রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের হার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ জুলাই৷৷ গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদপত্রকে আরও শক্তিশালী করার জন্য গতকাল রাজ্য মন্ত্রিসভা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ আজ শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ তার অফিসকক্ষে সাংবাদিকদের এই সিদ্ধান্তগুলি জানাতে গিয়ে বলেন, গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের হার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, গত ১৬ মার্চ ২০১৮ তারিখ ত্রিপুরা নিউজপেপার সোসাইটি এবং ত্রিপুরা ওয়েব মিডিয়া ফোরাম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি পিটিশন দিয়েছিল৷ এরমধ্যে অন্যতম ছিল সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের হার পুনঃপরীক্ষা করা৷ এই পরিপ্রেক্ষিতেই গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের হার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, বর্তমানে রাজ্য ৬৬টি সংবাদমাধ্যম রয়েছে৷ এরমধ্যে এ ক্যাটাগরির পত্রিকা রয়েছে ৪টি, বি ক্যাটাগরির পত্রিকা রয়েছে ১১টি, সি ক্যাটাগরির পত্রিকা রয়েছে ৮টি এবং সি ক্যাটাগরির সাপ্তাহিক পত্রিকা রয়েছে ৪৩টি৷ আগে এ ক্যাটাগরির পত্রিকাগুলিতে প্রতি কলম সেন্টিমিটার বিজ্ঞাপনের হার ছিল ৬৫টাকা, এখন তা বেড়ে হবে ৯০ টাকা এবং সি ক্যাটাগরির পত্রিকাগুলিতে প্রতি কলম সেন্টিমিটার বিজ্ঞাপেনর হার ছিল ৫০ টাকা, এখন তা বেড়ে হবে ৬৫টাকা৷ এরজন্য রাজ্য সরকারের বার্ষিক  অতিরিক্ত ব্যয় হবে ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা৷ বিজ্ঞপ্তি জারির সঙ্গে সঙ্গেই এই বৃদ্ধির হার কার্যকর হবে বলে মন্ত্রী জানান৷ এছাড়াও তিনি জানান, এখন থেকে পত্রিকার মালিকানা, সার্কুলেশন এবং অন্যান্য ডিক্লেরেশন পরীক্ষা করার জন্য মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ যদি কোনো ক্রুটি বা গড়মিল দেখা যায় তাহলে ঐ সংশ্লিষ্ট পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ থাকবে৷ এছাড়াও সার্কুলেশন ভিত্তিক সংবাদপত্রগুলির রি-ক্যাটাগরাইজেশন করা হবে বলে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এছাড়াও জাতীয় স্তরের পত্রিকাগুলিতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে ত্রিপুরা অ্যাডভাইটাইজমেন্ট গাইডলাইনের ১৭নং ধারাকে উঠিয়ে দিয়ে ইউনিফর্মাল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, রাজ্য সরকার পতিশ্রুতি অনুযায়ী সাংবাদিক শান্তনু ভৌমিক ও সুদীপ দত্ত ভৌমিক হত্যাকান্ডের মামলার ভার ইতিমধ্যেই সিবি আইএর হাতে তুলে দিয়েছে৷ সংবাদপত্রকে আরও শক্তিশালী করার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের প্রিন্ট ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড প্রদান করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এরমধ্যে বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সাংবাদিকদের এই প্রথম অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড প্রদান করা হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী জানান৷ তিনি আরও জানান, সাংবাদিকদের পেনশনও এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দশ হাজার টাকা করা হয়েছে৷ এছাড়া আগরতলা প্রেস ক্লাবের সংস্কারেরও উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ এই ক্ষেত্রে তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তর এবং পূর্ত দপ্তর যৌথভাবে কাজ শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে৷ প্রেস ক্লাবে বয়স্ক সাংবাদিকদের জন্য লিফট্ বসানোর জন্য বিধায়ক আশীষ কুমার সাহা বিধায়ক উন্নয়ন ফান্ড থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা প্রদান করেছেন৷ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, রাজ্যে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে গণতন্ত্রের সবগুলি স্তম্ভগুলিকে শক্তিশালী করতে হবে৷ গণতন্ত্রের প্রথম স্তম্ভ আইনসভাকে শক্তিশালী করার জন্য রাজ্য বিধানসভায় এবার বেশি সংখ্যক যুব ও গুণ সম্পন্ন জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে৷ মন্ত্রিসভায়ও নবীন ও প্রবীণ মন্ত্রীর সমন্বয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে কাজ করছে৷ গণতন্ত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ বিচার  ব্যবস্থাকেও শক্তিশালী করার জন্য রাজ্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে৷ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও আইনশৃঙ্খলাকে মজবুত করতে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় জেলা ও দায়রা আদালত স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ গতকাল সোনামুড়ায় সিপাহীজলার জেলা ও দায়রা আদালচ চালু করা হয়েছে৷ গণতন্ত্রের আরেকটি স্তম্ভ প্রশাসনকে শক্তিশালী করার জন্যও রাজ্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷ প্রশাসনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এখন থেকে টিপিএসসির মাধ্যমে বৎসর ভিত্তিক রুটিন করে টিসিএস ও টিপিএস পরীক্ষা নেওয়া হবে৷ পাশাপাশি কর্মচারীদের বঞ্চনা দূর করার জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *