নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ জুন৷৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্তমান সিপিএম বিধায়ক ভানুলাল সাহার ‘আইনত নিরামিষ অস্ত্র’ মন্তব্যে ত্রিপুরায় তীব্র আলোড়ন হয়েছে৷ নেটিজেন থেকে রাজনৈতিক মহল সর্বত্রই তীব্র ভাষায় সমালোচনা হচ্ছে৷ ত্রিপুরা প্রদেশ বিজেপি সাধারণ সম্পাদিকার কথায়, সিপিএম-এর কালো অধ্যায়ের স্মৃতি উস্কে দিয়েছেন বিধায়ক ভানুলাল সাহা৷ একজন প্রাক্তন শিক্ষক হিসেবে তাঁর কাছ থেকে এ ধরনের মন্তব্য অশোভনীয় এবং চরম বিস্ময়কর৷ প্রসঙ্গত, ভানুলাল সাহার মন্তব্যকে উস্কানিমূলক দাবি করে গতকাল রাতে বিশালগড় থানায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷
সম্প্রতি বিধায়ক ভানুলাল সাহা ফেসবুকে লেখেন, ওদের ইট, লাথি, পেট্রল বোমা ইত্যাদি মোকাবেলায় গণ প্রতিরোধে বাড়ি বাড়ি লাঠি, দা, দোয়ার বেন্দা, শাবল, বটি দা, কুড়াল, খন্তি, লোহার পাইপ ইত্যাদি (আইনত নিরামিষ অস্ত্র) নারী-পুরুষ-কিশোর-বৃদ্ধ নির্বিশেষে হাতের কাছে রাখুন৷ তিনি বলেন, বাইরে থেকে আসা হামলাবাজাদের মোকাবিলা করতে সাহস সঞ্চয় করুন৷ আত্মরক্ষায় হাতে প্রতিরক্ষা সামগ্রী নেওয়া কোনও অপরাধ নয়৷ সাথে তিনি আহ্বান রাখেন, মোকাবিলা ছাড়া জান-মাল রক্ষা অসম্ভব, যৌবন তুমি আগুন হও৷ শত-সহস্র যুবক তৈরি হও৷ লুম্পেন ও শাসক দলীয় গুণ্ডাদের সাহসের সাথে প্রতিরোধ করুন৷ সঙ্গে এলাকার জনগণকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করে নেতৃত্বে থাকুন৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর ’’আইনত নিরামিষ অস্ত্র’’ যুবসমাজকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ কারণ, ওই বার্তায় সাড়া দিয়েছেন বহু যুবক৷ তাতে ত্রিপুরায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন সাধারণ জনগণ৷ আজ (মঙ্গলবার) সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদেশ বিজেপির সাধারণ সম্পাদিকা পাপিয়া দত্ত বলেন, প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিধায়ক ভানুলাল সাহার এ-ধরনের মন্তব্যে প্রমাণিত করেছে ২৫ বছর তাঁদের ক্ষমতায় থাকার রহস্য৷ তাঁরা সেই পুরনো পদ্ধতি প্রয়োগ করে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরতে চাইছেন৷ তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, তাঁরা ক্ষমতায় থাকতে এতটাই ক্ষুধার্ত যে কাউকেই বরদাস্ত করেন না৷
পাপিয়ার কথায়, অতীতেও সিপিএম-এর নেতারা সন্ত্রাসে উস্কানি দিয়েছেন৷ ক্ষমতায় থাকাকালীন শুধু নয়, ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত জোট আমলে তাঁরা ত্রিপুরায় সীমাহীন সন্ত্রাস করেছেন৷ তাঁর দাবি, ওই সময় মানুষ সন্ধ্যা ছয়টার পর উদয়পুর, আমবাসা, তেলিয়ামুড়া যেতে পারতেন না৷ এখনও সিপিএম সমর্থকরা তিপ্রা মথা-র মুখোশ পরে সমগ্র এডিসি এলাকায় অস্থিরতা কায়েম করে রেখেছেন৷
তিনি বলেন, করোনা-র প্রকোপে ত্রিপুরায় ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে৷ এই পরিস্থিতিতে বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার সমস্ত রকম সহায়তার চেষ্টা করছে৷ ৭ লক্ষ গরিব পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিয়েছে৷ সাথে ১০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা করেছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, করোনায় পিতামাতার মৃত্যুতে অনাথ শিশুদের সমস্ত দায়িত্ব ত্রিপুরা সরকার নিয়েছে৷ কিন্তু ত্রিপুরা সরকারের এই উদার মানসিকতা সিপিএম নেতাদের হজম হচ্ছে না৷ তিনি কটাক্ষ করে বলেন, মেলারমাঠের নেতারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় রয়েছেন৷ ত্রিপুরায় বিজেপি জোট ক্ষমতায় আসার পর থেকে একটিও রাজনৈতিক খুনের ঘটনা ঘটেনি৷ তাই, বিধায়ক ভানুলাল সাহার ওই মন্তব্যের তীব্র ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছি৷
প্রদেশ বিজেপির প্রধান মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, রাজ্যে অস্থিরতা কায়েম করা সিপিএম নেতাদের স্বভাব৷ তাঁর কটাক্ষ, সিপিএম নেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী, বিজন ধর লাগাতার উস্কানিমূলক মন্তব্য করছেন৷ তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ পুলিশ নিশ্চয়ই তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে৷