নয়াদিল্লি, ১৭ নভেম্বর (হি.স.) : রাফালে যুদ্ধবিমান নিয়ে কংগ্রেসের অভিযোগ খারিজ করে দিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তাঁর দাবি, রাফালে যুদ্ধবিমান নিয়ে কংগ্রেসের অভিযোগ সেনাবাহিনীর পক্ষে অসম্মানজনক । শুক্রবার নির্মলা সীতারামন দাবি করেন, স্ব্চ্ছ প্রক্রিয়া মেনেই চুক্তিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সুতরাং এসব অভিযোগ লজ্জাজনক।
প্রসঙ্গত, রাফালে যুদ্ধবিমান চুক্তি নিয়ে কংগ্রেসের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান রণদীপ সুরজেওয়ালা বর্তমান কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন | গতকালও কংগ্রেস দাবি করে, ৩৬টি রাফালে যুদ্ধবিমানের ব্যাপারে এক ব্যবসায়ীকে ফায়দা পাইয়ে দিতে পুরো ডিলটাই বদলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।জবাবে নির্মলা আজ বলেন, স্ব্চ্ছ প্রক্রিয়া মেনেই চুক্তিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সুতরাং এসব অভিযোগ লজ্জাজনক। রাফালে নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেনাবাহিনীর প্রতিই ‘অন্যায়’ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তাঁর দাবি, ভারতীয় বায়ুসেনার জরুরি প্রয়োজন হওয়ার ফলেই ডিলটি দ্রুত চূড়ান্ত করা হয়। সেটাই প্রধান কারণ।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে পাঁচ দফা বিস্তারিত আলোচনা হয়, তারপর নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্য়াবিনেট কমিটি অনুমোদন দেওয়ার পর ৩৬টি রাফালে কেনার চুক্তিটি চূড়ান্ত করা হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। তিনি অভিযোগ করেন, ওই যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাবের ব্য়াপারে দশ বছর ধরে সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রেখেছিল আগের ইউপিএ সরকার।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার কংগ্রেসের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান রণদীপ সুরজেওয়ালা দাবি করেছেন, বিজেপি রাফালে চুক্তির ক্ষেত্রে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্থান অ্যারোনটিক্স লিমিডেট (হ্যাল)-এর স্বার্থ উপেক্ষা করেছে। কারণ, রাফালে বিমান প্রস্তুতকারী ফরাসি সংস্থা ডসল্ট হ্যালকে প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে রাজি হয়নি। বরং তারা রিলায়েন্স ডিফেন্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। সুরজেওয়ালার আরও বলেন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমলে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পর যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তার থেকে অনেক বেশি দামে এই যুদ্ধবিমান কেনা হচ্ছে।
সুরজেওয়ালা বলেন, ২০০৭-এর ২০ আগস্ট ইউপিএ সরকার ১২৬টি মিডিয়াম মাল্টি-রোল কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট কেনার টেন্ডার দিয়েছিলো। আলোচনার পর রাফালে ও ইউরো ফাইটার টাইফুন বিবেচনার মধ্যে আসে।
২০১২’র ডিসেম্বরে রাফালে’কে এল-১ ভেন্ডর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। টেন্ডারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এর দরই সবচেয়ে কম ৫৪ হাজার কোটি দাম ছিল। সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, ১২৬টি যুদ্ধবিমানের মধ্যে ১৮টি উড়ানসক্ষম অবস্থায় আসবে। বাকি ১০৬টি প্রযুক্তির হস্তান্তরের মাধ্যমে তৈরি করবে হ্যাল।
সুরজেওয়ালা বলেন, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আগেকার ১২৬টি যুদ্ধবিমান কেনার জন্য ‘রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল’ (আরএফপি) বাতিল করা হয়। ২০১৬’র সেপ্টেম্বরে ৮.৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যে ৩৬টি রাফালে ফাইটার জেট কেনার চুক্তি হয়। এরপর অনিল অম্বানির রিলায়েন্স ডিফেন্স লিমিটেড ভারতে প্রতিরক্ষা উৎপাদনের জন্য যৌথ উদ্যোগ গড়ে তুলতে ডসল্ট অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে জোট বাঁধে।
রাফালে ক্রয়ের এই চুক্তির ক্ষেত্রে কোনও স্বচ্ছতা নেই বলে অভিযোগ সুরজেওয়ালার | তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা সংগ্রহ প্রক্রিয়ার বাধ্যতামূলক ধারাও লঙ্ঘিত হয়েছে। প্রযুক্তি সরবরাহের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুন্ন করে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক শিল্পপতির স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে।
তবে, রিলায়েন্স ডিফেন্স এই অভিযোগ নাকচ করে জানিয়েছে, তাদের অধীনস্ত সংস্থা রিলায়েন্স অ্যারোস্ট্রাকচার এবং ডসল্ট-এর যৌথ উদ্যোগ ‘ডসল্ট রিয়ালেন্স অ্যারোস্পেস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে ভারত সরকারের কোন ভূমিকা নেই। ২০১৬’র জুনে সরকার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ এফডিআইয়ের অনুমতি দেয়। তাই উল্লিখিত যৌথ উদ্যোগ গঠনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বা সিসিএস-এর অনুমতি প্রয়োজন নেই বলেও জানায় রিলায়েন্স।
এছাড়া, ‘রাফালে’ যুদ্ধবিমান নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিল ফ্রান্স। বুধবার, এক বিবৃতিতে ফ্রান্সের আধিকারিকরা জানান, সমস্ত নিয়ম মেনেই রাফালে নিয়ে দু’দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি অত্যন্ত স্বচ্ছ। যোগ্যতা ও অসাধারণ দক্ষতার জন্যই অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমান কিনেছে ভারতীয় বায়ুসেনা।
উল্লেখ্য, গতবছরের সেপ্টেম্বরে ভারত-ফ্রান্স দুই দেশের মধ্যে ৫৯ হাজার কোটি টাকার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তি মোতাবেক প্রথম দফায় ফ্রান্স ৩৬টি যুদ্ধবিমান ভারতকে বিক্রি করেছে। চিনের সঙ্গে টক্কর দিতে এ রাজ্যের হাসিমারা, হরিয়ানার আম্বালাতে অতিরিক্ত ৩৬টি রাফালে মোতায়েন রাখা হবে। যেগুলি কেনা হতে পারে ফ্রান্সের কাছ থেকেই। ২০১৯-২০২২-এর মধ্যেই চূড়ান্ত কথাবার্তা হয়ে যেতে পারে। ফ্রান্সের প্রযুক্তিগত সাহায্যে ও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের অধীনে বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান তৈরির কথা রয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে হামলা হলে বায়ুসেনা খুব অল্প সময়ের মধ্যে পালটা হামলা চালাতে একসঙ্গে ১২৬টি মিডিয়াম মাল্টি রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফটকে তৈরি রাখতে চাইছে। আর তাই ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতের সখ্যতা বেড়েই চলেছে। শুধু যুদ্ধবিমানই নয়, ভারতকে যুদ্ধজাহাজ বিক্রি করতেও উৎসাহী ফ্রান্স।