নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ ডিসেম্বর৷৷ আমাদের মতো গণতান্ত্রিক দেশে দায়বদ্ধতা ছাড়া মানবাধিকার রক্ষা করা যায়না৷ আমার অধিকার অন্যের দায়বদ্ধতার উপর নির্ভর করে আছে৷ এই দায়বদ্ধতা না থাকলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে বলে জানিয়েছেন ত্রিপুরা মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত৷
ত্রিপুরা মানবাধিকার কমিশনের উদ্যোগে আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে ৬৯তম বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উদযাপন উপলক্ষে এক আলোচনাচক্র অনুষ্ঠিত হয়৷ আলোচনাচক্রে সভাপতিত্ব করেন ত্রিপুরা মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত৷ আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি ত্রিপুরা পুলিশ একাউন্টেবিলিটি কমিশনের চেয়ারপার্সন বিচারপতি উৎপলেন্দু বিকাশ সাহা৷ উল্লেখ্য, সমগ্র বিশ্বে ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়৷ ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ইউনাইটেড নেশনস এসেম্বলি এই দিনটিকে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল৷
আজ প্রজ্ঞা ভবনে আলোচনাচক্রে সভাপতিত্ব করে ত্রিপুরা মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত বলেন, আমাদের মতো গণতান্ত্রিক দেশে দায়বদ্ধতা ছাড়া মানবাধিকার রক্ষা করা যায়না৷ আমার অধিকার অন্যের দায়বদ্ধতার উপর নির্ভর করে আছে৷ এই দায়বদ্ধতা না থাকলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে৷ তিনি বলেন, মানবাধিকার যেমন আছে তেমনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিকও আছে৷ তাই মানবাধিকার যাতে লঙ্ঘিত না হয় সে জন্য সুরক্ষা দিতে হবে৷ সমাজ জীবনে রাষ্ট্রীয় জীবনে একটা ভারসাম্য বজায় রাখতেই মানবাধিকার বিষয়টি এসেছে৷ তিনি বলেন, স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত একজন ব্যক্তির মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকাটাই হচ্ছে মানবাধিকার৷ জীবন ধারণ ও স্বাধীনতা হচ্ছে মানবাধিকারের সাথে সম্পর্কিত৷
আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করে ত্রিপুরা পুলিশ একাউন্টেবিলিটি কমিশনের চেয়ারপার্সন বিচারপতি উৎপলেন্দু বিকাশ সাহা বলেন, দরিদ্রতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতা হচ্ছে মানবাধিকারের সামনে সবচেয়ে বড় বিপদ৷ আমাদের দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলিই সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা৷ মানুষকে জীবনের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্যের অধিকার সমভাবে দিতে না পারলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে৷ তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ন্যায়, সামাজিক ন্যায়, রাজনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷ সব মানুষকে অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত করতে না পারলে, নারী পুরুষকে এক সাথে নিয়ে আসতে না পারলে মানবাধিকার রক্ষা করা যাবে না৷ আমাদের সংবিধানের মুখবন্ধে লেখা আছে সমতার কথা৷ এই সমতা আমাদের সামাজিক, আর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে প্রতিষ্ঠা দিতে পারলেই মানবাধিকার রক্ষা করা যাবে৷ আলোচনাচক্রে বিশেষ অতিথি ত্রিপুরা মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনে মনিকা দত রায় বলেন, মানবাধিকারের বিষয়টি মানুষের কাছে এখনও অচেনা-অজানা রয়ে গেছে৷ সাধারণ মানুষের কাছে মানবাধিকারের বিষয়টি আরো বেশী করে নিয়ে যেতে হবে৷ সচেতন করতে হবে তাদের৷ তিনি মানবাধিকার রক্ষায় নারীর মর্যাদা, শিশুর সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক সমতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন৷ বিশেষ অতিথি ত্রিপুরা মানবাধিকার কমিশনের সদস্য সমীরণ দাস বলেন, আইনের চোখে সবাই সমান৷ তাই সবাইকে সম মর্যাদা দিতে হবে৷ মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার যে অধিকার তা এই ১০ ডিসেম্বর ১৯৪৮ সালে ইউনাইটেড নেশনস কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে৷ তাই এই দিনটি সমগ্র বিশ্বের মানুষের কাছে এক মাইল স্টোন৷ তিনি বলেন, আমাদের দেশের সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে মানবাধিকারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷
আলোচনাচক্রে সম্মানিত অতিথি রাজ্যের মুখ্য সচিব সঞ্জীব রঞ্জন বলেন, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য মানবাধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ আলোচনাচক্রে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা স্কিল ডেভেলাপমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান প্রাক্তন মুখ্য সচিব ড এস কে পান্ডা৷ তিনি বলেন, মানবাধিকার শুধু এক দিনের নয়৷ প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহুর্তে মানবাধিকার রক্ষায় সবাইকে কাজ করতে হবে নিজের নিজের ক্ষেত্রে৷ সচেতন করতে হবে মানুষকে৷
2017-12-11