ত্রিপুরায় কাটাতারের বেড়া নির্মাণ দ্রুত সমাপ্তের নির্দেশ, সীমান্ত সমস্যা নিয়ে কড়া অবস্থান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

কলকাতা, ৭ ডিসেম্বর (হিস)৷৷ সীমান্ত সমস্যা নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং৷ পাশাপাশি ত্রিপুরায় সীমান্তে কাটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ যথাসময়ে কেন সমাপ্ত হয়নি তার খোঁজ খবর নিয়েছেন তিনি৷ ত্রিপুরায় কাটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ দ্রুত সমাপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত নিরাপত্তা আরও জোরদার করার লক্ষ্যে আজ নবান্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন মমতা বন্দ্যোপাধায়৷ সীমান্তের নিরাপত্তা নিযে আজ নবান্নে এই বৈঠকে রাজনাথ-মমতা ছাড়াও ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরন রিজুজু, অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালথানহাওলা এবং পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যসচিব-স্বরাষ্ট্র সচিবরা৷ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এই বৈঠকে যাননি৷

এদিন রাজনাথ সিং নবান্নে এলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে নিজে স্বাগত জানান৷ নির্ধারিত সময় অর্থাৎ বেলা তিনটায় রাজনাথ সিংকে নিয়ে মমতা সভাগৃহে ঢোকেন৷ সঙ্গে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷ ভারত-বাংলাদেশে সীমান্তের একটা বড় অংশ জুড়েই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা৷ এই সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৯৯৬ কিমি৷ তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের অধীনেই রয়েছে ২১১৭ কিমি৷ আজ এই বৈঠকে সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়৷

গত মার্চের মধ্যে ত্রিপুরায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া দেওয়ার কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল৷ ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, অসমে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া দেওয়ার কাজ ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে শেষ করা হবে৷ এর পরে ত্রিপুরা সীমান্তে ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে বেড়া দেওয়া সম্পর্কিত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়৷ সেই কাজ শেষ হয়নি৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দ্রুততার সঙ্গে ওই কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন৷

কিছু দিন আগেই কলকাতায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক ডাকার কথা ছিল৷ কিন্তু, সেটা শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়৷ এবার ফের সেই বৈঠক ডাকা হয়৷ অনুপ্রবেশ, আন্তঃরাজ্য চোরাচালান, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতার বসানো নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়৷ আলোচনা হয় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়েও৷ গত সেপ্ঢেম্বর মাসেই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যাতে কোন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিএসএফ কে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়৷ একই সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর অরক্ষিত এলাকাগুলোকে চিহ্ণিতকরণের জন্য বিএসএফ কে নির্দেশ দেওয়া হয়৷
শুধু বিএসএফ ই নয় অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দেশের সব কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা এজেন্সি এবং রাজ্যের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলিকে নির্দেশিকা পাঠিয়ে মসজিদ, অনিবন্ধিত মাদ্রাসা, সীমান্তবর্তী স্টেশন, বাস টার্মিনাসগুলিতে কড়া নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছে৷ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে মতভেদ তৈরি হলেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপই নিয়েছে কেন্দ্র৷ রোহিঙ্গাদের চিহ্ণিতকরণের জন্য স্থানীয় মানুষরে সাহায্য নেওয়ার পাশাপাশি কাস্টমস, অভিবাসনসহ অন্য এজেন্সি গুলির সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয় বৈঠকে৷

রোহিঙ্গারা মূলত যে রুটগুলি দিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে সেগুলিকে প্রাথমিকভাবে চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ এর মধ্যে উত্তরচবিবশ পরগনা জেলার ঘোজাডাঙ্গা এবং পেট্রাপোল সীমান্ত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য৷ সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের অনুপ্রবেশের পরই রোহিঙ্গাদের কলকাতায় পৌছানোর সম্ভবনা রয়েছে৷ এরপর সেখান থেকে তারা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে৷ বারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বেশ কিছু জায়গায় এখনও অরক্ষিত, অনেক জায়গায় কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যেই গ্রামগুলি অবস্থিত সেক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারী বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের চিহ্ণিত করাটা একটু কঠিন৷

বিএসএফ সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগ গত কয়েক মাসে কয়েকশো রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে৷ এই অঞ্চল দিয়ে ভারতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয় ২০১৩ সালে৷ ওই বছরে ১০৮ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে বিএসএফ৷ ২০১৪ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা অনেকটাই কমে, সে বছর মাত্র ১২ জন রোহিঙ্গা আটক করা হয়, ২০১৫ সালে ২২ জন এবং ২০১৬ সালে ২৬ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়৷ সূত্রের খবর, ২০১৭ সালে এখনও পর্যন্ত এর সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও আগের চেয়ে বেড়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *