আন্দোলন মুখ্য নয়, দৃষ্টিভঙ্গীই আসল, তাই এখন রাজধানী এক্সপ্রেস ত্রিপুরায় ঃ রাজ্যপাল

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ অক্টোবর৷৷ রাজ্যে রেলের প্রসার বৃদ্ধির পেছনে আন্দোলনের ভূমিকাকে খাঁটো করে দেখছেন রাজ্যপাল তথাগত রায়৷ তাঁর মতে, সবকিছুর জন্য আন্দোলন মুখ্য নয়, দৃষ্টিভঙ্গিই আসল৷ তিনি জোর গলায় দাবি করেন, স্বাধীনতার পর ৫২ বছরে যা হয়নি, তা মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে রাজধানীর মত এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করার ঘটনা মূলত কার্যকরী হয়েছে সেই দৃষ্টিভঙ্গীর জন্যই৷ এদিন, রাজধানী এক্সপ্রেসের সূচনা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাজ্য থেকে নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরা রেলের প্রসার বৃদ্ধির পেছনে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের সুফল বলে দাবি করায়, রাজ্যপাল তথাগত রায় তাদের সরাসরি সমালোচনায় মুখর হয়েছেন৷

এদিন রাজ্যপাল বলেন, আজকের এই পরিস্থিতিতে মিলিত হওয়ার ঘটনা এক অবিশ্বাস্য ব্যপার৷ বিশেষ করে ত্রিপুরায় রেল এসেছে সেটাই বিরাট ব্যপার৷ স্বাধীনতার পর ৫০ বছর সময় লেগেছে কুমারঘাট পর্যন্ত রেল আসতে৷ এরপর মাঝে দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর আগরতলা পর্যন্ত মিটার গেজে রেল এসেছে৷ কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে রাজধানী এক্সপ্রেসের মত ট্রেন আজ এখানে দাঁড়িয়ে আছে, তাতে তিনি ভীষন গর্ব বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন৷

এদিন তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানে একাধিক বক্তা রেল যোগাযোগের জন্য আন্দোলন হয়েছে বলে দাবি করেছেন৷ রাজ্যপালের মতে, আন্দোলন নিশ্চই ভূমিকা রাখে৷ কিন্তু, আন্দোলন সত্বেও ৫২ বছর সময় লেগেছে রাজ্যে রেল আসতে, কটাক্ষ করেন তিনি৷ তাঁর মতে, আন্দোলনের নিঃসন্দেহে ভূমিকা আছে৷ কিন্তু, আজকে রাজধানী এক্সপ্রেস আগরতলা স্টেশন থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছে, এই অভুতপূর্ব ঘটনার জন্য আন্দোলন মুখ্য নয়, দৃষ্টিভঙ্গিই আসল৷ তাঁর দাবি, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার যে দৃষ্টিভঙ্গিতে সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে দেখে, সেই দৃষ্টিভঙ্গি আগে আমরা কখনো দেখতে পাইনি৷ এই অঞ্চলের মানুষও দেশের অন্যান্য রাজ্যের মানুষের মতোই ভারতীয়৷ কিন্তু, এই চিন্তার প্রতিফলন এর আগে কখনো হয়নি৷ তিনি অনেকটা গর্বের সুরে বলেন, মাত্র কয়েকবছরের মধ্যেই রাজধানী এক্সপ্রেসের মত ট্রেন চালু করতে চলেছি৷ তা মূলত কার্যকরী হয়েছে সেই দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই৷
এদিন রাজ্যপাল বলেন, পূর্বোত্তরে পাহাড়ি এলাকায় রেলপথ নির্মাণ সহজ নয়৷ আঠারোমুড়া এবং বড়মুড়ার পর্বতশৃঙ্গ দিয়ে রেলপথ নির্মাণ করা খুবই কঠিন কাজ৷ কারণ, এ অঞ্চলের পাহাড় পাথরে ঘেরা নয়৷ ফলে, মাটি আলগা হয়ে যাওয়ার ঝঁুকি সবসময়ই থাকে৷ তাঁর মতে, এই কাজ কঠিন হলেও অসম্ভব ছিলনা৷ আগে এই কাজের জন্য কেন্দ্র সবুজ সংকেত দেয়নি৷ কিন্তু, এখন যেইমাত্র কেন্দ্র বা রাজনৈতিক দল সবুজ দিয়েছে, তখনই ভারতীয় রেলের প্রযুক্তিবিদরা এই কঠিন কাজ সম্ভব করে দেখিয়ে দিয়েছেন৷

এদিন তিনি রেলের কাজের শ্লথতা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলওয়ের মহা প্রবন্ধকের উদ্ধৃতি দিয়ে আশ্বস্ত করেছেন, যথাসময়ে সাব্রুম পর্যন্ত রেলের কাজ সমাপ্ত হবে৷ এদিকে, কর্মনিযুক্তির সুযোগ নিয়ে যে সমস্ত কথা হয়েছে, সেই বিষয় নিয়েও ফোঁড়ন কাটেন রাজ্যপাল৷ তাঁর বক্তব্য, রেলে কর্মনিযুক্তির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রেল এখন ত্রিপুরার জন্য গোটা দেশের দরজা খুলে দিয়েছে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরার প্রধান সমস্যা ছিল এই রাজ্য গোটা দেশের সাথে বিচ্ছিন্ন৷ কিন্তু, বিচ্ছিন্নতার এই অভিশাপ থেকে ব্রডগেজ রেল আজ এই রাজ্যকে মুক্ত করে দিয়েছে৷ ফলে তিনি আশা করেন, ত্রিপুরা রাজ্য এখন নতুনভাবে বিকশিত হবে৷ তিনি বলেন, এই রাজ্য এতদিন বিচ্ছিন্ন ছিল ঠিকই, কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদে সয়ম্বর ত্রিপুরা৷ অথচ, ওই সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ যথাযত ভাবে কাজে লাগানো যায়নি তার একটা কারণ হয়তোবা এই বিচ্ছিন্নতা৷ তাই, এখন রেল যে দরজা খুলে দিয়েছে তাতে ত্রিপুরার প্রাকৃতিক সম্পদ, পর্যটনকে ব্যবহার করে এই রাজ্য বিকশিত হবে৷ আর তাতেই আসল নিযুক্তির জায়গা তৈরি হবে বলে তিনি মনে করেন৷