নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ অক্টোবর৷৷ চারবারের বন্যায় ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় বরাদ্দ অর্থে কুলাচ্ছে না৷ তাই এবার কেন্দ্রের কাছে অতিরিক্ত অর্থ চাওয়া হবে৷ সোমবার মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন রাজস্ব মন্ত্রী বাদল চৌধুরী৷
উল্লেখ্য, রাজ্যে ১৯ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের ফলে সমস্ত অংশই বন্যায় কম বেশি প্রভাবিত হয়েছে৷ তাই, সোমবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর পৌরোহিত্যে উদ্ভূত বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সভায় রাজস্বমন্ত্রী বাদল চৌধুরী সহ পূর্ত দপ্তর, কৃষি দপ্তর, রাজস্ব দপ্তরের পদস্থ আধিকারিগণ উপস্থিত ছিলেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বন্যা পরিস্থিতির সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা শেষে কেন্দ্রের কাছে অতিরিক্ত অর্থের সাহায্য চাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন৷ বৈঠক শেষে বিকেলে সাংবাদিকদের সাথে কথাবলার সময় রাজস্বমন্ত্রী বাদল চৌধুরী একথা জানিয়েছেন৷
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সমস্ত ত্রিপুরা রাজ্যে ১৯ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের ফলে সমস্ত অংশই বন্যায় কম বেশি প্রভাবিত হয়েছে৷ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এই বন্যায় সমস্ত জেলা মিলিয়ে মোট ১৩৯ টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে যার মধ্যে ৫৮৯৩ টি পরিবার আশ্রয় গ্রহণ করেছে৷ বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় এখন পর্যন্ত শতাধিক ত্রাণ শিবির বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় গ্রহণকারীদের খাবার, জল ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ প্রয়োজনীয় ঔষধপত্রাদি ও হ্যালোজেন টেবলেট বিতরণ করা হয়েছে এবং ত্রাণ শিবিরগুলিতে ব্লিচিং পাউডার স্প্রে করা হয়েছে৷
তিনি জানান, এবারের বন্যায় রাস্তাঘাট, কৃষিজমি ও মৎস্যচাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷ বিভিন্ন দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ যথাক্রমে পূর্ত দপ্তর ৯ কোটি টাকা, কৃষি দপ্তর ৮০ কোটি টাকা, মৎস্য দপ্তর ১২ কোটি টাকা এবং সেচ দপ্তরের ৫৫ কোটি টাকা৷ জেলাস্তরে ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ের কাজ শুরু হয়েছে৷ ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন সম্পন্ন হলে ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ জানা যাবে৷ বিভিন্ন জায়গায় ভূমিধবস হয়ে এবং গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে রাস্তা পরিস্কার করে যাতায়াতের উপযোগী করে তোলা হয়৷ আবার অনেক জায়গায় বন্যায় জলে ব্রীজের গোড়ার মাটি সরে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে৷ এগুলি দ্রুত সারাইয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ ডম্বুর জলাশয়ের জলস্ফীতির কারণে দুটি গেইট খুলে দেওয়া হয়েছিল৷ জলের লেভেল নামার পর একটা গেইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
রাজস্বমন্ত্রী শ্রী চৌধুরী জানান, এর আগে রাজো দুটো বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ যা অনুমান করা হয়েছিল তাতে কৃষির প্রায় ৩০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে৷ বিভিন্ন রাস্তা, সেতু এবং অন্যান্য বিষয়ের ক্ষতি হয়েছিল প্রায় ৩৮ কোটি টাকা৷ বিদ্যুৎ দপ্তরের ক্ষতি হয়েছিল প্রায় ২ কোটি টাকা৷ মৎস্যচাষে ক্ষতি হয়েছিল প্রায় ২৪ কোটি টাকা৷ সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের ক্ষতি হয়েছিল ৫০ কোটি টাকা৷
এদিন তিনি বলেন, আগে যে তিনবার বন্যা হয়েছে তখন কেন্দ্রের কাছে কোন সাহায্য চাওয়া হয়নি৷ কিন্তু, এবারের বন্যার পর দুর্যোগ মোকাবিলায় বরাদ্দ অর্থে ক্ষতিপূরণ দিতে কুলাচ্ছেনা৷ তিনি জানান, ৪/৫দিনের মদ্যে সমস্ত দপ্তরের কাছ থেকে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পুরো তথ্য মিলবে৷ এর পরেই এবছর চারবারের বন্যায় কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে সব মিলিয়ে কেন্দ্রের কাছে অতিরিক্ত অর্থের সাহায্য চাওয়া হবে৷ তিনি জানান, অতিরিক্ত তিনশ কোটি টাকা চাওয়া হতে পারে৷
মন্ত্রী আরোও জানান, জল সম্পদ দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নদীর জলের স্তর বিপদ সীমার অনেক নীচ দিয়ে বইছে৷ মানুষ এখন নিজ নিজ বাসস্থানে ফিরে যাচ্ছেন৷ আজ সন্ধ্যার মধ্যে আরও অনেকগুলি ত্রাণ শিবির বন্ধ হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷
2017-10-24