নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ ডিসেম্বর৷৷ মহিলা সুরক্ষায়নে রাজ্য সরকার বিউগল বাজাচেছ৷ সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে নারী সংক্রান্ত অপরাধে শাস্তির হার উদ্বেগজনক৷ গত ১০ বছরে পুলিশের দূর্বল চার্জশীটে শাস্তির হার ৬.৬৪ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে৷ জাতীয় গড়ে দেশের শীর্ষস্থানে ত্রিপুরা মহিলা সংক্রান্ত মামলার শাস্তির হারে৷ উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশে মহিলা সংক্রান্ত অপরাধ দমন ইস্যুতে কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ভোটের বাজার কাঁপাচেছন শাসক শিবির৷ ২০০৫ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত আদালতের প্রাপ্ত রিপোর্ট চোখে ছানাবড়া এনে দেওয়ার সমপর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে৷ উচ্চ আদালতের রেজিস্টার জেনারেল থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টের কপি রাজ্য মহিলা কমিশন সূত্রে হাতে আসতেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য৷
২০০৫ সালে মহিলা সংক্রান্ত অপরাধের মামলা রুজু হয়েছে ৪২৯টি৷ ৬৬৪টি মামলা তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে বাতিল হয় আদালতে৷ অপরাধী শাস্তি পেয়েছে ৭০ জন৷ শতকরা হার ১০৫৪ শতাংশ৷ ২০০৬ সালে ১২৫৫টি নথিভুক্ত মামলার মধ্যে শাস্তির হার ৪.১২ শতাংশ৷ ৯৬১ টি মামলায় পুলিশ সঠিক চার্জশীট প্রদানে ব্যর্থতায় বাতিল করে দিয়েছে আদালত৷ ২০০৭ সালের ১৩১৪ টি মামলায় পুলিশ আদালতে কোন চার্জশীটে প্রমান পেশ করেনি৷ শাস্তির হার ৮.১২ শতাংশ৷ বাতিল মামলার শতকরা হার ৭৭.৭৭৷ ২০০৮ সালে ১৩৪৪ টি মামলায় বাতিলের খাতায় শতকরা হার ৮০.৫০৷ শাস্তির হার নেমে দাড়িয়েছে ৮.০৪ শতাংশে৷ ডোমেস্টিক ভায়ালেন্স অ্যাক্ট তথা গার্হস্থ্য হিংসা আইন থাকলেও রাজ্যে কোমাচ্ছন্ন৷ মহিলা সংক্রান্ত
অপরাধগুলিতে পুলিশ একটি ঘটনারও সুষ্ঠভাবে চার্জশীট সঠিক সময়ে পেশ করেনি৷ ২০০৯ সালে আদালতে নথিভুক্ত মামলার শাস্তির হার একলাফে নীচে নেমে ৪.৮১ শতাংশে৷ ১৭১৪ টি মামলার মধ্যে তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা সুষ্ঠ প্রমান পেশের অভাবে ১৩০৯ টি কেইস বাতিল করে দিয়েছে আদালত৷ ২০১০ সালের আদালতে মহিলা সংক্রান্ত মামলার শাস্তির হার ৫.১৭ শতাংশ৷ ২০১১ সালে শাস্তির হার একই কাটায় দাড়িয়ে ৫.৬৩ শতাংশ৷
আরক্ষা প্রশাসন ঢাকঢোল পেটালেও সঠিক সময়ে চার্জশীট পেশের দৃষ্টান্ত দেখাতে ব্যর্থতায় ক্রমান্বয়ে রেকর্ড করে চলেছে৷ গোপন বোঝাপড়ায় পুলিশ নথিভুক্ত মামলার চার্জশীটে সঠিক ধারা এবং প্রমান পেশ করতে পারেনি৷ ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে রাজ্যের ৬৯ টি থানায় নথিভুক্ত মহিলা সংক্রান্ত অপরাধের মামলা হয়েছে ৬৮৫৮টি৷ তিন বছরের মামলগুলির দূর্বল চার্জশীটে ৩৯৭১ টি মামলা আদালত খারিজ করে দিয়েছে ৷ ১০ বছরে ৫২২৬ টি মামলা এখনো আদালতে বিচারাধীন৷ দীর্ঘ সাক্ষ্য শুনানীর জন্য বহু নির্যাতিতা এবং পরিবার পরিজন মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন৷ সু-বিচারের ক্ষীন আশায় বহু নিগৃহীতারা মামলা করতে থানায় অনীহা প্রকাশ করছেন৷
৩৭ লক্ষ মানুষের বসবাস ত্রিপুরায়৷ মহিলা সংক্রান্ত অপরাধে গড়ে শাস্তির হার ৬ শতাংশ৷ গণধর্ষণ, খুন, ধর্ষণ, বধূ হত্যা, শ্লীলতাহানি সহ প্রত্যেকটি মামলায় শাস্তির গ্রাফ কমছে৷ শান্তি-সম্প্রীতি ও মহিলা সুরক্ষা নিয়ে বাম প্রগতিশীল নারী সমিতির নেত্রীদের ভাষণে গলা শুকিয়ে কাঠ৷ তথ্য প্রমাণ চিৎকার করে বলছে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের ব্যর্থতা৷ বিচারের বানী নীরবে নিভৃতে ক্রন্দন করছে মহিলাদের৷ নির্যাতিতা মহিলাদের পাশে দাঁড়িয়ে সুবিচার প্রদানে রাজ্য মহিলা কমিশনের ভূমিকাও সমালোচনার উর্র্দ্ধে নয়৷ গত ৭ মাসে রাজ্য মহিলা কমিশনে ৩২২ টি নির্যাতনের অভিযোগ এসেছে৷ কমিশন ডেকে পাঠিয়েছে ২৯০ জন নির্যাতিতাকে মামলাগুলির বিস্তারিত রিপোর্টে গ্রহণ করার জন্য৷ পুলিশে ফায়োয়ার্ডিং করেছে রাজ্য মহিলা কমিশন মাত্র ১৭টি মামলা৷ ৩২২ জন আবেদনকারী নির্যাতিতা মহিলাদের মধ্যে সুষ্ঠ বিচার কতজন পেয়েছেন সুস্পষ্ট তথ্য নেই মহিলা কমিশনে৷ আরক্ষা প্রশাসন এবং রাজ্য মহিলা কমিশনের জাতাকলে শাস্তির হার কমলেও রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর নীরব দর্শকের ভূমিকায়৷ আইন-শৃঙ্খলা অবনতিতে মহিলা সুরক্ষার বিষয়টি প্রশ্ণ চিহ্ণের মুখে দাঁড়িয়েছে৷