প্যাডেল চালিত মোটর রিক্সা বেআইনী ঘোষণা হাইকোর্টের, রিক্সা চালকদের অবরোধ ভাঙচুর, শহর আগরতলায় ত্রাস

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ ফেব্রুয়ারি৷৷ ত্রিপুরা হাইকোর্ট প্যাডেল চালিত রিক্সায় মোটর বে আইনী ঘোষণা করেছে৷ বৃহস্পতিবার সকালে ট্রাফিক পুলিশ আগরতলায় কয়েকটি প্যাডেল রিক্সা থেকে মোটর খুলে নেয়৷ আর তাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন রিক্সা চালকরা৷ প্যাডেল রিক্সা থেকে মোটর খুলে নেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ রিক্সা চালকরা রাজধানী আগরতলায় বেশ কয়েকটি স্থানে অবরোধ ও ভাঙচুর চালিয়েছে৷ তাদের এই উত্তেজিত আচরণে শহর আগরতলায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এদিন বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও টিএসআর বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়৷

প্যাডেল চালিত রিক্সা থেকে মোটর খুলে নেওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার আগরতলায় প্রতিবাদ আন্দোলনে উত্তেজিত রিক্সা চালক৷ ছবি- নিজস্ব৷

বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টা থেকেই আগরতলায় বিভিন্ন স্থানে রিক্সা চালকরা রাস্তা অবরোধ করেন৷ প্যালেড রিক্সা থেকে মোটর খুলে নেওয়ার প্রতিবাদেই তারা রাস্তা অবরোধ করেছে বলে জানিয়েছেন৷ বেলা যত গড়িয়েছে তাদের আচরণ ক্রমেই উশৃঙ্খল হয়ে উঠেছে৷ এদিন রিক্সা চালকরা রাধানগর, উত্তর গেইট, বটতলা, ঝুলন্ত ব্রিজ, পুরাতন মোটর স্ট্যান্ড এবং প্যারাডাইস চৌমুহনীতে রাস্তা অবরোধ করেছে৷ দীর্ঘ সময় অবরোধের কারণে পথ চলতি মানুষরা হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ অভিযোগে জানা গেছে, সাধারণ মানুষ অবরোধ চলাকালীন রিক্সা চালকদের রক্ত চক্ষুর মুখে পড়েছিলেন৷ শুধু তাই নয়, রিক্সা চালকরা লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির সংলগ্ণ স্থানে একটি পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে৷ গাড়ির চালক কোনও মতে নিজেকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন৷ এখানেই থেকে থাকেননি রিক্সা চালকরা৷ ঝুলন্ত ব্রিজে অবরোধ চলাকালীন দুই ট্রাফিক কনস্টেবলকে মারধোরেরও ঘটনা ঘটেছে৷ পাশাপাশি মোটর স্ট্যান্ডে অবরোধ চলাকালীন রিক্সা চালকরা পথ চলতি সাধারণ জনগণকে বিশ্রি ভাষায় গালাগাল করেছেন৷

এই অবরোধের ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন তাদের বুঝিয়ে কয়েকটি স্থান থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করাতে সক্ষম হলেও প্যারাডাইস চৌমুহনীতে দীর্ঘ সময় রাস্তা অবরোধ করে রাখেন রিক্সা চালকরা৷ তাদের বক্তব্য, এই ভাবে প্যালেড রিক্সা থেকে মোটর খুলে নিয়ে তাদের রোজগারে আঘাত আনা হয়েছে৷ রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ তারা কোনও ভাবেই মেনে নেবেন না৷ এদিন তারা দীর্ঘ সময় পুর নিগমের অফিস ঘেরাও করে রাখেন৷ শেষে পুর কমিশনার তাদের মধ্যে পাঁচ জনকে ডেকে নিয়ে আলোচনা করেন৷ জানা গেছে, পুর কমিশনার রিক্সা চালকদের জানিয়েছেন রাজ্য সরকার তাদের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল৷ কোনও রিক্সা চালকের ক্ষতি হোক তা রাজ্য সরকার চাইছে না৷ পুর কমিশনার রিক্সা চালকদের আশ্বাস দিয়েছেন, ৫ মার্চের আগে এ ধরনের কোনও অভিযান হবে না৷ পাশাপাশি তিনি রিক্সা চালকদের শান্তি বজায় রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন৷ পুর কমিশনারের আশ্বাসের ভিত্তিতে এদিনের মতো আন্দোলনে থেকে সরে আসেন রিক্সা চালকরা৷

এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এদিনের ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেন৷ তাঁর কথায়, রাজ্য সরকার কোনও রিক্সা চালকের ক্ষতি হোক তা চাইছে না৷ হাইকোর্টের রায়ে প্যাডেল রিক্সায় মোটর লাগানো নিষিদ্ধ হয়েছে৷ তা সত্বেও রাজ্য সরকার তাদের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল৷ তাই, এই সমস্যার সমাধানে রিক্সা নিয়ামক আইন সংশোধনের প্রস্তুতি চলছে৷ হাইকোর্টের রায় মেনে রিক্সা চালকদের কিভাবে রেহাই দেওয়া যায় সেই বিষয়টি ভাবছে রাজ্য সরকার৷ কিন্তু, আজ আগরতলায় যে ঘটনা ঘটেছে তা অনভিপ্রেত৷ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, কোনও প্যাডেল রিক্সা থেকে মোটর খুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়নি৷ ট্রাফিক ইনপেক্টর সুকান্ত বিশ্বাস প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই প্যাডেল রিক্সা থেকে মোটর খুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ তাই, এই কাজের জন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে দাবি করে এর তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন৷ এদিকে, অনুমতি ছাড়া প্যাডেল রিক্সা থেকে মোটর খুলে নেওয়া কাজে নিয়োজিত ইন্সপেক্টর সুরেশ দেববর্মা এবং সাব ইন্সপেক্টর চন্দ্র শেখর বণিককেও শোকজ করা হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *