উচ্ছ্বাসের মাঝেও নিরুৎসাহী রাজ্যের মন্ত্রী-সাংসদরা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ অক্টোবর৷৷ উচ্ছ্বাসের মাঝেও নিরুৎসাহি দেখিয়েছে পূর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরী, পরিবহন মন্ত্রী মানিক দে, সাংসদ জীতেন্দ্র চৌধুরী এবং সাংসদ শংকর প্রসাদ দত্তকে৷ রাজধানী এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু, এক আনন্দঘন মুহুর্ত মানলেও রেলের কাজকর্মে তাঁরা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন৷ তাঁদের অভিযোগ, এখন রেলের কাজকর্মে শ্লথতা এসেছে৷ এরই সাথে রেল রাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন দাবি দাওয়া পেশ করেছেন৷ অবশ্য রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের অভিযোগ সম্পর্কে একমত নন বলে জানিয়েছেন৷ দাবি দাওয়া পূরণের বিষয়ে রাজ্যের দুই মন্ত্রী ও দুই সাংসদকে রেলমন্ত্রী পীয়ূষ গোয়েলের দৃষ্টিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন৷

এদিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা রাজধানী এক্সপ্রেস সপ্তাহে ১ দিনের পরিবর্তে তিনদিন চালানো, আগরতলা থেকে ধর্মনগরের মধ্যবর্তী আরেকটি স্থানে ট্রেনটি যাতে থামে তার ব্যবস্থা করা, ত্রিপুরায় রেলের একটি ডিভিশন চালু করা এবং ত্রিপুরার যুবক যুবতীদের রেলে যাতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয় তার দাবি জানান৷ এদিন পূর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরী রাজ্যের বিভিন্ন জেলা সফরে রাজধানী এক্সপ্রেসে স্টপেজ দেওয়ার দাবি জানান৷ তিনি আনন্দবিহারের পরিবর্তে নয়াদিল্লি স্টেশনের সাথে আগরতলা থেকে চলা রাজধানী এক্সপ্রেসটিকে যুক্ত করার দাবি জানিয়ে বলেন, দেশের যতগুলি রাজধানী এক্সপ্রেস চলে এর সবগুলি নয়াদিল্লি স্টেশনের সাথে যুক্ত৷ তাহলে ত্রিপুরার বেলায় এর অন্যথা হবে কেন৷ তিনি কৈলাশহর-কমলপুর-খোয়াই হয়ে বিকল্প রেল লাইন চালু করার ব্যাখ্যা করে বলেন, বিষয়টি হয়েগেলে সবকটি জেলা সদরের সঙ্গেই রেল লাইন যুক্ত হয়ে যাবে৷ তিনি দ্রুত সাব্রুম পর্যন্ত রেল পৌঁছে দেবার দাবি জানান৷ পরিবহন মন্ত্রী মানিক দে গৌয়াহাটি এবং কলকাতার মধ্যে প্রতিদিন ট্রেন চালানোর দাবি জানান৷ পাশাপাশি, যেহেতু উদয়পুর থেকে গর্জি পর্যন্ত রেল লাইনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে, তাই অবিলম্বে গর্জি পর্যন্ত ট্রেন চালানোর জন্য রেলমন্ত্রীর কাছে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন৷ সাথে তিনি এও বলেন, যাত্রীদের বক্তব্য ভাড়া কিছুটা বেশি হয়েছে৷ তাই রাজধানী এক্সপ্রেসের ভাড়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার জন্যও তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন৷ আজকের দিনটি স্মরনীয় হিসাবে অভিহিত করে তিনি বলেন, দীর্ঘ কয়েক দশকের লড়াইয়ের ফসল ফলেছে এখন৷ রাজ্য থেকে নির্বাচিত সাংসদ জীতেন্দ্র চৌধুরী তাঁর ভাষণে দিল্লির পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আগরতলা থেকে সরাসরি রেল পরিষেবা চালু করার দাবি জানিয়েছেন৷ সাংসদ শংকর প্রসাদ দত্ত বলেন, ত্রিপুরার জনগনের দীর্ঘ লড়াইয়ের ফসল হিসাবেই রাজ্যে রেল এসেছে৷

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজেন গোহাই রাজ্য থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগের খন্ডন করেন এবং দাবি দাওয়া পূরণে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর দৃষ্টিতে বিষয়গুলি নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন৷ তিনি বলেন, গত তিন বছরে উত্তর পূর্বঞ্চলের রাজ্য গুলির মধ্যে রেলওয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে ত্রিপুরায়৷ তিনি কটাক্ষ করে বলেন, আগে সবকিছুই কথায় সীমিত ছিল৷ কাজের কাজ কিছুই হয়নি৷ কিন্তু এখন সবরাজ্যে সমানভাবে কাজ করা হচ্ছে৷ আগরতলা থেকে সাব্রুম পর্যন্ত অবশিষ্ট রেললাইনের কাজে শ্লথতার অভিযোগ তিনি পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছেন৷ রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগরতলা-সাব্রুম রেল লাইনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৩ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ ২০১৮ সাল নাগাদ বিলোনিয়া এবং ২০১৯ এর মধ্যে সাব্রুম পর্যন্ত রেল পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে৷ তাঁর কথায়, রেলের কাজে টাকার কোন অভাব নেই৷ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত প্রজেক্টের কাজই দ্রুত গতিতে শেষ করার জন্য আধিকারিকদের বলা হয়েছে৷ তাঁর দাবি, ২০১৯ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের সমস্ত রাজ্যের রাজধানীকেই ব্রডগেজ লাইনের সঙ্গে যুক্ত করা হবে৷

এদিন এই অনুষ্ঠানে বিধায়ক দিলীপ সরকার তাঁর ভাষণে রাজধানী এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রে আগরতলা থেকে ধর্মনগরের মাঝে আরেকটি স্টেশনের বাজ্যিক স্টপেজ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন৷