এই প্রথম প্রকৃত নির্বাচনের স্বাদ পাবে সিপিআইএম ঃ বিজেপি

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ ডিসেম্বর ৷৷ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের সময় রাজ্য সরকার কোন অবস্থাতেই সিপিআইএ-এর হয়ে প্রভাব বিস্তার

মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব সহ অন্যান্যরা৷ ছবি নিজস্ব৷

করতে পারবে না বলে জানান বিজেপির রাজ্য প্রভারী সুনীল দেওধর৷ এবারের নির্বাচন বামফ্রন্ট সরকারের সঙ্গে নয়, সিপিআইএম এর সঙ্গে হবে বলেও তিনি জানান দিয়েছেন৷ বিজেপি-র সর্বভারতীয় সম্পাদক তথা প্রদেশ প্রভারী সুনীল দেওধর মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষমতাসীন সিপিআইএম এবারই প্রথম প্রকৃত নির্বাচনের মোকাবিলা করতে যাচ্ছে৷ শাসকদল মানিক সরকারের শাসনকালকে স্বর্ণযুগ বলে প্রচার করছে৷ কিন্তু গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনে যেতে ভয় পাচ্ছে৷ তাই নানা ধরণের অপকৌশল নিচ্ছেন তাঁরা৷ তিনি বলেন, এই প্রথম প্রকৃত নির্বাচনের স্বাদ পাবে সিপিআইএম৷ ইতিপূর্বে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে হত বিরোধী দলগুলোকে৷ শাসকদল সরকার মিলে বিরোধীদের প্রতিহত করত৷ কিন্তু এবার এমনটাই হচ্ছে না৷ এবার সিপিআইএম এর সঙ্গে বিজেপির লড়াই হবে৷ সরকারকে নিরপেক্ষ থাকতেই হবে৷ সরকারি তন্ত্রকে ব্যবহার করে ভোটকে প্রভাবিত করা যাবে না৷ ইতিমধ্যেই এ লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরায় সিপিআইএম এখন আর মার্কসবাদে নেই৷ এখন তাঁরা মাফিয়াবাদী৷ যাঁরা পুরনো মার্কসবাদী রয়েছেন তাঁরা ঘরে ফিরে যাচ্ছেন৷ বিজেপিকে সমর্থন করছেন৷ কারণ তাঁদের তৈরি পার্টিতে এখন আর কোনও গুরুত্ব নেই৷ তিনি আরও জানান, গুজরাটের নির্বাচনে জাতপাতের রাজনীতি হয়েছে৷ কিন্তু গণতন্ত্র আছে বলেই সঠিক ভাবে নির্বাচন হয়েছে৷ কিন্তু ত্রিপুরায় মুখ্যমন্ত্রী তাঁর রাজ্যে যে সংখ্যক আসনে জেতার কথা আগাম বলে দেন, ফলাফলের পর তাই মিলে যায়৷ এতেই বোঝা যায় ত্রিপুরায় গণতন্ত্র নেই৷ সাংবাদিক সম্মেলনে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি বিপ্লবকুমার দেব মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে প্রকাশ্য মঞ্চে বিতর্কের জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন৷ একই সঙ্গে গুপ্তহত্যার পথ ছেড়ে দিয়ে সরাসরি লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন৷ বিপ্লব কুমার দেব বলেন, বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে বিজেপির কার্যকর্তাদের গোপনে তালিবানি কায়দায় হত্যা করা হচ্ছে৷ সম্প্রতি গৌরহরি মলসম এবং তার পর সুনীল দেবকে তালিবানি কায়দায় হত্যা করা হয়েছে৷ শিরা, ধমনি কেটে দিয়ে মৃত্যুর আগে তাঁদের ছটফট করার দৃশ্য দেখেছে আততায়ীরা৷ কিন্তু পুলিশ প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করছে না৷ যারা ঘটনার সঙ্গে আদৌ যুক্ত নয় কিংবা ঘটনার সময় এলাকায় ছিল না তাঁদের পুলিশ পার্টি অফিসের নির্দেশে গ্রেফতার করছে৷ প্রকৃত রহস্য গোপন করার চেষ্টা চলছে৷ তিনি বলেন, সম্প্রতি তিনি গন্ডাছড়ায় বেশ কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করেছেন৷ উন্নয়নের নূ্যনতম বিষয়গুলিও সেখানে পরিলক্ষিত হয়নি৷ অনাহারে দিন কাচাচ্ছে গরিবরা৷ শীতের বস্ত্রও নেই৷ তিনি বলেন, হিংসা ছেড়ে দিয়ে মুক্ত মঞ্চে সাংবাদিক ও সাধারণের উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী কিংবা তাঁর দলের যে কোন নেতা বিজেপি নেতাদের মুখোমুখি হোন৷ মুখ্যমন্ত্রীকে বিতর্কের জন্য চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বিজেপি৷ এ সবে তারা রাজি হবে না জানি, তবু আহ্বান জানাচ্ছি তাঁদের৷ কারণ তাঁরা তাঁদের দুর্বলতা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে৷ তিনি বলেন, তবে জনগণ সবই বুঝে গেছেন৷ এখন পালাবদলের সময়৷ শাসকদল আরও অনেক অপকর্ম করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন৷
গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশে নির্বাচনে জয়ের পর ত্রিপুরাই এখন বিজেপির প্রথম লক্ষ্য৷ দিল্লি থেকে অমিত শাহের ঘোষণার পর বিজেপির রাজ্য সভাপতি বিল্পবকুমার দেব এর পুনরাবৃত্তি করেছেন৷ বিপ্লব কুমার দেব বলেন, ত্রিপুরায় ক্ষমতাসীন সিপিআইএম ভেবেছিল গুজরাটে বিজেপির সরকারের প্রত্যাবর্তন সম্ভব হবে না৷ গতকাল নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের পর তাদের প্রাণবায়ু আটকে যায়৷ এখন তাদের অন্তিম দশার কাউন্ট-ডাউন শুরু হয়ে গেছে৷ ত্রিপুরায় এসে আরএসএস প্রধান সামাজিক এবং মানবজীবনের নতুন দিশা দিয়ে গেছেন৷ তাতে নাগরিকদের চিন্তা চেতনা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে৷ তিনি বলেন, মূর্তি ভেঙে মন্দিরে হামলা চালিয়ে দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করে সিপিআইএম নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্ট করছে৷ কিন্তু জনগণ এ সব বুজে গেছেন৷ গতকাল রাজ্যে বিজয় মিছিলে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছেন৷ সিপিআইএম নেতারা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে গিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এলে তাঁদের পুশব্যাক করা হবে বলে প্রচার করছে ক্ষমতাসীন সিপিআইএম৷ কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর, সংখ্যালঘুদের নয়, কমিউনিস্ট চিন্তাধারাকেই চীনে পুশব্যাক করে দেবে, এই সহজ কথাটি তাদের বোঝা উচিত৷ তিনি উল্লেখ করেন, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা, বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে৷ রাজ্যে সুদিন আসছে৷
এদিকে, সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি বিধায়ক আশিস সাহা৷ তাঁর মতে, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে যুদ্ধ সদৃশ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ বিধায়ক আশিসকুমার সাহা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার শান্তি সম্প্রতির কথা প্রচার করেন৷ এই বিষয়টিকেই ইস্যু করার জন্য তাঁর দল রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি না হলে শান্তি সম্প্রীতির বার্তা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে তাই সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, রাজ্যে যুদ্ধের ন্যায় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ কারণ মানিক সরকার এবং তাঁর দলের নেতারা বুঝে গেছেন বিজেপিকে রোখা সম্ভব হবে না৷ তাই অশান্তি সৃষ্টি করে আবার পরিস্থিতি আনার চেষ্টা করে মানুষকে বিভ্রান্তি করতে চাইছে শাসকদল৷ বিজেপি বিধায়ক জানিয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনে যাওয়ার জন্য বিজেপি র সর্বস্তরের নেতা কর্মীরা এখন প্রস্তুত৷ তবে শাসকদল যে ধরণের চেষ্টা শুরু করেছে তাতে আগামী দিনে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷
মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আপিল খারিজ হয়ে যাওয়ার পর বিতর্কিত সাংসদ ঝর্না দাস পাল বৈদ্যের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাচ্ছে বিজেপি৷ রাজ্যের বিশিষ্ট আইনজীবী অরুণকান্তি ভৌমিক এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, সম্প্রতি করবুকে এক জনসভায় সাংসদ ঝর্ণা দাস পাল বৈদ্য ভোটগ্রহণের পর থেকে নতুন বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠনের আগে বিজেপির নেতা কর্মীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন৷ এমন কি ক্যাডারদের নাম উল্লেখ করে সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টাও করেছেন তিনি৷ এমতাবস্থায় গোমতী জেলার মুখ্য বিচারহিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের (সিজেএম) কাছে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা লিপিবদ্ধ করা হয়৷ কিন্তু সিজেএম আদালত এই বিষয় রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের কথা বলে মামলা খারিজ করে দিয়েছেন৷ আইনজীবী অরুণকান্তি ভোমিক বলেন, সিজেএম যা তথ্য দিয়েছেন তা ভুল এবং আইনের অপব্যাখ্যা৷ তিনি সংসদীয় অপরাধ৷ তাই বিষয়টি নিয়ে আমি উচ্চ আদালতে যাচ্ছি৷ অচিরেই এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে পিটিশন দাখিল করব৷ তিনি বলেন, সাংসদের বিরুদ্ধে ৫০৬ নম্বর ধারা সহ অনেকগুলি ধারা যুক্ত হচ্ছে৷ যাতে তিন বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *