ইস্যু অভিযোগ ও স্পষ্টিকরণ, পিঠ বাঁচাতে সাফাই দিয়ে কার্য্যত লেজেগোবরে রাজ্য সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ অক্টোবর৷৷ পিঠ বাঁচাতে সাফাই দিতে গিয়ে কার্য্যত লেজেগোবরে হয়েছে রাজ্য সরকার৷ ‘সরকারের ক্রিয়াকলাপ ঃ কিছু অভিযোগ এবং তার বাস্তবতা’ এই শিরোনামে সোমবার সরকারি পোর্টালে রাজ্য সরকার বিভিন্ন অভিযোগের যে স্পষ্টিকরণ দিয়েছে তাতে বিতর্ক দেখা দিয়েছে৷ একাধিক বিষয়ে অভিযোগের স্পষ্টিকরণ সম্পূর্ণভাবে দেয়নি রাজ্য সরকার৷ ফলে, ঐ সমস্ত অভিযোগ নিয়ে রাজ্য সরকারের নিরবতা কিংবা কৌশলে তা এড়িয়ে যাওয়া যথেষ্ট সন্দেহজনক বলেই ধারণা করা হচ্ছে৷
অভিযোগে বিশালগড় ব্লকের ২কোটি ২০ লক্ষ টাকার ঘোটালার কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ তাতে ব্লকের প্রাক্তন বিডিও বিমল চক্রবর্তী এবং ১২ জন কর্মচারী অভিযুক্ত৷ বিডিও শ্রী চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ট এবং ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক অমল চক্রবর্তী তাঁর বড় ভাই বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে৷ এই অভিযোগের স্পষ্টিকরণে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার৷ পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে৷ কিন্তু প্রশ্ণ উঠেছে, বিমল চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ট, এ বিষয়ে কোন স্পষ্টিকরণ দেওয়া হয়নি৷
অপর আরেকটি অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, রূপাইছড়ি ব্লকে ১৪ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে৷ অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী একই কাজ পৃথক সংস্থা সম্পন্ন করেছে৷ এই অভিযোগের স্পষ্টিকরণে উল্লেখ, নির্দিষ্ট সংবাদের ভিত্তিতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ পৃথক অডিট করা হয়েছে৷ অডিট দপ্তর রূপাইছড়ির ব্লকের ক্ষেত্রে ২২ টি পর্যবেক্ষণ এবং গ্রাম পঞ্চায়েত ও ভিলেজ কমিটিগুলির ক্ষেত্রে ১২১ টি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে৷ ব্লকের বিরুদ্ধে ২২ টি পর্যবেক্ষণের মধ্যে ১৭ টি নিস্পত্তি হয়েছে৷ কিন্তু, বাকি ৫ টি পর্যবেক্ষণের বিষয়ে রাজ্য সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে তা স্পষ্টিকরণে উল্লেখ করা হয়নি৷ এদিকে, ভিলেজ কমিটিগুলির ক্ষেত্রে অডিট পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাজ্য সরকার নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে৷ ব্লকের ৫ টি অডিট পর্যবেক্ষণ নিয়ে গোপনীয়তায় সন্দেহ দেখা দিয়েছে৷
পেঁচারথল ব্লকে ১২ কোটি টাকার দুর্নীতি করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ তা বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে রাজ্য সরকার৷ সাথে রেগার কর্মীদের মজুরি আত্মসাৎ এবং এর ফলে তাদের বিক্ষোভ ও ঐ বিক্ষোভকে ঘিরে পুলিশের সাথে খন্ডযুদ্ধ হয়েছে বলে অভিযোগটি বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে রাজ্য সরকার৷ এই অভিযোগগুলির স্পষ্টিকরণে রাজ্য সরকার কেবলমাত্র পেঁচারথল ব্লকের দুর্নীতির বিষয়টির প্রশাসনিক ব্যবস্থা কি নেওয়া হয়েছে তা জানিয়েছে৷ দুর্নীতির সংবাদের খবরের ভিত্তিতে রাজ্য সরকার রূপাইছড়ি এবং পেঁচারথল ব্লকে স্পেশাল অডিট করিয়েছে৷ সেই অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে ঊনকোটি জেলা শাসক আত্মসাৎ করা অর্থ পুনরুদ্ধার এবং অর্থ আদায় করা সম্ভব না হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করারও নির্দেশ দিয়েছেন৷ এখন প্রশ্ণ উঠেছে, কারা সেই অর্থ আত্মসাৎ করেছে এবং কতদিনের মধ্যে জেলা শাসকের নির্দেশ পালন করা হবে সেই বিষয়ে কোন কিছুই উল্লেখ নেই স্পষ্টিকরণে৷ আদৌ সেই নির্দেশ কার্য্যকর হয়েছে কিনা তাও জানায়নি রাজ্য সরকার৷ কারণ, সরকারি যেকোন নির্দেশ কার্য্যকরের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়৷ এক্ষেত্রে এই নির্দেশ কার্য্যকরে কতদিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তাও স্পষ্টিকরণে স্পষ্ট হয়নি৷ সাথে রেগাকর্মীদের মজুরী আত্মসাৎ এবং এনিয়ে তাদের বিক্ষোভ এবং পুলিশের সাথে খন্ডযুদ্ধের বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার নিরবতা অবলম্বন করেছে৷ স্বাভাবিকভাবেই যেকোন অভিযোগের ক্ষেত্রে নিরবতা পালন তার সত্যতায় শিলমোহর বলেই মনে করছে তথ্যভিজ্ঞ মহল৷
হিমাচলের কোম্পানি থেকে ভেজাল ঔষুধ রাজ্য সরকার ক্রয় করেছে, এই অভিযোগও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে৷ সাথে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সহ ১০ জন আধিকারিকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ এই অভিযোগের স্পষ্টিকরণে বলা হয়েছে, হিমাচলের কোম্পানি বর্ধমান ফার্মার বিরুদ্ধে ভেজাল ঔষুধ সরবরাহের সত্যতা পাওয়ার পর স্বাস্থ্য দপ্তর সেখান থেকে ঔষুধ ক্রয় করা বন্ধ করে দিয়েছে৷ সাথে বর্ধমান ফার্মার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে৷ পশ্চিম আগরতলা থানায় এই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হয়৷ এই মামলার তদন্তভার সিআইডির হাতে দেওয়া হয়েছে৷ তদন্ত শুরু করে সিআইডি সাক্ষির বয়ান লিপিবদ্ধ করেছে৷ স্পেশাল কোর্টে বর্ধমান ফার্মার বিরুদ্ধে শুনানি শুরু হয়৷ বিচারক বর্ধমান ফার্মার মালিক এম সি জৈন এবং মিনাক্ষ্মি জৈনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে৷ এই দুর্নীতির সাথে যুক্ত সরকারী আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ ডা দিব্যেন্দু বিকাশ দাস এবং কাঞ্চন সিনহার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ ডা এসএম আলি ২০১৪ সালে অবসরে যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ প্রশ্ণ উঠেছে, দুর্নীতি করে অবসরে গেলে এমন আধিকারিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়না, এই যুক্তি আইনের খাতায় কোথাও লেখা রয়েছে কিনা৷ এরই সাথে আরো প্রশ্ণ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সহ বাকি ৬ আধিকারিকের বিরুদ্ধে একই মামলায় কি পরিনতি হয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে কিনা এবং যদি সত্যতা পাওয়া গিয়ে থাকে তাহলে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্টিকরণে কোন কিছুই উল্লেখ করা হয়নি৷
তাতে দেখা যাচ্ছে, রাজ্য সরকার একাধিক অভিযোগের কোন স্পষ্টিকরণ দেয়নি৷ প্রশ্ণ উঠেছে, এই অভিযোগগুলি নিয়ে রাজ্য সরকার কি সর্বদাই গোপনীয়তা অবলম্বন করবে, নাকি এই সমস্ত বিষয়ে নিরবতা অভিযোগের সত্যতা প্রমান করছে৷ তাতে স্পষ্ট, পিঠ বাঁচাতে গিয়ে রাজ্য সরকার কার্য্যত লেজেগোবরে হয়েছে৷
মঙ্গলবার মহাকরণে তথ্যমন্ত্রী ভানুলাল সাহার কাছে জানতে চাওয়া হয়, হঠাৎ এধরনের স্পষ্টিকরণের কি প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে৷ জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দল, একাংশ সংবাদ মাধ্যম এবং স্যোসাল মিডিয়ায় প্রকৃত ঘটনার বিকৃত করে অসত্য তথ্য প্রচার করা হয়৷ তাই, অভিযোগগুলির স্পষ্টিকরণ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে৷ তাতে প্রশ্ণ করা হয়, একাধিক বিষয়ে স্পষ্টিকরণ কেন দেওয়া হয়নি৷ এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী সন্তোষজনক কোন উত্তর দেননি৷ বরং দাবি করেন, মতাদর্শগত ভাবে কমিউনিষ্টদের সাথে লড়াই করা সম্ভব নয়৷ তাই তাদেরকে অপবাদ দিয়ে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চলছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *