১২০০০ অশিক্ষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৪ অক্টোবর৷৷ চাকুরীচ্যুত ১০৩২৩ জন শিক্ষকের অধিকাংশদের আবার অনিশ্চিয়তায় দিন কাটাতে হবে৷ শিক্ষকদের চাকুরী নিয়ে আদালত অবমাননার মামলায় সুপ্রিম কোর্ট আগামী ১৬ জানুয়ারী পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য করেছে৷ সাথে ১২০০০ অশিক্ষক পদে নিয়োগে স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছে৷ ফলে, ৩১ ডিসেম্বরের আগে চাকুরীচ্যুতদের শিক্ষকদের অশিক্ষক পদে চাকুরী পাওয়ার সম্ভাবনা আর রইল না৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ৩১ ডিসেম্বরের পর তাঁদের চাকুরী বাতিল হয়ে যাবে৷ স্বাভাবিকভাবেই নতুন বছরে তাঁদের পরিণতি কি হবে, এনিয়ে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ চাকুরীচ্যুত শিক্ষকরা৷ শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের নতুন করে কোন আশা দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন৷ তবে, তাঁরা যেন নিরাশ না হন, সে আবেদন রেখেছেন৷
এদিন মামলার শুনানি সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী মহাকরণে সাংবাদিকদের বলেন, রাজ্য সরকার আদালত অবমাননা করেছে তা আজ সুপ্রিম কোর্ট বলেনি৷ তবে, অশিক্ষক পদে নিয়োগের এক্তিয়ার রাজ্য সরকারের রয়েছে, সেকথা বলেছে৷ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আদালত জানতে চেয়েছে চাকুরী মামলায় সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল তা রাজ্য সরকার পালন করেছে কি না৷ তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে গত ৩১ মে’র মধ্যেই শিক্ষা অধিকার আইন অনুসারে নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে৷ সে মোতাবেক শিক্ষক নিয়োগে টিআরবিটি(টিচার্স রিক্রুটমেন্ট বোর্ড, ত্রিপুরা) প্রক্রিয়া শুরু করেছে৷ সেকথা হলফনামা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছি, এমনকি আদালত অবমাননা করেনি রাজ্য সরকার, সে কথাও বলেছি৷ এখন নতুন করে আবার সুপ্রিম কোর্টকে সমস্ত বিষয় জানানো হবে৷ আগামি ১৫ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে হলফনামা দিয়ে সমস্ত কিছু জানানো হবে৷
এদিন শিক্ষামন্ত্রী জানান, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত অস্নাতক শিক্ষক পদে ১৭৪ জন, ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত স্নাতক শিক্ষক পদে ১৪৫ জন, উচ্চ বুনিয়াদি স্তরে স্নাতক শিক্ষক পদে ১১৫০ জন এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষক পদে ৮৪১ জনের অফার ছাড়া হয়েছে৷ তাছাড়া, ২০১৬ সালে রাজ্যে টেট চালু হওয়ার পর প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত অস্নাতক শিক্ষক পদে ১০ জন, ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত স্নাতক শিক্ষক পদে ৫০৭ জন, উচ্চ বুনিয়াদী স্তরে স্নাতক শিক্ষক পদে ১০০৪ জন এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষক পদে ৫৩৪ জনকে অফার দেওয়া হয়েছে৷ এদিকে, শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বুনিয়াদী স্তরে স্নাতক শিক্ষক পদে আরও ১১৮৬ জনের অফার আগামী দুয়েক দিনের মধ্যো ছাড়া হবে৷ এদিন শিক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছেন, এবছর সম্ভবত নভেম্বরে আরো একবার টেট প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নেবে টিআরবিটি৷
তবে, ৩১ ডিসেম্বরের পর বিরাট সংখ্যক শিক্ষকের ঘাটতি দেখা দেবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গেছে৷ কারণ, শিক্ষা দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুসারে চাকুরীচ্যুত ১০৩২৩ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রায় ৫০০ জনের যোগ্যতা রয়েছে টেট দেওয়ার জন্য৷ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের মধ্যে যাঁদের যোগ্যতা রয়েছে, তাঁরা টেট দিয়ে চাকুরীতে বহাল থাকতে পারবেন৷ কিন্তু, বাকিদের জন্য ভাবতে হবে৷ ৩১ ডিসেম্বরের পর যে শিক্ষকের যে ঘাটতি দেখা দেবে, তার জন্য আদালতের শরনাপন্ন হওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে৷ এই উদ্ভুত পরিস্থিতির মোকাবিলা রাজ্য কিভাবে করবে তা আদালতের কাছে জানতে চাওয়া হবে৷ শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট আজ এই মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন আগামী বছরের জানুয়ারী মাসের ১৬ তারিখ ধার্য্য করেছে৷ তাই, চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের নতুন করে কোন আশা দিতে পারছি না৷ কিন্তু, তাঁরা যেন নিরাশ না হন, সেই আবেদন রাখছি৷
উল্লেখ্য, চড়িলামের এক যুবক দেবাশীষ পাল চৌধুরী অশিক্ষক পদে চাকুরীচ্যুতদের চাকুরী দেওয়া হচ্ছে, এই ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করেন৷ মামলাটি গ্রহণ করে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ৷ সেই মতো গত ১১ সেপ্ঢেম্বর দুই মাননীয় বিচারপতি আদর্শ কুমার গোয়েল ও উদয় উমেশ ললিত রাজ্যের মুখ্যসচিব, শিক্ষা দফতরের প্রধান সচিব ও অতিরিক্ত সবিচকে নোটিস ইস্যু করেন৷ এর পর আজ নিয়ে তিন দিন এই বিষয়ে শুনানি হয়েছে৷ সুপ্রিমকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের মাননীয় বিচারপতিদ্বয়ও দাখিল করা আবেদনের সঙ্গে সহমত পোষণ করে প্রথম শুনানিতে বলেন যে, গত ২৯ মার্চ সুপ্রিমকোর্ট যে রায় দিয়েছিল তার বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে যা আদালত অবমাননার শামিল৷ যার ফলে রাজ্য সরকারের তরফে নিযুক্ত স্ট্যান্ডিং কাউন্সিলের মাধ্যমে রাজ্যকে নোটিশ দেওয়ার আদেশ দেন মাননীয় বিচারপতিদ্বয়৷
অভিযোগ, প্রথমে হাইকোর্ট ও পরে সুপ্রিমকোর্টের রায়ে রাজ্যের ১০,৩২৩ জন বেআইনিভাবে নিযুক্ত শিক্ষকের চাকরি বাতিলের পর তাঁদের পুনরায় চাকরিতে বহাল রাখতে কৌশলে রাজ্য সরকার নতুন অশিক্ষক পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত আদালতের রায়কে পাশ কাটিয়ে চাকরি-হারাদের কৌশলে পুনরায় চাকরি পাইয়ে দেওয়াই মূল লক্ষ্য হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে৷