বদরপুর রেল জং-এর দৈন্যদশা দেখতে রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে আমন্ত্রণ এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের

বদরপুর (অসম), ২২ জুলাই (হি.স.) : উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের বদরপুর জংশনে সমস্যার অন্ত নেই। নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে রেলের চাকরি যাঁরা করেন, এই সব সমস্যাবলি সমাধানের ব্যাপারে তাঁদের আর্জি আজ আর কেউ কানে তুলেন না। তবে সম্প্রতি লাংডিঙের ডিআরএম এখানকার সমস্যাবলি, অভাব-অভিযোগ দেখে সেগুলি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে গেছেন। তদুপরি বদরপুর রেলওয়ে জংশনের দৈন্যদশা সচক্ষে দেখে যেতে রেলমন্ত্রীক আমন্ত্রণ জানিয়েছে এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন।
সমস্যাবলির তালিকা দিয়ে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, বদরপুর রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের বিশ্রামাগারে রয়েছে তিনটি ‘পে অ্যান্ড ইউজ’, বাংলায় তর্জমা করলে ‘কড়ি ফেল ব্যবহার করো’ টয়লেট বা শৌচালয়। এর মধ্যে একটি মহিলা এবং দুটি পুরুষদের ব্যবহারের জন্য। কিন্তু এই তিনটি শৌচালয়ে চাহিদার প্রয়োজন মিটছে না। কেননা প্রতিদিন এই জংশনের মাধ্যমে সহস্রাধিক যাত্রী আনাগোনা করেন। এতে নিত্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাজার হাজার রেল যাত্রী। এখানে আরও কয়েকটি শৌচালয়ের দাবি বহুদিনের।
সমস্যা দুই, টিকিট রিজার্ভেশনের জন্য দ্বিতীয় শিফ্ট কাউন্টার নেই, অভিজ্ঞ অপারেটরও নেই। দাবি দ্বিতীয় শিফ্টিঙের ব্যবস্থা এবং অভিজ্ঞ অপারেটার নিয়োগ।
সমস্যা তিন, সিসি ক্যামেরার কোনও সংস্থান নেই। ফলে যা হওয়ার তা প্রায় প্রতিদিনই হয়। এই রেলওয়ে জংশনে নিত্যযাত্রীরা নিয়মিতভাবে শিকার হচ্ছেন পকেটমারের। ইভটিজিঙের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। যে কোনও সময় শিবসাগর, মরিয়নির মতো ঘটনা যখন-তখন ঘটতে পারে। তাছাড়া অবৈধ নেশাদ্রব্য পাচার, অসামাজিক কার্যকলাপ প্রায় নিয়মিত সংঘটিত হয়।
সমস্যা চার, ওয়াই-ফাই ব্যবস্থা না থাকার ফলে মোবাইলে ইন্টারনেট উপভোক্তাদের নাজেহাল হতে হয়।
সমস্যা পাঁচ, রেল স্টেশনের আগমন-নির্গমন রাস্তায় নেই কোনও স্ট্রিট লাইটের ব্যবস্থা। এই রাস্তায় রাতে অন্ধকারের সুযোগকে সদ্ব্যবহার করে চোর-ছিনতাইবাজরা।
সমস্যা ছয়, যাত্রী সুরক্ষার ব্যবস্থা নড়বড়ে।
সমস্যা সাত, গোটা দেশের সঙ্গে সংগতি রেখে অসমেও চলছে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মরশুম। অথচ স্টেশনে আসা-যাওয়ার পথ পুঁতিময় দুর্গন্ধ, আবর্জনার স্তূপে ভরপুর।
সমস্যা আট, বদরপুর রেলওয়ে জংশনে আন্ডার গ্রাউন্ড রাস্তা রয়েছে। এর দশা করুণ। এক পশলা বৃষ্টি হলে এই রাস্তায় হাবুডুবু খেতে হয় মানুষের।
সমস্যা নয়, মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে নির্মিত রেল গেটের পদসেতু অকেজো। যাত্রী বা পথচারিদের কোনও কাজে আসছে না। কেবল স্টেশনের শুভা বর্ধন করছে মাত্র।
সমস্যা দশ, পরিস্রুত পানীয় জলের অভাব। তাছাড়া অনিয়মিত সরবরাহ। হাহাকার ভুক্তভোগীদের।
সমস্যা এগারো, রেলওয়ে জংশন ও কর্মচারী আবাসন এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা সুষ্ঠু নয়। ফলে কৃত্রিম বন্যার জলে ডুবতে হয় নাগরিকদের।
সমস্যা বারো, বদরপুর হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলকে সিবিএসই পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু রয়েছে বহু গলদ।
সমস্যা তেরো, বদরপুরের রেলওয়ে হাসপাতাল দৈন্যদশায় ভুগছে। অথচ বদরপুরে এই একটি হাসপাতালই সবেধন নীলমণি। সর্বশ্রেণির মানুষ এর উপর নির্ভরশীল। কিন্তু পরিকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল।
রেলওয়ে এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক পীযূষ সিংহ জানান, এ ধরনের বহু সমস্যার জাঁতাকলে পিষে মরছেন রেলযাত্রী থেকে শুরু করে রেলের কর্মচারীরা। সমস্যাবলি সমাধান করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বহুবার। তিনি জানান, বরাকের তিন জেলা-সহ ত্রিপুরা রাজ্যের রেল যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে বদরপুর রেলওয়ে জংশন। এই স্টেশনের হালহকিকত সচক্ষে দেখে যেতে রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে এখানে আসতে অনুরোধ জানিয়েছেন রেলওয়ে এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক।
শুক্রবার লামডিং ডিভিশনের ডিআরএম আশিস শর্মা বদরপুর রেল স্টেশন পরিদর্শনে এসেছিলেন। এ সব অভাব অভিযোগ শুনে সব সমাধানের আশ্বাস তিনি দিয়ে গেছেন। কবে বহু সমস্যা সমাধান হবে তা দেখতে অপেক্ষা করা ছাড়া বিকল্প নেই, জানান রেলওয়ে এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক পীযূষ সিংহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *