কলকাতা, ১৬ ডিসেম্বর (হি. স.)৷ এফআরডিআই (ফিনান্সিয়াল রেজলিউশন অ্যান্ড ডিপোজিট ইনসিওরেন্স) বিলের প্রতিবাদ জানিয়ে শনিবার চিঠি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে চিঠি পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিকে, এ দিন এফআরডিআই বিল সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা পিছিয়ে দিল সংসদীয় কমিটি৷
মমতা লিখেছেন, “এই বিল দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের আর্থিক নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটাবে৷ ব্যাঙ্কের ওপর মানুষের দীর্ঘদিনের বিশ্বাসের ভিত নাড়িয়ে দেবে৷ এক শ্রেণির মানুষের ঋণ খেলাপির ভার কেন দরিদ্র মানুষ বইবে? সাধারণ মানুষের টাকা কেন শেয়ার বাজারে খাটানো হবে? কেন মানুষ ইচ্ছা মত ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পারবে না? কেন্দ্রকে তাই এফআরডিআই বিল প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি৷”
বিতর্কিত ফিনান্সিয়াল রেজলিউশন অ্যান্ড ডিপোজিট ইনসিওরেন্স (এফআরডিআই) বিল যা গত অগস্টে সংসদে আনার পরেই পাঠান হয়েছিল সংসদীয় কমিটির কাছে৷ তবে শুক্রবার ওই বিলটি তাদের রিপোর্ট পেশ আরও কিছুটা পিছিয়ে বাজেট অধিবেশনে পেশ করবে৷ একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম তাদের প্রতিবদেন এমনটাই জানিয়েছে৷ ওই কমিটি খতিয়ে দেখবে বিলটিকে যার লক্ষ্য হল রেজলিউশন কর্পোরেশন এবং কর্পোরেশন ইনসিওরেন্স ফান্ড’ মারফত ব্যাংক বিমা এবং অন্যান্য আর্থিক সংস্থার দেউলিয়ার বিষয়টি দেখা হবে৷ কমিটি ঠিক করেছে এই বিলটি ভাল করে খতিয়ে দেখে তাদের রিপোর্ট বাজেট শেষনে পেশ করবে৷
সম্প্রতি এই বির্তকিত এফআরডিআই বিল নিয়ে গোটা দেশেরই সোরগোল উঠেছে ৷ কারণ এই খসড়া বিলটির ৫২ নম্বর ধারা ঘিরে উঠেছে যত প্রশ্ন৷ কারণ সেখানে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কোনও ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার অবস্থায় পড়লে তখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করাতে গ্রাহকের আমানতের টাকা তাঁদের অনুমতি ছাড়াই বাড়তি সময়ের জন্য আটকে দেওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে ওই আমানতের টাকা ওই ক্ষতিতে চলা ব্যাংকের শেয়ার, ডিবেঞ্চার, বন্ড ইত্যাদিতে রূপান্তরিত করে দেওয়া হবে। আমানতে টাকা রাখার সময়ে ব্যাংক গ্রাহককে সুদসহ আসল ফেরতের চুক্তি করলেও নয়া আইনে তা না দিয়ে একতরফা ভাবে সব কিছু শর্ত বদলে দিতে পারবে ব্যাংকগুলি। এর ফলে ব্যাংকের জমা থাকা গ্রাহক এবং আমানতকারীদের টাকা কতটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷
এদিকে এখন কোনও একটি ব্যাংকে যতগুলি অ্যাকাউন্টে যত টাকাই কারও থাকুক না কেন, সেই ব্যাংক ফেল করলে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে ফেরত পেতে পারে গ্রাহক বা আমানতকারীরা৷ এর কারণ হল গ্রাহক পিছু ওই একলক্ষ টাকার বিমা করা থাকে ব্যাংকের।এখন প্রশ্ন উঠেছে, নয়া আইনে বিমার আওতায় থাকা ওই এক লক্ষ টাকাটাও আদৌ ফেরত পাওয়াটা কি এবার অনিশ্চিত হয়ে পড়বে? কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি শুধু নয় ব্যাংকের বিভিন্ন ইউনিয়নও এই বিলের বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছে৷ এমন কী এর বিরোধিতা করে ধর্মঘটেরও হুমকি দিয়েছে ব্যাংকের কর্মচারিদের ইউনিয়ন৷ তাছাড়া এই যে আপাতত আমানতের জন্য যে একলক্ষ টাকা বিমা ব্যবস্থা রয়েছে তা সিকি শতাব্দী পুরনো৷ অথচ এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে তুলনায় অনেক বেড়ে গিয়েছে ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতের টাকার পরিমাণ ফলে তাদের পক্ষ থেকে উল্টে দাবী করা হয়েছে ওই বিমার পরিমাণ এক লক্ষ থেকে বাড়িয়ে তা দশ লক্ষ করার৷
উল্লেখ করা যেতে পারে, শুক্রবার তিন্মুল কংগ্রেসের কর কমিটির বৈঠকেই মমতা দলীয় কর্মী-নেতাদের ঘরে-বাইরে এফআরডিআই বিল নিয়ে বিরোধিতা এবং প্রচার অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন৷
2017-12-16