নয়াদিল্লি-কলকাতা, ১৭ নভেম্বর ( হি.স.): ফোনে আড়ি পাতছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। এই অভিযোগে দিল্লি হাইকোর্টে গেলেন মুকুল রায় । মুকুল রায়ের দায়ের করা অভিযোগের জবাব দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। শুক্রবার এক চিঠিতে জানানো হয়েছে, অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখছে তারা। প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।
কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে মুকুল রায়ের দায়ের করা অভিযোগের জবাব দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। শুক্রবার এক চিঠিতে জানানো হয়েছে, অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখছে তারা। প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ওই চিঠিতে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।
তৃণমূল ছেড়ে সদ্য বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন মুকুল রায়। গত ৩ নভেম্বর তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর গতিবিধির ওপরে নজরদারি চালাচ্ছে কলকাতা পুলিস। শুক্রবার মুকুলের সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করল রাজনাথ সিংয়ের মন্ত্রক। মুকুলকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, ”আপনার অভিযোগ খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এর আগে আজ তাঁর ফোনে আড়ি পাতছে রাজ্য সরকার। এই অভিযোগে দিল্লি হাইকোর্টে গেলেন মুকুল রায় । বিচারপতি বিভু বাখরুর কাছে শুনানির জন্য আবেদন জানানো হয়েছে । আবেদনে মুকুল রায়ের দিল্লিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিষেবাকারী এম টি এন এল এবং ভোদাফোনের কাছে তথ্য নেওয়ার কথা বলা হয়েছে । আগামী ২০ নভেম্বর মামলাটির শুনানি হবে বলে জানা গেছে ।
নিজের ঘনিষ্ঠ মহলে ফোনে আড়িপাতা নিয়ে আগেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন মুকুল রায়। এরপর বি জে পি-তে যোগদানের পর রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিটি নম্বরে আড়িপাতার অভিযোগ তোলেন তিনি।
মুকুল রায় জানিয়েছেন, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-নেতাই পর্বেও তাঁর ফোনে আড়িপাতা হয়নি। এই বিষয়ে এরাজ্যের মন্ত্রীদের জিজ্ঞাসা করা হোক । তাঁরা প্রকাশ্যে না বললেও আড়ালে ফোনে আড়িপাতার কথা স্বীকার করবেন । দলীয় সূত্রে খবর, হাইকোর্টের পাশাপাশি এই বিষয়ে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের অফিসে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন মুকুল রায় ।
গত ৩ নভেম্বর দিল্লিতে বি জে পি-তে যোগ দেন মুকুল রায় । পরে কলকাতায় ফিরে আক্রমণ করেন রাজ্য সরকারকে । ১০ নভেম্বর রানি রাসমনি রোডের সমাবেশ থেকে সেই আক্রমণ আরও তীব্র করেন একদা তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ মুকুল রায় ।
বি জে পি-র সভায় দাঁড়িয়ে ফাইল হাতে ‘বিশ্ববাংলা’ নিয়ে মুকুল রায় যে অভিযোগ করেছিলেন, তা সামাল দিতে ইতিমধ্যেই আসরে নেমেছে রাজ্য সরকার। একদিকে, যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবীর তরফে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি এবং তার পাশাপাশি রাজ্য সরকারের পাল্টা তথ্য পেশ, এই জোড়া অস্ত্রেই মুকুলের মোকাবিলা করতে চাইছে শাসক পক্ষ। আর মুকুলও জানিয়ে দিয়েছিলেন, আইনি লড়াইয়ের জন্য তিনি প্রস্তুত । তাই আজ ফোনে আড়ি পাতার প্রশ্নে মামলা করে রাজ্য সরকারের দিকে আবার আঘাত আনলেন তিনি ।
মুকুলের সমাবেশের পরে শুক্রবারই স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য নবান্নে বলেছিলেন, ‘বিশ্ববাংলা’ ব্র্যান্ড ও লোগো পুরোপুরি সরকারের সম্পত্তি’। সেই বক্তব্যেরই সমর্থনে এ দিন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের সচিব রাজীব সিংহকে পাশে নিয়ে অত্রিবাবু ফের বলেছেন, ‘বিশ্ববাংলা একটি সরকারি সংস্থা। মুখ্যমন্ত্রী লোগো তৈরি করে সরকারকে ব্যবহার করতে দিয়েছেন’।
রাজীব জানান, ‘বিশ্ববাংলা মার্কেটিং কর্পোরেশন’ ২০১৪-এর ৩১ ডিসেম্বর নথিভুক্ত হয়েছে। তিন জন সরকারি আধিকারিক এর শেয়ার হোল্ডার। তাঁদের নামেই ১০০% ভাগ শেয়ার রয়েছে। এমনকী, সংস্থা খুলতে যে মূলধন লাগে, তা-ও দিয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতর। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের সচিব রাজীব, বিশেষ সচিব মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় ও অতিরিক্ত অধিকর্তা সুবলচন্দ্র পাঁজার নামে ওই কর্পোরেশনের শেয়ার রয়েছে। এর বাইরেও হর্ষবর্ধন নেওটিয়া ও রুদ্র চট্টোপাধ্যায় নামে দু’জনের নাম রয়েছে সরকারি নথিতে।রাজীব জানান, ওই দু’জন ‘নন এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর’, সরকারের মনোনীত। তাঁদের নামে কোনও শেয়ার নেই ।
বি জে পি-র তরফে নথি দেখিয়ে অব্শ্য় বলা হচ্ছে, অভিষেকের নামে ২০১৩-এর ২৬ নভেম্বর ‘বিশ্ববাংলা’ নথিভুক্ত হয়েছিল । এটা কি মিথ্যে ?
রাজীবের বক্তব্য, ‘বিশ্ববাংলা-র লোগো মুখ্যমন্ত্রী তৈরি করেছেন । হতে পারে, তখন ওঁর লোক বা পাশের লোক কেউ নিজের নামে আবেদন করেছিলেন । কিন্তু ২০১৪ সালে উনি (মুখ্যমন্ত্রী) চুক্তি করে আমাদের দিয়েছেন । যেখানে তিনি লোগের স্রষ্টা, আমরা ব্যবহারকারী’। ওই চুক্তির পরেই সরকার রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করে বলে রাজীবের দাবি । তিনি জানান, ‘আবেদনের সময় রেজিস্ট্রি অব ট্রেড মার্ক থেকে আমাদের বলা হয়, ৬ মাস আগে এবং এক মাস আগে দু’টো আবেদনপত্র জমা পড়েছে। তার পরে অভিযেক ওই দু’টি আবেদন প্রত্যাহার করে নেন। রেজিস্ট্রি অব ট্রেড মার্কস তা গ্রহণও করে নিয়েছে’।
সরকারের বক্তব্য শুনে দিল্লি থেকে মুকুলের প্রতিক্রিয়া, ‘আইনি নোটিসের কথা বলা হচ্ছে। আইনের লড়াই আমিও আইনের পথে লড়ব’। তাঁর প্রশ্ন, ‘ওয়েবসাইটে পেটেন্ট খোঁজ নিলে দেখা যাবে, গত কালের তারিখেও ‘বিশ্ববাংলা’র মালিকানা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত জানানো নেই। ‘বিশ্ববাংলা’ প্রথম নথিভুক্ত হয়েছিল ২০১৩ সালে । আর ওঁরা ২০১৪ সালের একটা চুক্তির কথা বলছেন। তা হলে মাঝের সময়টা কার হাতে ছিল বিশ্ববাংলা’? বিশদে এখন আর কিছু বলতে চাই না জানিয়ে মুকুলের কটাক্ষ, ‘অত্রি ভট্টাচার্য বড় মাপের আমলা । বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে যারা ডুবিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম। এ বার উনি এই সরকারকে ধরেছেন’ ।