রাজ্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যু নিয়ে একই দিনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সহ কেন্দ্রের পাঁচ মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করলেন মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ জানুয়ারি৷৷ আজ নয়া দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর সাথে মিলিত হয়ে রাজ্যে সৈনিক বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে আলোচনা করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে জানান যে, সৈনিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য প’দশ অর্থ কমিশনে অর্থ বরাদ্দের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন পেলেই রাজ্য সরকার সৈনিক বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু করবে৷ অন্যদিকে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ত্রিপুরাতে সীমান্ত সড়ক প্রকল্প সেতুক-এর কাজে সহায়তা ও সহযোগিতা করতে মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানালে মুখ্যমন্ত্রী সীমান্ত সড়ক সংস্থাকে (বি আর ও) এব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দানের আশ্বাস দেন৷


দল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আজ কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পিযুষ গোয়েলের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হয়ে রাজ্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন৷ কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর সাথে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল প্রাক কোভিড সময়ে ত্রিপুরা থেকে যেসব এক্সপ্রেস ট্রেন পরিষেবা চালু ছিল সেগুলি পুনরায় চালু করা, ডেমু ট্রেন সার্ভিস পুনরায় চালু করা, সাবম রেল ইয়ার্ডের কাজ দ্রত সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা৷ আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, ২০১৯-এর ৩রা অক্টোবর চালু হওয়া দু’টি ডেমু ট্রেনই ২০১৯-এর ডিসেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে আছে৷ যদিও এখন দু’একটা ট্রেন চলছে কিন্তু রাজ্যে ডেমু ট্রেন পরিষেবা এখনো চালু হয়নি৷ তাই মুখ্যমন্ত্রী এগুলি পুনরায় চালু করার অনুরোধ জানান৷ অন্যদিকে প্রাক কোভিড সময়ে ছয়টি এক্সপ্রেস ট্রেন চলতো ত্রিপুরা ও ভারতের বিভিন্ন জায়গার মধ্যে৷ এখন আগরতলা-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস ও আগরতলা-দেওঘর এক্সপ্রেস ট্রেন দু’টি চলছে৷ তিনদিকে বাংলাদেশ দিয়ে ঘেরা ত্রিপুরার মানুষ বিমান পরিষেবাকে বাদ দিলে রাজ্যের অভ্যন্তরে ও রাজ্যের বাইরে যাতায়াতের জন্য মূলত: এই ডেমু ও এক্সপ্রেস ট্রেনের উপর নির্ভরশীল৷ তাই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের মানুষের চাহিদার কথা চিন্তা করে সমস্ত এক্সপ্রেস ট্রেন পুনরায় চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীকে৷ তিনি বলেন, মূলত: তীর্থযাত্রীরাই আগরতলা-দেওঘর এক্সপ্রেস এর পরিষেবা গ্রহণ করেন৷ তাঁদের সুুবিধার্থে তিনি আগরতলা স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছাড়ার সময় রাত ১০:২৫ এর বদলে রাত ৯টা বা কমপক্ষে রাত দশটা করতে অনুরোধ করেন৷


কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী পেঁচারথল, কৈলাসহর এবং ধর্মনগর রেলস্টেশন আগরতলা হয়ে ধর্মনগর- বিলোনীয়া বিকল্প রেল লাইন এবং বিলোনীয়া-ফেনী (ভারতের অংশে) রেল লাইনের সমীক্ষার কাজ দ্রত সম্পন্ন করার বিষয়ে ভারতীয় রেল এর ইতিবাচক ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান৷ মুখ্যমন্ত্রী ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের কথা বিবেচনা করে ফেনী-বিলোনীয়া (বাংলাদেশ অংশে) রেল লাইনের কাজ হাতে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেন৷ তিনি বলেন, বিলোনীয়া-ফেনী (বাংলাদেশ অংশে) রেল লাইনের সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে এবং তার রিপোর্ট রেলওয়ে বোর্ড বিদেশ মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়েছে অনুমোদনের জন্য৷ তাছাড়া শীঘই ফেনী নদীর উপর নির্মিয়মান মৈত্রী সেতু চালু হয়ে গেলে সেদিকেও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা খুলে যাবে এবং তখন বাংলাদেশের চ-গ্রাম বন্দরের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হলে এই পথে মানুষের যাতায়াত বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়৷ সাবমে যে আই সি পি টি অনুমোদন হয়েছে সেটির কাজও শীঘই শুরু হয়ে যাবে৷ তাই আগামী দিনগুলিতে শুধু ত্রিপুরার সাথে নয়, উত্তর পূর্বা’লের অন্যান্য রাজ্যের রেল নেটওয়ার্কের উপরও যাত্রীর চাপ পড়বে৷ তাই মুখ্যমন্ত্রী সাব্রুমে রেল ইয়ার্ডটির কাজ দ্রত শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে রেলমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন৷


এদিকে, আজ নয়াদিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব কেন্দ্রীয় বিদ্যৎ ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি দপ্তরের রাজ্যমন্ত্রীর সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন৷ বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের সাথে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যৎ বিক্রির চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করা ছাড়াও নর্থ ইস্টার্ন রিজিওন পাওয়ার সিস্টেম ইমপ্রভমেন্ট প্রজেক্ট (ঞ্ছক্কট্টঞ্ঝছটঞ্ঝ)-এর আওতায় চড়িলামে একটি ট্রানজিট ক্যাম্প করার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেওয়ার আবেদন জানান৷ তাছাড়াও তিনি সূর্যমণিনগরের সাবস্টেশনকে ৪০০ কেভিকে উন্নীত করার কাজ চলাকালীন সময়ে পালাটানা থেকে সূর্যমণিনগরে ১৩২ কেভি সরবরাহ লাইনটি চালু রাখা এবং সূর্যমণিনগরের বর্তমান ১৩২ কেভি লাইনের মাধ্যমেই বাংলাদেশে বিদ্যৎ সরবরাহ করার জন্য অনুরোধ করেন৷ কেন্দ্রীয়মন্ত্রী এসব ব্যাপারে তার পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন৷


অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী আজ কেন্দ্রীয় বন্দর, জাহাজ পরিষেবা ও জলপথ মন্ত্রী মনসুুখ এল মান্দভিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করে সোনামুড়ায় স্থায়ী জেটি / টার্মিনাল নির্মাণ, গোমতী নদীর নাব্যতা বাড়ানো, সেতুর উচ্চতা বাড়ানোর কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান৷ জলপথে ত্রিপুরা থেকে রাজ্যে আনারস পরিবহণের বিষয়টি ত্বরান্বিত করতেও তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে অনুরোধ করেন৷ এতে কেন্দ্রীয় বন্দর ও জলপথ মন্ত্রী এ সমস্ত কাজ রূপায়ণ ত্বরান্বিত হবে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বাস দেন৷
আজ নয়াদিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বাণিজ্য, শিল্প ও রেলমন্ত্রীর সাথেও সাক্ষাৎ করেন এবং রাজ্যে রাবার ক্ষেত্রের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং রাবার ক্ষেত্রের উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন৷ তাছাড়া ডেমো ট্রেন সহ প্রাক কোভিড সময়ের সমস্ত ট্রেন পুনরায় চালু করা, সাবমে ইয়ার্ড নির্মাণ, সেতুর নীচের রাস্তা নির্মাণ, দেওঘর এক্সপ্রেসের সময় পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ও আলোচনায় স্থান পায়৷


বাংলাদেশের সাথে রাজ্যের ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যৎ বিক্রয়ের ৫ বছর মেয়াদী চুক্তির (পি এস এ) মেয়াদ আগামী ২০২১ সালের মার্চ মাসে শেষ হবে৷ বর্তমান শর্তাবলীর ভিত্তিতেই এই চুক্তি আরও পাঁচ বছর বাড়ানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্ব) রাজকুমার সিং-কে অনুরোধ জানিয়েছেন৷ আজ নয়াদিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব কেন্দ্রীয় বিদ্যৎমন্ত্রী রাজকুমার সিং-এর সাথে দেখা করে এই অনুরোধ জানান৷ উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন৷ আজ মুখ্যমন্ত্রী নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় বিদ্যৎ মন্ত্রীর সাথে এক সাক্ষাতে আবারও বাংলাদেশে বিদ্যৎ বিক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন৷ উল্লেখ্য, ত্রিপুরা এতদিন যাবৎ চুক্তি অনুসারে এন টি পি সি বিদ্যৎ ব্যাপার নিগম লিমিটেডের (গটটগ) দ্দলত্ম্যমে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করছে৷ সংশ্লিষ্ট সকলেরই এতে সন্তোষজনক অভি’তা রয়েছে৷ তাছাড়া বাংলাদেশ ছাড়া ত্রিপুরা থেকে হাই ভোল্টেজের এই পরিমাণ বিদ্যৎ ক্রেতা আর কেউ নেই৷ বাংলাদেশে বিদ্যৎ সরবরাহ থেকে অর্জিত অর্থ রাজ্যের মানুষের উপকারে আসছে৷ তাই ত্রিপুরার মানুষের স্বার্থেই মুখ্যমন্ত্রী এই চুক্তির মেয়াদ বাড়াবার জন্য কেন্দ্রীয় বিদ্যৎ মন্ত্রীকে অনুরোধ করেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *