কলকাতা, ২৬ নভেম্বর ( হি.স.): বাগযুদ্ধে মুকুল রায়কে থামাতে পারছেন না তৃণমূল নেতারা ৷ কিছুতেই প্রাক্তনকে সামলাতে পারছেন না বর্তমান নেতারা ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরই দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুকুল রায়কে বাকি নেতারা বাগে আনতে পারবেন না বলেই মনে করা হচ্ছিল ৷ সেটাই সত্যি হচ্ছে ৷ তাই, পঞ্চায়েত ভোটের আগে একসময়ের ‘ডানহাত’কে সামলাতে এবার স্বয়ং মমতাকেই মাঠে নামতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা৷
প্রথমে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তারপর ফিরহাদ হাকিম, তারপর অর্জুন সিং, মাঝে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়রা চেষ্টা করেছেন মুকুল রায়কে পাল্টা দেওয়ার ৷ কিন্তু পারেননি ৷ মুকুলের বাকচাতুর্যে পিছু হঠেছেন প্রত্যেকেই ৷ এমনকি তৃণমূল যুব সভাপতি ও বর্তমানে মুকুলের জায়গায় ‘নাম্বার টু’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাগযুদ্ধে যাননি ৷ তিনি সরাসরি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন ৷ অভিষেক বনাম মুকুলের লড়াই রাজনীতির মঞ্চ ছেড়ে এখন সরাসরি আদালতের কাঠগড়ায় ৷ তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ‘কাঁচড়াপাড়ার কাঁচা’ ছেলে বলে আক্রমণ করলেও, সেই ‘কাঁচা ছেলের’ কাছেই ‘বাচ্চা ছেলে’ বলে প্রমাণিত হয়েছেন ৷
শেষে তৃণমূলের বড় নেতারা যুদ্ধে এগিয়ে দিয়েছেন ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংকে ৷ যদিও বাবাকে ছেড়ে ছেলেকেই আক্রমণের লক্ষ্য হিসাবে বেশি করে বেছে নিয়েছেন অর্জুন ৷ মুকুল রায়কে একটা পুরসভা আসন জিতে দেখাবার চ্যালেঞ্জ দিলেও সেই যুদ্ধ বেশি দূর এগোয়নি ৷ মুকুলের সঙ্গে যুদ্ধে অর্জুন যে বাজী হতে পারেন না, তা বুঝে গিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ বিশ্ববাংলা নিয়ে রানি রাসমনির মঞ্চে মুকুলের বোমাতেও বেশ ‘আহত’ হয়েছেন তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা ৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মামলা করার হুমকি দিয়ে নোটিশ পাঠিয়েছেন ৷ তার উত্তরে সাত দিনের মধ্যে নোটিশ ফিরিয়ে নেবার হুমকি দিয়ে উকিলি চিঠি পাঠিয়েছেন মুকুলও ৷ নেতা-মন্ত্রীরা তো বটেই মুকুলকে আক্রমণ করতে মাঠে নামাতে হয়েছে নবান্নের দুই সচিবকেও৷ সেখানেও সমস্যা৷ স্বরাষ্ট্র সচিব অত্রি ভট্টাচার্য এবং ক্ষুদ্র ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ সচিব রাজীব সিনহার বিরুদ্ধেই মুকুল রায় লড়াই ঘোষণা করায় রণে ভঙ্গ দিয়েছেন তাঁরাও ৷
শেষ ভরসা এখন সেই ‘ওয়ান অ্যান্ড ওনলি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পদমর্যাদায় অনেক উপরে ৷ দলের কান্ডারি ৷ তাই মুকুল রায়কে এখনও সেভাবে আক্রমণ করেন নি মমতা ৷ একসময়ের সবচেয়ে কাছের লোককে থামাতে তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খোলাটাও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে শোভনীয় নয় ৷ তাই দায়িত্ব বর্তেছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপর ৷ কথার লড়াইটা তিনিই করছিলেন ৷ মাঝে মাঝে এসে কথার ‘গুলি গোলা’ ছুঁড়ে যাচ্ছিলেন বাকি নেতারা ৷ কিন্তু লড়াইয়ে কোথায় যেন একটা খামতি থেকে যাচ্ছে ৷ ঠিক জমছে না ৷ লড়াইয়ে কোথায় যেন হারতে হচ্ছে পদে পদে৷ বাকি নেতারা বি জে পি-র রাহূল সিনহা, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, দিলীপ ঘোষকে থামাতেই ব্যস্ত ৷ বিধানসভাতেও দিলীপকে সামলাতেই ব্যস্ত ফিরহাদ হাকিম, পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা ৷ কিন্তু তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলে থাকা ও এখন খাতায় কলমে পুরোপুরি তৈরি মুকুলকে তাঁরা ঠিকঠাক থামাতে পারছেন না বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল ৷
বাংলার রাজনীতিতে মুকুল রায়ের সমগোত্র যে বাকি নেতারা নন তা আগেই বলে দিয়েছিলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ৷ তাই, মুকুল রায়কে সামলাতে এখন মাঠে নামতে হবে সেই মমতাকেই ৷ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একমাত্র মমতাই পারেন মুকুলকে থামাতে ৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার শুরু হলেই যেকোনও দিন মুকুলকে কথার আক্রমণ করবেন মমতা ৷
মুকুল বনাম মমতা, সেই লড়াই দেখার জন্যই এখন অপেক্ষায় বাংলার আমজনতা ৷ মুকুলের বিরুদ্ধে মমতা কী বলেন, পাল্টা মুকুল কি বলেন তার দিকেই তাকিয়ে রাজনীতিপ্রেমী বাঙালিরা ৷ অধীর আগ্রহে তাকিয়ে সংবাদমাধ্যমও ৷
2017-11-26