জনতা দল (ইউ)-এর নেতৃত্ব ও প্রতীক ‘তির’ চিহ্ন নীতীশের, জানাল কমিশন

নয়াদিল্লি, ১৭ নভেম্বর ( হি.স.): জনতা দল (ইউ)-এর দলের মালিকানা নিয়ে শেষ হাসি হাসলেন নীতীশকুমারই। জনতা দল (ইউ)-এর নেতৃত্বের প্রশ্নে তাঁর পক্ষেই রায় দিল নির্বাচন কমিশন। প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা শারদ যাদব দলের নাম ও নির্বাচনী প্রতীকের ওপর অধিকার করেছিলেন। কিন্তু শুক্রবার তা নাকচ করে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন জেডি (ইউ)-কেই স্বীকৃতি দিল কমিশন।
গত জুলাইয়ে আরজেডি, কংগ্রেসের সঙ্গ ছেড়ে বিজেপির হাত ধরাকে কেন্দ্র করে তীব্র মতপার্থক্যের জেরে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় নীতীশ, শারদের। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব দখলে দুজনে লড়াইয়ে নামেন। এই অবস্থায় আজ নয়াদিল্লি থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন কমিশন জানিয়েদিল মুখ্যমন্ত্রীই ওই দলের ‘মালিক’৷ ফলে অনুগামীকে দিয়ে দলে কর্তৃত্ব পাওয়ার যে চেষ্টা করেছিলেন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, তা ধাক্কা খেল৷
শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়৷ শাসক দলের মালিকানা নিয়ে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়৷ এক্ষেত্রে শাসক দলের নাম সংযুক্ত জনতা দল বা জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)৷ আর সেই দলের নেতা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারকেই ওই দলের বৈধ সভাপতি বলে স্বীকৃতিও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ জেডিইউ-এর প্রতীক ‘তির’ চিহ্ন এখন থেকে তাঁর দখলেই থাকবে৷ কারণ, তাঁর দিকেই দলের সংখ্যাগুরু অংশ রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে কমিশনের তরফে৷
প্রসঙ্গত, ছোটুভাই অমরসং ভাসাভা নামে এক জেডিইউ নেতা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়ে দলে নীতিশ কুমারের কতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন৷ দলের এক বৈঠকের কথা উল্লেখ করে দাবি করেছিলেন তিনিই বর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি৷ তাই দলের এক্সিকিউটিভ কমিটি নতুন সভাপতি বাছাই না হওয়া পর্যন্ত তাঁকেই দায়িত্ব দিয়েছে বলে কমিশনের কাছে তিনি দাবি করেন৷ ওই আবেদনে কমিশনে জানানো হয়, নীতিশ দলের নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে বিহারে মহাজোট ভেঙে দেয়৷ তার পর বিজেপির সঙ্গে হাত মেলায়৷তাই এক্সিকিউটিভ কমিটি এই সিদ্ধান্ত নেয়৷ তিনি ও তাঁর দিকে থাকা জেডিইউ নেতা-কর্মীদের বৈধ বলে ঘোষণা করার দাবি তিনি কমিশনের কাছে জানান৷
আবেদন ছোটুভাই করলেও আদতে এর পিছনে মদত ছিল শরদ যাদবের৷ জেডিইউ-এর অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নীতিশের বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানের বিরোধিতা করেছিলেন৷ তিনি প্রকাশ্যে এ নিয়ে উষ্মাও প্রকাশ করেছিলেন৷ দলের সংখ্যা গরিষ্ঠ অংশ তাঁর পক্ষেই রয়েছেন বলেও দাবি করেছিলেন৷ তাই তাঁর হয়ে ছোটুভাই দলের স্বত্ত্ব ও প্রতীকের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন৷ তাঁদের হয়ে কমিশনে সওয়াল করেন কংগ্রেসের বর্ষীয়ান আইনজীবী নেতা কপিল সিব্বল৷ এর পর সবপক্ষের দাবিদাওয়া খতিয়ে দেখে শুক্রবার এই রায় দিয়েছে নির্বাচন৷ যা নীতিশ কুমারের পক্ষে যথেষ্ট স্বস্তিদায়ক৷ একই সঙ্গে কমিশনের সিদ্ধান্ত কার্যত প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল বর্ষীয়ান রাজনীতিক শরদ যাদবের রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে৷
যদিও রাজনৈতিক দলের দখলদারি নিয়ে এই টানাপোড়েন নতুন নয়৷ এ বছরের গোড়াতেই এ নিয়ে একপ্রস্থ টানাপোড়েন দেখা গিয়েছে উত্তরপ্রদেশে৷ সাইকেলের দখল নিয়ে বাপ-ছেলের লড়াই সেবার সরগরম হয়ে উঠেছিল দেশের রাজনীতি৷ শেষপর্যন্ত জয় হয়েছিল অখিলেশ যাদবের৷ বাবা মুলায়মকে হারিয়ে সমাজবাদী পার্টির কতৃত্ব ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন টিপু৷ এআইএডিএমকে নিয়েও একই টানাপোড়েন হয়েছিল জয়ললিতার মৃত্যুর পর৷ এবার সেই তালিকায় ঢুকে পড়ল জেডিইউ৷