কলকাতা, ২৯ নভেম্বর ( হি.স.): কলকাতা পুলিশের এস টি এফের আবার বড় সাফল্য । নেপাল সীমান্তে এস টি এফের জালে পড়ল নিষিদ্ধ বাংলাদেশি সংগঠন আনসারউল্লা বাংলার জঙ্গি আফতাব খান, ওরফে ওমর ফারুখ, ওরফে মাহি ।
এস টি এফ সূত্রে খবর, আনসারউল্লা বাংলার আরেক জঙ্গি তনভিরকে জেরা করে জানা গিয়েছিল, অক্টোবরে হাওড়ার একটি লজে তার সঙ্গে ছিল এই ওমর ফারুখ । হোটেলে সে ছিল আফতাব খান নাম নিয়ে । হোটেলের সি সি টিভি ফুটেজেও আফতাবের ছবি পাওয়া যায় । আফতাব খানের খোঁজ খবর করতে গিয়ে গোয়েন্দারা জানতে পারেন আফতাবই আসলে ওমর ফারুখ ওরফে মাহি । নেপাল পালিয়ে যাওয়ার ছক কষছে সে । নেপাল হয়েই পালানোর ছক ছিল আফতাবের। ধৃত আনসারুল্লা বাংলা দলের সদস্য। এরপরই তার পিছু নেয় এস টি এফ । মঙ্গলবার নেপাল সীমান্ত লাগোয় একটি জায়গা থেকে আফতাব ওরফে ওমরকে ধরা হয়।
উল্লেখ্য, এর আগে কলকাতা স্টেশন থেকে রিয়াজুল ও তানভির নামে দুই বাংলাদেশি জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশের এস টি এফ । তাদের জেরা করে ৩ জঙ্গির নাম পান তদন্তকারীরা । এদের একজন আফতাব ওরফে মাহি। বাকি দু’জন হল তামিম ও নয়ন গাজিও বাংলাদেশি নাগরিক । মঙ্গলবার গ্রেফতার হওয়া আফতাব খান আনসারউল্লা বাংলার বিস্ফোরক টিমের সদস্য । বাংলাদেশে একাধিক ব্লগার খুনে অভিযুক্ত এই জঙ্গি । এনিয়ে মোট চার জন আল কায়দা জঙ্গিকে গ্রেফতার হল এরাজ্যে। ধৃতকে আজ, বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হয়।
সামশাদের মতই আফতাবও বিস্ফোরক বানাতে দক্ষ। হাওড়ার হোটেলে বেশ কিছুদিন ছিল আফতাব । আফতাব বাংলাদেশের বাসিন্দা ৷ আগে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করত সে ৷ ২০১৬-এর ফেব্রুয়ারি থেকে এরাজ্যে আছে আফতাব ৷ বাংলাদেশের অধ্যাপক-ব্লগারকে খুনের চেষ্টা করে সে ৷ আরও দুই জঙ্গির সঙ্গে মিলেই খুনের ছক কষে আফতাব ৷ এনকাউন্টারে তার সঙ্গী দুই জঙ্গির মৃত্যু হয় ৷ তারপরেই পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে আসে আফতাব ৷ রবিবার তার গতিবিধি জানতে পেরে যায় এস টি এফ । সামশাদের সঙ্গী এরাজ্যে আসা আরও তিন জঙ্গির খোঁজে আছে এস টি এফ । এই তিন জঙ্গির গতিবিধি সম্পর্কেই নির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
সব থেকে বেশি ভাবিয়ে তুলেছে আফতাবের গতিবিধি । অন্যান্যদের মত তাকেও এরাজ্যে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয় । মুম্বইয়ের সমুদ্রপার হয়ে এরাজ্যে আসে আফতাব । এরপর তাঁকে হলদিয়া যেতে বলা হয়েছিল । হোটেলের রেজিস্টারেও সে হলদিয়ায় যাওয়ার কথা উল্লেখ করে । শিলিগুড়িতে বেশ কিছুদিন গা–ঢাকা দেওয়ার পর, পানিট্যাঙ্কির মোড় থেকে নেপালে পালাতে যাচ্ছিল মাহি ওরফে আফতাব খান। এই মাহিই যে আনসারুল্লা বাংলা টিমের (এ বি টি) বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ, তা সেখানকার বাসিন্দারাও বুঝে উঠতে পারেননি । কারণ, তাঁর সঙ্গীরা ধরা পড়ার পর নিজের চেহারাই বদলে দিয়েছিল মাহি । কিন্তু কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের চোখে ধুলো দিয়ে নেপালে পালাতে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থই হল আফতাব।
তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে একাধিক ব্লগার খুনের অভিযোগ রয়েছে।গোয়েন্দারা তার কাছ থেকে একাধিক দেশের মানচিত্র পেয়েছে । মিলেছে বিস্ফোরক বানানোর নথিপত্র । ভুয়ো আধার কার্ড । এ রাজ্যে তার সঙ্গী ধৃত তনভির এবং রিয়াজুলকে জেরা করে ইতিমধ্যেই কয়েকজনের নাম পেয়েছে পুলিশ । তাদের মধ্যে অন্যতম তামিম এবং নয়ন গাজি । মাহির সঙ্গে এরাও এ রাজ্যে অনুপ্রবেশ করেছিল, তবে এখনও পর্যন্ত তারা ধরা পরেনি । পানিট্যাঙ্কি থেকে এস টি এফ বুধবার সকালে কলকাতায় নিয়ে আসে মাহিকে । একদফা জেরাও করে । তাকে হেফাজতে নিয়ে এই জঙ্গি মডিউলের মাথার খোঁজ করতে চাইছেন গোয়েন্দারা । মঙ্গলবার উত্তর প্রদেশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স শহরে আসে । ভারতে এ বি টি-র অস্তিত্ব প্রথম জানা যায় উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফ নগরে । এ বি টি-র সন্দেহভাজন প্রথম জঙ্গি গ্রেফতার হয় সেখান থেকেই । তারপর হায়দরাবাদ এবং পশ্চিমবঙ্গ । গত ৪ মাসে মোট ৯ জন আলকায়দা জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছে এই তিন রাজ্য থেকে । তাতেই উদ্বিগ্ন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এজেন্সিগুলি । উদ্বেগ বেড়েছে বি এস এফের ইন্টেলিজেন্স বিভাগেরও ।
এতদিন ভারতে জামাতুল মুজাহিদিন, হুজি, সিঙ্গি এবং ইসলামিক স্টেট জঙ্গি সংগঠনগুলির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে । এবং তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল গোয়েন্দারা । কিন্তু সুদূর সিরিয়া থেকে আল কায়দার থিঙ্কট্যাঙ্ক ভারতের রাজ্যগুলিতে মডিউল তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে বুঝে উঠতে ‘ব্যর্থ’ গোয়েন্দারা । গত ৪ মাসে ৯ জন ধরা পড়লেও, তারা ২০১৪–১৫ সাল থেকেই ভারতে ঘাঁটি গেড়েছিল । অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক স্লিপার সেল গড়ে তোলা হয়েছে । তার জন্য স্থানীয় দুষ্কৃতী এবং কিছু লোভী মানুষের মদতে তারা আধার কার্ড বানিয়ে এ রাজ্যে আশ্রয় পেয়েছে । জঙ্গি মডিউলের খোঁজখবরের পাশাপাশি সেইসব আশ্রয়দাতাদের ওপরেও নজর রয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের। প্রয়োজনে তাদেরও গ্রেফতার করা হতে পারে।
2017-11-29