মিউকরমাইকোসিস : কোভিড-19 পরবর্তী ব্ল্যাক ফাংগাস অসুখের সতর্কতা

1. প্রাথমিক লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?

2. মিউকরমাইকোসিস কোথা থেকে এসেছে?

3. মিউকরমাইকোসিসের চিকিৎসা কীভাবে সম্পন্ন হবে?

মিউকরমাইকোসিস রোগ বা ব্ল্যাক ফাংগাস রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে কোভিড-19 রোগীদের মধ্যে। এই রোগ শুরু হয় নাক ও সাইনাস থেকে, তারপর দ্রুত চোখ ও মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যায়। সম্ভাব্য সেরা চিকিৎসা লাভের পরেও গড়ে 50 শতাংশ মানুষই বেঁচে থাকেন না, ফাংগাস যদি মস্তিষ্কে পৌঁছে যায় তাহলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে যায়। এটি খুবই বিরল অসুখ হিসাবে গণ্য হত, ডাক্তারবাবুরা বছরে খুব বেশী হলে একটি কেস দেখতে পেতেন, কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে এবং ইএনটি স্পেশালিষ্টরা কোভিড-19 এ আক্রান্ত অবস্থায় থাকা বা তা থেকে সেরে ওঠা রোগীদের মধ্যে মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হওয়ার বহু ঘটনা দেখতে পাচ্ছেন। মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীরা ডায়াবেটিক এবং কোভিডের চিকিৎসার সময় স্টেরয়েড ব্যবহার করেছেন যার ফলে তাদের সুগার লেভেল বেড়ে গেছে।

প্রাথমিক লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?

মিউকরমাইকোসিস রোগের প্রাথমিক লক্ষণ ও উপসর্গগুলি হল: 

  • মাথার একদিকে তীব্র যন্ত্রণা, মুখ ফুলে যাওয়া এবং চোখের পিছনে যন্ত্রণা হওয়া।
  • নাক বুজে থাকা, সর্দি পড়া অথবা মাঝে মাঝে রক্ত পড়া।
  • চোখ ফুলে যাওয়া, চোখ খুলতে কষ্ট হওয়া, চোখ লাল হওয়া, ডবল দেখা, দৃষ্টিশক্তি হারানো ইত্যাদি।
  • মুখের উপর তলে (তালু) ঘা হওয়া বা কালচে রঙ হয়ে যাওয়া।
  • এই রোগ দ্রুত মস্তিষ্কে পৌঁছে গিয়ে ঘুম ঘুমভাব, মুখের অসাড়তা, মুখের প্যারালাইসিস, স্ট্রোক, এক দিকে প্যারালাইসিস এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

যেকোন বয়সের কোভিড-19 পজিটিভ রোগীর ক্ষেত্রেই উচ্চ সম্ভাবনা থাকে, বিশেষ করে যারা বহু দিন ধরে স্টেরয়েড ব্যবহার করছেন, ডায়াবেটিক, ইমিউনো সাপ্রেসেন্ট ব্যবহার করছেন।

মিউকরমাইকোসিস কোথা থেকে এসেছে?

মিউকরমাইকোসিস রোগের জন্য দায়ী পরজীবী প্রজাতি, মিউকরমাইকোসিস যেকোন জলবায়ুতেই বেঁচে থাকে, বিশেষ করে মাটিতে এবং পাতা, সার ও প্রাণীজ বর্জ্যের মত প্রাকৃতিক পচনশীল বস্তুতে। এরা বাতাসের তুলনায় মাটিতে এবং শীত বা বসন্তের তুলনায় গ্রীষ্ম ও শরতে বেশী স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকে। বেশীরভাগ মানুষই নিয়মিত ক্ষুদ্র পরজীবী কোষের সংস্পর্শে আসে, তাই বিশেষভাবে মিউকরমাইকোসিসের সংস্পর্শ এড়িয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। এই পরজীবীগুলি বেশীরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই বিপজ্জনক নয়। যে ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে মিউকরমাইকোসিস ফুসফুস বা সাইনাসে গিয়ে অসুস্থ করতে পারে যা দেহের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে যেতে পারে।

মিউকরমাইকোসিসের চিকিৎসা কীভাবে সম্পন্ন হবে?

এই রোগের চিকিৎসার প্রধান বিষয় হল রোগ সম্পর্কে প্রথম থেকে অত্যন্ত সচেতন থাকা এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করা। নাক ও মুখ থেকে আক্রান্ত মৃত কলা ও হাড় তৎক্ষণাৎ সার্জারির মাধ্যমে বাদ দিতে হয় এবং অনেক সময় রোগীদের চোখও বাদ দেওয়ার দরকার হয়ে পড়ে। এর পরে/ সেই সময়েই রোগীকে অ্যান্টিফাংগাল ইঞ্জেকশন অ্যাম্ফোটেরিসিন বি দিতে হয়, রোগের আরও ছড়িয়ে পড়া আটকাতে 4- 6 সপ্তাহ ধরে এই ইঞ্জেকশন নিয়ে যেতে হয়।

সারা দেশে এই রোগ অত্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ইঞ্জেকশনের সরবরাহ কমে গেছে।

বেশীরভাগ রোগীই আগে ডায়াবেটিসে ভুগেছেন এবং স্টেরয়েডের মাধ্যমে কোভিড-19 এর চিকিৎসা করিয়েছেন। কিছু রোগী কোভিড-19 এ আক্রান্ত হওয়া অবস্থায় সার্জারি করিয়েছেন, কারণ বিলম্বের ফলে ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। ফাংগাল ইনফেকশন হয়ে যাওয়ায় তিনজন রোগীর চোখ বাদ দিতে হয়েছে।

এই রোগ এখন মহামারীতে পরিণত হয়েছে, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকেও আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে বেশী থাকে, বিশেষ করে যারা স্টেরয়েড নিচ্ছেন এবং সেইজন্য নিয়মিত যথাযথভাবে স্টেরয়েডের ডোজ ও সুগার লেভেল মনিটর করতে হবে। নাকে ফাংগাস জমা আটকাতে এই রোগীদের সাধারণ স্যালাইনের সাথে বেটাডাইন মিশিয়ে অথবা নেজাল ওয়াশ কিট দিয়ে নাক পরিষ্কার করা শুরু করতে হবে।

ডঃ মনুশ্রুত, এমএস, ডিএনবি, ফেলোশিপ ইন ইমপ্ল্যান্ট অটোলজি (সিএমসি, ভেলোর), অ্যাডভান্সড ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট ট্রেনিং (আইসিআইটি, ইউএসএ)

কনসাল্ট্যান্ট ইএনটি, হেড অ্যান্ড নেক সার্জন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *