
আবু আলী, ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি ॥ বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিতে সব ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। রপ্তানি আয় বাড়াতে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে সেভেন স্টিস্টার বড় বাজার। সেখানে রপ্তানি বাড়াতে নজর রয়েছে আমাদের। সবচেয়ে বন্ধুপ্রতীম রাজ্য ত্রিপুরায় রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিপুরায় বিরাট অবদান রয়েছে। সেটি ভুলে গেলে চলবে না। এজন্য ত্রিপুরায় আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে যেসব শুল্ক ও অশুল্ক বাধা রয়েছে তা দূর করা হবে। বাংলাদেশের নব নিযুক্ত বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জাগরনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
টিপু মুনশি আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে আরও ৬টি বর্ডার হাট চালু করা হবে। বিশেষ করে বিদ্যমান বর্ডার হাটগুলোতে যেসব সমস্যা রয়েছে তা দূর করে হাটগুলোর কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। তিনি বলেন, ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। দ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো চালু করা হবে। কর্মসংস্থান তৈরিতে নজর রয়েছে সরকারের। অর্থনীতির চাকাকে আরও গতিশীল করতে রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ করা হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রপ্তানি বাড়াতে নতুন সরকারের নজর থাকবে। বিশেষ করে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে জোর দেওয়া হবে। বিদেশে অবস্থি কমার্শিয়াল উইংগুলোকে আরও শক্তিশালী করা হবে। এছাড়া নতুন করে আরও ৫ দেশে কমার্শিয়াল উইং খোলা হচ্ছে। যাতে করে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যিক বন্ধ আরও সুদৃঢ় হয়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল ছাড়া কোনো উপায় নেই। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) গড়ে তোলার ধারণাটি খুবই সময় উপযোগী। বড় আকারের অঞ্চলগুলোর নির্মাণকাজ যত দ্রুত শেষ হবে, বিনিয়োগ তত বেশি আকর্ষিত হবে। সারাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদন শুরু হলে প্রবৃদ্ধিতে বিরাট উল্লম্ফন ঘটবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে। সেখানে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে। একই সঙ্গে সহজে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও ইউটিলিটি সেবা পাওয়ায় শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে খরচ কমবে।
মন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল শুধু বেকারত্ব কমাবে না, দেশের পরিবেশ রক্ষায়ও বড় ভূমিকা রাখবে। যত্রতত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটে। এ কারণে নির্দিষ্ট স্থানে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। শিল্পনির্ভর অর্থনীতি গড়ে ওঠার ফলে পাল্টে যাবে দেশের চিরচেনা দৃশ্যপটও।
টিপু মুনশি বলেন, রপ্তানি আয় বাড়াতে রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনার হবে। রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ করতে চীন, ব্রাজিল তুর্কি, সাইথ আফ্রিকা এবং ইন্দোনেশিয়ায় বাণিজ্যিক উইং খোলা হবে। এছাড়া নতুন বাজার ধরতে কাজ করা হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশকে স্বয়ং সম্পূর্ণ করতে আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়েছি আমরা। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে নজর দেওয়া হচ্ছে। ব্যবসা সহজীকরণ এবং ডুয়িং বিজনেস কস্ট কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তার চ্যালেঞ্জের ব্যাপারে বলেন, অবকাঠামো, গ্যাস-বিদ্যেিতর সংকট সমাধান করতে পারলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাত পারব। তিনি বলেন, ২০২১ সালে দেশের রপ্তানি ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার রপ্তানি পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণের কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আশাকরি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারব।
তিনি আরও বলেন, রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো, উৎপাদন বহুমুখীকরণ, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়নেও কাজ করা হচ্ছে। বিশেষ করে যে অঞ্চলে যে পণ্য ভালো হয়, সেখানে সেই পণ্যের আরও উন্নতি কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে কাজ করা হবে। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ের মূল চালিকাশক্তি গার্মেন্টস খাত নিয়েও কাজ করতে হবে। চামড়া ও ওষুধশিল্প ভালো করছে। তাই একে একে সব খাত নিয়ে কাজ করা হবে।