নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ নভেম্বর৷৷ মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে শিক্ষা৷ এই মূল্যবান সম্পদকে কেউ চুরি করতে পারেনা, বেচা-কেনা করতে পারেনা৷ এমনকি হস্তান্তরও করা যায়না৷ রাজ্য সরকার এ রাজ্যে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে৷ আজ সোনামুড়া মহকুমার উত্তর তৈবান্দাল দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের নবনির্মিত দ্বিতল ভবনের দ্বারোদঘাটন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ তিনি বলেন, ভারতবর্ষের মধ্যে ত্রিপুরাই একটি রাজ্য যেখানে রাজ্য সরকার বাজেটে শিক্ষার জন্য সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখে৷ চলতি অর্থবর্ষে বাজেটে শিক্ষার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র শতকরা আড়াই থেকে তিন টাকা৷ রাজ্য সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবার উপরও অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নতুন নতুন হাসপাতাল, সুকল, কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা বিদ্যালয়ের জন্য নতুন নতুন পাকাবাড়ী তৈরী করে সেখানে প্রয়োজনীয় শিক্ষক দিচ্ছি, বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে, বিজ্ঞান সম্মত সৌচাগার তৈরী করা হচ্ছে এবং বিদ্যালয়ের জন্য খেলার মাঠও তৈরি করা হচ্ছে৷ বিদ্যালয় পাকাবাড়ী কিনা সেটা বড় কথা নয়, আসল হচ্ছে লেখাপড়ার পরিবেশ -পরিমন্ডল তৈরি করা৷ তাই সুকলে পঠন পাঠন যাতে ভালোভাবে হয় তার জন্য শিক্ষকদের আন্তরিকভাবে পাঠদান করতে হবে৷ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিজের সন্তানের মতো যত্ন করে সুশিক্ষা প্রদান করতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের রাজ্যের প্রতিটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে পাঠ্য পুস্তক সরবরাহ করা হচ্ছে৷ নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত গরিব ছাত্রছাত্রীদেরও বই কিনে দেওয়া হচ্ছে৷ গত বছর থেকেই বার্ষিক ফল ঘোষণার সাথে সাথেই পরবর্তী ক্লাসের জন্য বইও তুলে দেওয়া হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের হাতে৷ আমরা শিক্ষার জন্য যে সুযোগ প্রদান করছি ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যে সে সুযোগ নেই৷ শুধু তাই নয়, এখন রাজ্যে সুকল স্তর থেকে কলেজ স্তর পর্যন্ত পড়াশুনা করতে কোনো বেতন দিতে হয়না৷ ফলে রাজ্যের গরিব জুমিয়া পরিবারের সন্তানরাও এখন বিনা বেতনে কলেজ পর্যন্ত পড়াশুনা করতে পারছে৷ এছাড়াও সুকল থেকে কলেজস্তর পর্যন্ত নানা রকমের স্টাইপেন্ডও দেওয়া হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার রাজ্যে শিক্ষার যে সুযোগগুলি প্রদান করছে এর সুযোগ অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে ছাত্রছাত্রীদের৷ ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষক-অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, শিক্ষার এসব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কমপক্ষে ৫০ নম্বর পেয়ে ছাত্রছাত্রীরা যাতে পাশ করতে পারে তার জন্য শিক্ষক অভিভাবকদের সচেষ্ট হতে হবে৷ এর বেশী পেলে তো আরো আনন্দের বিষয়৷ ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যায় কিনা তার খোঁজখবর রাখতে হবে৷ পরীক্ষায় কম নম্বর পেলে অভিভাবকদের বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথাও বলতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভালো পড়াশুনা শুধু বেশী নম্বর পাওয়া নয়, আমরা চাইছি ছেলেমেয়েরা মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক৷ তার পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধূলা করবে, গান গাইবে, নাটক করবে, ছবি আঁকবে এবং শরীর চর্চাও করবে৷ এইসব কাজের জন্য তাদের উৎসাহিত করার জন্যও মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষক-অভিভাবকদের পরামর্শ দেন৷ তিনি আরও বলেন, শিক্ষা আমাদের চরিত্র গঠনে সাহায্য করে৷ পাশাপাশি তিনি ছাত্রছাত্রীদের আবশ্যিক কতগুলি সদগুণের অধিকারী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ছাত্রছাত্রীরা সর্বদা সত্য কথা বলবে, মিথ্যার আশ্রয় নেবেনা, কারোর ক্ষতি করবেনা, বয়োজ্যেষ্ঠদের শ্রদ্ধা করবে, সমবয়সীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং ছোটদের ভালোবাসবে৷ তারা জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে বিপন্নদের পাশে দাঁড়াবে৷ তারা নিজ গ্রাম, শহর, রাজ্য ও দেশকে ভালোবাসে৷ নিজের ছেলেমেয়েদের এইসদগুণগুলির শিক্ষা দিতে মা-কেই প্রথম দায়িত্ব নিতে হবে৷ ছেলেমেয়েদের মানুষের মতো মানুষ গরে গড়ে তুলতে হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষিকাদেরও তাদের উপর নজর রাখতে হবে৷ ছোটবেলা থেকেই এই সদগুণগুলির শিক্ষা দিতে হবে৷ কারণ চরিত্র গঠনও এক প্রকার শিক্ষা৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপনাদের ছেলেমেয়েরা হল দেশের সম্পদ৷ তারা যদি সৎ ও ভালো হয় তাহলে আপনাদের পাশাপাশি রাজ্যের মঙ্গল এবং দেশের জন্যও মঙ্গল৷ আমাদের রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে এ রকমই একটা পরিমন্ড গড়ে তোলা হয়েছে৷ কিন্তু এটাকে নষ্ট করার একটা চক্রান্ত চলছে৷ সন্ত্রাসবাদীদের বাঁধানো ৮০ সালের দাঙ্গায় জাতি-উপজাতি উভয় অংশের জনগণই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন৷ বর্তমানে এই পরিস্থিতির ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে৷ রাজ্যে শান্তি ফিরে এসেছে৷ হিন্দু-মুসলীম-খ্রীষ্টান-বোদ্ধ সবাই মিলেমিশে উৎসবে আনন্দ উবভোগ করছেন৷ ধর্ম যার যার উৎসব সবার এই আহ্বানকে সামনে রেখেই রাজ্যে বর্তমানে শান্তির পরিবেশ গড়ে উঠেছে৷ কিন্তু এটাকে আবারও নষ্ট করার একটা চক্রান্ত চলছে৷ ত্রিপুরা রাজ্যকে ভাগ করার ষড়যন্ত্র চলছে৷ আলাদা রাজ্যের অবাস্তব দাবীকে উসকে দিয়ে উপজাতিদের নানাভাবে বিভ্রান্ত করছে একটা অশুভ শক্তি৷ রাজ্যের শান্তি-সম্প্রীতি ঐক্য উন্নয়ন ভালো লাগছেনা বলেই এই অশুভ শক্তি সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ঘৃণ্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে৷ তাদের উদ্দেড্য হল রাজ্যের শান্তির পরিবেশকে বিঘ্নিত করা৷ আপানারা অতীতে এই প্রকারের অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবারও ঐ অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করুন৷ তাদেরকে জনবিচ্ছিন্ন করে রাজ্যে শান্তি-সম্প্রীতিকে অক্ষুন্ন রাখার জন্য সবাইকে সতর্ক আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী৷
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে ত্রিপুরা উবপজাতি এলাকা স্ব-শাসিত জেলা পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য পরীক্ষিৎ মুড়াসিং বলেন, তৈবান্দাল এলাকায় বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রগতি ঘটেছে, বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলেই এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সহ যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে৷ কিন্তু কিছু অশুভ শক্তি এই উন্নয়নমূলক কাজে ব্যাঘাত ঘটাবার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ এরা জাতি-উপজাতির মধ্যে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রয়াস চালাচ্ছে৷ তাই এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতিকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সকলকেই সচেষ্ট থাকতে হবে৷ অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিপাহীজলার জেলা শিক্ষা আধিকারিক হাবুল লোধ, মোহনভোগ ব্লক উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান কুঞ্জলীলা মুড়াসিং এবং পূর্ত দপ্তরের মুখ্যবাস্তুকার৷
উল্লেখ্য, ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনে শ্রেণীকক্ষ রয়েছে ১৬টি, স্টাফ রুম ২টি, কম্পিউটার রুম ১টি, ল্যাবরেটরি কক্ষ ৩টি, ছাত্রছাত্রীদের জন্য কমন রুম রয়েছে ২টি, রান্নাঘর ১টি এবং হলঘর রয়েছে ১টি৷