নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ মার্চ৷৷ দুর্নীতি যেন এই রাজ্যকে পুরো গ্রাস করে নিয়েছে। সর্বক্ষেত্রে এক প্রকার লুটের বানিজ্য চলছে। এবার সাধারন মানুষের জীবন নিয়ে চলছে একপ্রকার লুটপাট। অমরপুর -নতুনবাজার সড়কের চেলাগাং মুখ থেকে প্রায় ১০ থেকে১২ কিলোমিটার ভিতরে তৈরী হচ্ছের গুচ্ছ গ্রাম। এই রগুচ্ছ গ্রাম নির্মানের নামে লক্ষ লক্ষ টাকার দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ উঠছে।

স্বশাসিত জেলা পরিষদের দক্ষিন জোনাল বীরচন্দ্র মনু থেকে গত অর্থ বছরে পুর্ব দুলুমা ভিলেজের চন্ডীরাম পাড়া এবং বসু পাড়ার ৪০ টি রিয়াং জনজাতি পরিবারের জন্য রি গ্রুপিং সেন্টার নির্মানের জন্য অর্থ বরাদ্ব হয়। এই কাজ সম্পন্ন করার জন্য রাকেশ দেববর্মা ও বিপিন দেববর্মা নামে দুজনকে ওই নির্মান কাজের আই ও করা হয়। নির্মান কাজের অফিসিয়াল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতেই অত্র এলাকার বিশেষকরে অমরপুর মহকুমার একাংশ স্বার্থলোভী লোক সেই নির্মাণ কাজ থেকে অর্থ লুটপাটের জন্য সক্রিয় হয়ে উঠে। দুই ইঞ্জিনিয়ারের সাথে ঘরোয়া বৈঠক করে কমিশনের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করার অলিখিত চুক্তি হয়। শুরু হয় নির্মানকাজে অনিয়মের পালা।
চন্ডীরাম ও বাসু পাড়ার মোট ৪০ টি পরিবারকে পাশের একটি টিলাভুমিতে পাকা বাড়ি নির্মান করে দেওয়া হবে। সেই মোতাবেক কাজও শুরু হয়ে গেছে। কাজের ইষ্টিমেট অনুয়ায়ী ২৪ ফুট বাই ১৯ ফুট পাকাবাড়ী নির্মানের জন্য প্রতিটি ঘড়ের জন্য বরাদ্ব ধরা হয় ৮ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা।প্রতিটি ঘড়ে টাইলস, বেডরুম, কিচেন ও বাথরুম থাকবে। আরো জানা যায় ,এই গুছগ্রামে ওই চল্লিশটি পরিবারের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য একটি বিদ্যালয় তৈরি করা হবে। এলাকায় গিয়ে নিম্ন মানের কাজের অভিযেগের সত্যতা পাওয়া যায়।একটি ২৪ ফুট বাই ১৯ ফুট দালানবাড়ি নির্মান করতে গেলে মাটির নিচে যতটুকু গাতনি করার কথা তাও মানা হয়নি। পাশাপাশি প্রতিটি ঘড়ের আয়তন ও মানা হয়নি। নির্মানকাজে ব্যাবহার করা হচ্ছে অত্যন্ত নিন্মমানের সামগ্রি। ইষ্টিমিট অনুযায়ি ব্যাবহার করা হচ্ছেনা সিমেন্ট ও রড। দেওয়ালে ব্যবহ্যত ইট গুলো যতটা নিম্নমানের বলা যায় ততটাই কম বলা হবে।