নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৯ ডিসেম্বর ৷৷ বিলম্বে বোধোদয় হল রাজ্য সরকারের৷ বল প্রয়োগ করতেই উঠল রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ৷ শনিবার সকাল থেকে পুলিশ মনু থানাধীন এস কে পাড়ায় চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের একাংশের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানায় পুলিশ৷ কিন্তু, তা কাজে আসেনি৷ অবশেষে দুপুর দেড়টা নাগাদ ধলাই জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারী করে এবং পুলিশ অবরোধকারীদের গ্রেপ্তার করে৷ জানা গেছে, গ্রেপ্তার করার কিছুক্ষণ পর অবরোধকারীদের পুলিশ ছেড়ে দিলে তাঁরা নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যান৷ এদিন অবরোধ তুলতে প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ প্রমাণিত করল রাজ্যকে সঙ্কটে ফেলে এধরণের অবরোধ আন্দোলন ঠেকানো অসম্ভব নয়৷
শুক্রবার দুপুর থেকে মনু থানাধীন এস কে পাড়ায় রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিলেন চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের একাংশ৷ তাতে রেল পরিষেবা রীতিমত স্তব্দ হয়ে পড়ে৷ জাতীয় সড়ক দিয়ে যান চলাচলে ব্যঘাত ঘটে৷ সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের স্বীকার হন রেল যাত্রীরা৷ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে ধর্মনগর স্টেশনে থামিয়ে দেওয়া হয়৷ রাজধানী এক্সপ্রেস কুমারঘাট স্টেশনে এসে থেমে যায়৷ অবরোধের ফলে রাজধানী এক্সপ্রেস এদিনই বদরপুর স্টেশনে ফিরে যায়৷ তাতে এই দুটি ট্রেনের শতাধিক যাত্রী মহা সমস্যায় পড়েন৷ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়, রাজধানী এক্সপ্রেস বাতিল হয়ে যেতে পারে বলে আলোচনা শুরু হয়ে যায়৷ শুধু তাই নয়, দূরপাল্লার রেল পরিষেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা দেখা দেয়৷
শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী অবরোধকারীদের তুলতে কোন ধরণের বল প্রয়োগ করা হবে না বলে জানিয়ে ছিলেন৷ কিন্তু, এই অবরোধের ফলে জন দুর্ভোগ রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করার উপক্রম হয়ে দাঁড়ায়৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মনু থানাধীন এস কে পাড়ায় অবরোধকারীদের স্থানীয় জনগণ গালিগালাজ করেছেন৷ যে কোন সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে যাওয়ারও উপক্রম হয়েছিল৷
এই অবরোধকে ঘিরে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিন্হা৷ তিনি বলেন, চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের প্রতি কংগ্রেস সহানুভুতিশীল৷ কিন্তু, জন দুর্ভোগ তৈরী হওয়া সত্বেও রাজ্য সরকার অবরোধ তুলে দিতে বল প্রয়োগ করতে চাইছে না তা মেনে নেওয়া যায় না৷ তিনি বলেন, অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য তাঁদের বোঝানো উচিত৷ তাতেও তাঁরা রাজী না হলে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত৷ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই অবরোধের জেরে যে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে৷ তাতে সাধারণ জনগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করলে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে৷
এদিকে, সকাল থেকেই পুলিশ অবরোধকারীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানাতে থাকে৷ অবরোধ তুলে না নিলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে বলেও হুশিয়ারী দেয় পুলিশ৷ কিন্তু, অবরোধকারীরা পুলিশের আবেদনে সাড়া দেননি৷ বেলা ১১টা নাগাদ লংতরাভ্যলী মহকুমা শাসক সুভাষ চন্দ্র সাহা অবরোধকারীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার সতর্কবার্তা দেন৷ এরপর বেলা ১টা নাগাদ পুনরায় তাদের অবরোধ তুলে নেওয়ার সতর্কবার্তা দেওয়া হয় মহকুমা প্রশাসনের তরফে৷ কিন্তু, তাতেও অবরোধকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেননি৷ অবশেষ বেলা দেড়টা নাগাদ ধলাই জেলা শাসক এস কে পাড়ায় ১৪৪ ধারা জারি করেন৷ এরই সাথে মনু থানার ওসি পান্না লাল সেনের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ ও টিএসআর বাহিনী অবরোধকারীদের গ্রেপ্তার করে৷ ঐ সময় ধলাই জেলা শাসক, জেলা পুলিশ সুপার, লংতরাইভ্যালী মহকুমা শাসক, মনু এসডিপিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন৷ পুলিশ জানিয়েছে, ৫৭ জন অবরোধকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তাদের গ্রেপ্তার করে স্থানীয় উপেন্দ্র রোয়াজা পাড়া এসবি সুকলে নিয়ে রাখা হয়৷ কিছুক্ষণ পর পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দেয়৷ ছাড়া পেয়ে তাঁরা নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যান৷
অবরোধকারী চাকুরীচ্যুত শিক্ষক উত্তম কুমার দে জানান, তাঁদের বল পূর্বক পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে৷ অবরোধ উঠে গেলেও আন্দোলন জারী থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন৷ শ্রী দে বলেন, এখন আবহাওয়া ঠিক যাচ্ছে না৷ প্রচন্ড বৃষ্টি এবং ঠাণ্ডায় আন্দোলন জারী রাখা মুশকিল হচ্ছে৷ তবে, দুই তিনদিনের মধ্যে তাঁরা পুনরায় বৈঠকে বসবেন৷ তখন আগামী দিনে আন্দোলন কর্মসূচী স্থির করা হবে৷ তিনি জানান, আগামী দিনে আরো বৃহত্তর কর্মসূচী নেওয়া হবে৷
এই অবরোধ উঠে যাওয়ায় রাজ্যে স্বস্তি ফিরেছে৷ দুপুর থেকেই জাতীয় সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে গেছে৷ রবিবার থেকে পুনরায় রেল চলাচল শুরু হয়ে যাবে৷ রাজধানী সহ কাঞ্চনজঙ্ঘা ও আগরতলা-আনন্দবিহার এক্সপ্রেস পুনরায় চালু করা হয়েছে বলে পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলওয়ে জানিয়েছে৷
অবরোধ তুলতে প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ রাজ্যবাসী সমর্থন করছেন বলেই মনে করা হচ্ছে৷ সাথে রাজ্যবাসী মনে করছেন, গতকালই পুলিশ এ ধরণের কঠোর পদক্ষেপ নিলে ২৪ ঘন্টা রাজ্যকে সঙ্কটের পরিবেশে কাটাতে হত না৷
2017-12-10