নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৬ জুলাই৷৷ যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস৷ বিজেপি- আইপিএফটি জোট সরকার রাজ্যবাসীর ঘারে আবারও মূল্যবৃদ্ধির বোঝা চাপিয়েছে বলে বিরোধীরা বিষোদগার করেছে৷ বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস অবিলম্বে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে৷ বিরোধীদের মতে, এক দিকে পেট্রোপণ্যে কর বৃদ্ধি, এরই সাথে যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি তাতে আখেরে যানচালকরা উপকৃত হবেন না৷ তাই, পেট্রোল-ডিজেলে করারোপ প্রত্যাহার করে যান চালক ও যাত্রীদের স্বস্তি দেওয়া হোক, দাবি বিরোধীদের৷
শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাক্তন বিধায়ক তথা কংগ্রেস নেতা গোপাল রায় বলেন, মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্তে যাত্রীভাড়া ২০ শতাংশ বৃদ্ধি কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না৷ স্বাধীনোত্তর ভারতের এই রাজ্যে এক লাফে যাত্রীভাড়া এত বৃদ্ধি আগে কখনোও হয়নি৷ তার মতে, বিজেপি – আইপিএফটি জোট সরকার জনবিরোধী নীতি গ্রহণ করেছে৷ কারণ, যাত্রীভাড়া বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে বোঝা চাপানো হয়েছে৷
গোপাল রায়ের বক্তব্য, বাজেটে এবছর পেট্রোল-ডিজেলে করারোপের পাশাপাশি সেস যুক্ত করা হয়েছে৷ রাজ্যে এই প্রথম পেট্রোল-ডিজেলে সেস যুক্ত করা হয়েছে৷ ফলে, পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়েছে৷ তাঁর কথায়, এমনিতেই প্রতিদিন দেশে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এরই মাঝে নতুন করে কর বৃদ্ধি এবং সেস যুক্ত করা জনবিরোধী বলে মন্তব্য করেন গোপাল রায়৷ তাঁর মতে, পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমানো হলে যান চালকরা এমনিতেই উপকৃত হবেন৷ ফলে, তখন ভাড়া বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা পরবে না৷ রাজ্য সরকার পেট্রোল-ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে এই যুক্তিতে ভাড়া বৃদ্ধি করেছে৷ কিন্তু আখেরে যাত্রীসাধারণের পকেটেই কোপ পড়েছে৷ তাই তিনি যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জোড়ালো দাবি জানিয়েছেন৷
এদিকে রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে যাত্রী ভাড়া ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে তাতে রাজ্যের জনগণের উপর আঘাত এনেছে রাজ্য সরকার, বামফ্রন্ট এর তীব্র বিরোধীতা করেছে৷ ত্রিপুরা বামফ্রন্ট কমিটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, রাজ্যের বিজেপি-আইপিএফটি জোট মন্ত্রিসভা ৫ জুলাই সমস্ত ধরনের যানবাহনের ভাড়া ২০ শতাংশ বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা রাজ্যের জনগণের উপর আঘাত৷ পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার ২০১২ সালের পর যাত্রীভাড়া বাড়ায়নি৷ কিন্তু, রাজ্যের বিজেপি জোট সরকার ক্ষমতাসীম হওয়ার চার মাসের মধ্যেই জনগণের উপর ভাড়া বৃদ্ধি চাপিয়ে দিয়েছে৷
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিজেপির নরেন্দ্র মোদি সরকার গত ৪ বছর ধরে পেট্রোল এবং ডিজেলের ক্রমাগত দাম বৃদ্ধি করে চলেছে৷ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি সমহারে কেন্দ্রীয় সরকার কর বাড়িয়ে চলেছে৷ ফলে, সমগ্র দেশবাসী বিশেষ করে গরীব ও শ্রমজীবী মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ দুর্বিষহ উঠেছে৷ বামফ্রন্টের দাবি, দেশের মধ্যে একমাত্র কেরালায় বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সরকার পেট্রোলজাত জ্বালানির উপর সংগৃহিত কর কমিয়েছে৷
বিবৃতিতে আরোও বলা হয়েছে, রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের পর গত চার মাসে সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশা ক্রমাগত বেড়েছে৷ নেই খাদ্য, নেই কাজ৷ বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে৷ অর্থনৈতিক কাজকর্ম কমতির দিকে৷ বামেরা রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করে বলেছে, রাজ্য মন্ত্রিসভা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পেট্রোলজাত পণ্যের দাম কমানো এবং কর কমানোর দাবি জানায়নি৷ উল্টো তাদের প্রথম বাজেটে পেট্রোলজাত পণ্যের উপর সেস বসিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, বাড়ানো হয়েছে রোড ট্যাক্স৷ এখন জনগণের উপর ভাড়া বৃদ্ধি চাপিয়ে দিয়েছে৷ রাজ্য বামফ্রন্ট কমিটি যানবাহনের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে৷ পাশাপাশি পেট্রোলজাত পণ্যের দাম ও কর কমাতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জোড়ালো দাবি জানাতে এবং বাজেটে আরোপিত কর, রোড ট্যাক্স বৃদ্ধি ও সেস প্রত্যাহার করে নিতে আহ্বান জানিয়েছে৷
তাতে মনে হচ্ছে, যাত্রীভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে বিরোধীরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কোমড় বেঁধে নেমেছে৷ শুধু তাই নয়, যাত্রী সাধারণের ভাবাবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়ানোর চেষ্টা করবে বিরোধীরা৷
এদিকে, সিট্যু রাজ্য সভাপতি মানিক দে’র বক্তব্য ভাড়া বৃদ্ধি সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে না৷ তাঁর মতে, পেট্রোল ডিজেলের দাম কমালেই ভাড়া বৃদ্ধি করতে হবে না৷ তবে, তিনি ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবী জানাননি৷