মর্জিমাফিক কাজ চলছে আর জমিয়ে চলছে অর্থ লুটপাট। আরো জগন্যতম অভিযোগ উঠে যেই টিলা ভুমিতে ওই বাড়িগুলো তৈরি করা হচ্ছে ওই টিলাভুমিতে বড় বড় মুল্যবান গাছ ছিল। বন দপ্তরের রাঘব বোয়ালদের সাথে যোগসাজসে ওই গাছ গুলো কেটে সামান্য রেভিনিউ জমা করে ওই কাঠগুলোই ব্যাবহার হয়েছে দালানবাড়ির দরজা জানালার কাজে। ঘরের ছাদের দিকে তাকালে দেখা যায় একটি ঘরের ছাদ যেমন হওয়ার কথা তার ধারেকাছেও নেই। ছাদ ডালাইয়েও নিম্নমানের সুড়কি ব্যাবহার করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানিয় মানুষদের একাংশের অভিযোগ, যদি ছাদের থিকনেশ সঠিকভাবে দেওয়া হয় তাহলে ছাদের ওজনেই দালান ভেংগে পড়বে। কাজের নিম্নমান নিয়ে ওই এলাকার বেশ কিছু যুবক স্বশাসিত জেলা পরিষদের সদর দপ্তরেও অভিযোগ পত্র পাঠিয়েছিল। কোন কাজ হয়নি। এই অভিযোগের ভিত্তিতে রাধাবাবু, শান্তনু বাবুরা বারকয়েক নির্মান কাজের প্রাঙ্গনে এসেছিলেনও। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য কারনে তাদের চোখে পরেনি এই নিম্ন মানের কাজ এবং নিম্ন মানের কাজের অনিয়মও বন্ধ হয়নি। বরং বেড়েছে আরো বেশি। স্থানিয় লোকদের মারফত আরো জানা যায় , এই কাজের আইও ইঞ্জিনিয়ার বাবুরা এখানে প্রায় আসেননা বলেই চলে। একজন ম্যানেজার এবং স্থানিয় দুই-তিন জন যুবককে কাজ দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়ে কাজ পরিচালনা করে চলছেন। দুই ইঞ্জিনিয়ারের প্রত্যক্ষ মদতেই চলছে নিম্নমানের নির্মানকাজ। এই ঘর গুলি তৈরি করার ক্ষেত্রে যে পরিমান দুর্নীতি চলছে হাল্কা ভুমিকম্প হলেই তাসের ঘরের মত ভেঙে পরবে ওই গুচ্ছগ্রামের নির্মিত বাড়িগুলো। পাশাপাশি যে পরিমান নিম্নমানের কাজ চলছে তা এই ঘর প্রাপকদের কাছে দুশ্চিন্তার কারন হয়ে উঠেছে। এই ঘরে বসবাস করার পর থেকে যে তাদের জীবন এক প্রকার ঝুঁকির মধ্যে থাকবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এলাকাবাসীর অভিযোগমুলে কাজের দায়ীত্ব প্রাপ্ত ইন্জিনিয়ার বিপীন দেব্বর্মার কাছে কাজের গুনগত মান নিয়ে জানতে চাইলে বিপীন বাবু সোজা ভাষায় বলে দেন তিনি কিছু জানেন না। কাজের বিষয়ে কিছু জানার হলে বীরচন্দ্র মনুর জোনাল অফিস থেকে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তবে মানুষের অভিযোগ যে সম্পুর্ন সত্য তা কাজের গোড়ায় পা রেখেই বোঝা গেছে। তখনো নিম্নমানের ইট ব্যাবহার করতে দেখা গেছে। সিমেন্ট বালির মিশ্রনে সিমেন্ট ব্যাবহার হচ্ছে খুবই কম। মোট কথা হল দুই আইও এবং স্বার্থলোভী এলাকার কিছু নেতার যোগসাজশে নির্মিয়মান গুচ্ছগ্রাম আগামীদিন আতংকের কারন হয়ে দাঁড়াবে। যেকোন সময় ঘটতে পারে বড়সড় দুর্ঘটনা। আর তাতে প্রান হানির ঘটনাও ঘটতে পারে। যদি এই নিম্ন মানের কাজের জন্য কোনো রকম দুর্ঘটনা ঘটে এবং কারোর প্রান যায় তাহলে তার দায়ভার কে নেবে? তখন কি জবাব দেবে সরকার? অতিসত্বর যদি এই কাজের দিকে নজর না দেয় রাজ্য সরকার তাহলে আগামীদিনে যে জবাব দিহী করতে হবে তা নিসন্দেহে বলা যায় ৷