয়েছে আগাম ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ জুন৷৷ বর্ষা মরশুম শুরু হয়ে গেছে৷ ফলে, ত্রিপুরায় বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে প্রশাসন৷ আবহাওয়া বিভাগ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হবে বলে অনুমান করছে৷ কিন্তু এই অনুমানের ৬০-৭০ শতাংশ নির্ভুলতা রয়েছে বলে দাবি করেছেন রাজ্য দুযর্োগ মোকাবিলা আধিকারিক শরৎ কুমার দাস৷ সাথে তিনি যোগ করেন, বন্যার আগাম সতর্কতা জারি করার লক্ষ্যে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে পদ্ধতি বানানো হয়েছে৷ ২০১৮ সালে পরীক্ষামূলকভাবে তা শুরু হয়েছে৷ পাঁচ বছরের মধ্যে পুরো তৈরি হয়ে যাবে৷


প্রসঙ্গত, ত্রিপুরায় বছরে গড়ে ২২,৪১৮ এমএম বৃষ্টি হয়ে থাকে৷ এবছর ত্রিপুরায় বর্ষা শুরু হয়েছে ৬ জুন থেকে৷ আইএমডি পূর্বাভাসে বলেছে, দীর্ঘদিনের গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সাধারণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের (জুন থেকে সেপ্ঢেম্বর) তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হবে, যা নাকি স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় কম৷ প্রাক-বর্ষা সময়েও (মার্চ-মে) রাজ্যে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় ৬১ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ এ বছর এপ্রিলে রাজ্যে স্বাভাবিকের তুলনায় ৮৫ শতাংশ কম এবং মে-তে স্বাভাবিকের তুলনায় ৫০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ তবে জুন মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷


আগরতলা শহর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত৷ রাজ্যের সমস্ত জেলা স্বাভাবিক ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ বলে চিহ্ণিত৷ মোট ভৌগলিক এলাকার ৪০ শতাংশ এলাকায় বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এগুলির অধিকাংশই নিচু জায়গায় অবস্থিত৷
বন্যা নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বর্ষা এবং কালবৈশাখীর আগাম প্রস্তুতি হিসেবে গত ৯ মার্চ রাজ্যস্তরীয় বৈঠক হয় সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতর, এজেন্সি ও জেলা প্রশাসনকে নিয়ে৷ তেমনি সমস্ত জেলায় জেলাস্তরীয় কালবৈশাখী ও বর্ষা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়৷ বন্যা সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য সমস্ত মুখ্য নদীগুলিতে পূর্ত দফতর (জল সম্পদ) এবং সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের গেজ স্টেশনে রয়েছে হাওড়া, কাটাখাল, গোমতি, খোয়াই, মনু, ধলাই, মুহুরি, জুরি, কাকরি এবং দেও নদীতে৷ বর্ষার সময় আগাম সতকর্তা জারি করার জন্য নর্থইস্ট স্পেস অ্যাপ্লিকেশনে সেন্টার ও ধলাই, গোমতি, মনু, হাওড়া এবং খোয়াই নদীর জন্য ফ্লাড আরলি ওয়ার্নিং সিস্টেম তৈরি করেছে৷


এই অবস্থায় আইএমডি আগরতলা স্টেশন নিয়মিতভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বর্তমান বৃষ্টিপাত সম্পর্কে তথ্য দিয়ে থাকে৷ রাজ্য এবং জেলাস্তরীয় ইমারজেন্সি আপারেশন সেন্টারগুলির দিনরাত সক্রিয় রয়েছে৷ তাছাড়া যে কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা ও সমন্বয় বজায় রাখার জন্য ইআরএসএস কন্েন্টাল রুম (১১২) সক্রিয় রয়েছে৷ আগরতলা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এখন কতটুকু জল উঠল এবং কতটুকু জল নিষ্কাষিত হল সে সম্পর্কে তাৎক্ষণিক প্রকৃত তথ্য দেওয়ার জন্য আইটি ভবনে ইনসিডেন্ট কমান্ড অ্যান্ড কন্েন্টাল সেন্টার (জ্জঙ্খঙ্খঙ্খ) কাজ করছে৷ জেলাস্তরে বন্যা প্রস্তুতি সুনিশ্চিত করতে সমস্ত জেলাকে একটি মানদণ্ড স্বরূপ চেকলিস্ট দেওয়া হয়েছে৷ প্রতিদিন রাজ্য, জেলা এবং মহকুমাস্তরে অনলাইন পরিস্থিতি রিপোর্টিং জারি রয়েছে৷
তাছাড়া বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১২০টি মোটর বোট সহ রাজ্যে মোট ১৭৫টি নৌকা রয়েছে৷ এগুলি জেলা, মহকুমা প্রশাসন, টিএসআর, ফায়ার সার্ভিস, ট্রেনিং সেন্টার ও বিভিন্ন মুখ্য এজেন্সির কাছে রয়েছে৷ তাছাড়া এনডিআরএফ টিমগুলির কাছেও নৌকা রয়েছে৷

বিভিন্ন বন্যাপ্রবণ এলাকায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কাঠের নৌকা তৈরি রাখার জন্যও জেলাশাসকগণকে অনুরোধ করা হয়েছে৷ নৌকা ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আরও ৪০ রকমের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখা হয়েছে৷ এ সব সরঞ্জাম ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়ার ও আধিকারিক চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ যে কোনও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আগরতলা এবং কুমারঘাটে দু’টি এনডিআরএফ টিম রয়েছে৷ তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে ব্যবহারের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনীয় এসডিআরএফ ফান্ড দেওয়া রয়েছে৷
প্রতিটি জেলার নিজস্ব বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা রয়েছে৷ এই পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, সম্পদ, কর্মী, বিভিন্ন এজেন্সির ভূমিকা ও দায়িত্ব, বন্যার সময় ব্যবহৃত আশ্রয়স্থল, বিপর্যয় মোকাবিলার নির্দেশিকা ও করণীয় সম্পর্কে সবকিছু চিহ্ণিত করা আছে৷ কোভিড পরিস্থিতির নিরিখে জেলা প্রশাসনকে আরও বেশি বন্যার আশ্রয়স্থল চিহ্ণিত করার জন্য এবং বন্যা পরিস্থিতিতে কোভিড নিয়ম মেনে চলার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে৷ প্রয়োজনের সময় সরঞ্জাম ও কর্মী ব্যবহারের জন্য জেলাস্তরে ইন্ডিয়া ডিজাস্টার রিসোর্স নেটওয়ার্ক (জ্জঙ্গট্টঞ্ছ) প্রতি মাসে আপডেট করা হচ্ছে৷
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন নদীর পার ইত্যাদি চিহ্ণিত করে শীঘ্রই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে পূর্ত দফতর (জল সম্পদ)-কে বলা হয়েছে৷ তাৎক্ষণিক মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় স্থানে উপযুক্ত পরিমাণে বালির বস্তা, সিমেন্টের বোল্ডার, বন্যা নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম ইত্যাদির ব্যবস্থাও রাখতে বলা হয়েছে পূর্ত দফতরকে৷ স্বাস্থ্য, পূর্ত (রোড অ্যান্ড বিল্ডিং), বিদ্যুৎ, পানীয়জল, নগরোন্নয়ন, খাদ্য ও জনসংভরণ, ফায়ার সার্ভিস, টেলি যোগাযোগ ইত্যাদি দফতরকে নিজেদের পক্ষ থেকে বন্যা প্রস্তুতি নিতে বলে হয়েছে৷ প্রিন্ট, সোশ্যাল ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে নিয়মিতভাবে বন্যা, সাইক্লোন, বজ্রপাত, ল্যান্ডস্লাইড ইত্যাদি সম্পর্কে জনগণের মধ্যে নিরাপত্তামূলক সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *