কলকাতা, ২৩ অক্টোবর (হি. স.): বিজেপি-বিরোধিতায় সিপিএমের পথ নিয়ে দলীয় নেতারা এখনও আতান্তরে ৷ বিজেপি এবং আরএসএসের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সব দলকে সঙ্গে নিয়েই তাঁরা লড়তে চান বলে এ বার জানিয়ে দিলেন প্রকাশ কারাট। আবার বৃহত্তর, ধর্মনিরপেক্ষ জোটের প্রবল প্রবক্তা, বাংলার নেতা গৌতম দেবের কাছ থেকে হঠাৎই এসেছে কংগ্রেসের সমালোচনা!
কার্ল মার্ক্সের জন্মের দ্বিশতবর্ষে মার্ক্সবাদের উপরে একটি সাধারণ সভায় যোগ দিতে হাওড়ায় গিয়েছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য কারাট। সেই সভার বাইরে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি এবং আরএসএসের বিভাজনমূলক রাজনীতির মোকাবিলায় বাম, গণতান্ত্রিক শক্তি একজোট হয়ে লড়াই করছে। আরও অন্যান্য সহযোগী দলও পাশে আছে। গণতান্ত্রিক শক্তির ফ্রন্ট গড়েই আমরা বিজেপি-র মোকাবিলা করব।’’
কারাট যখন কংগ্রেসের জন্য দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন না, সেই সময়েই সীতারাম ইয়েচুরি শিবিরের নেতা হয়েও খানিকটা উল্টো সুর গৌতমবাবুর! দলীয় মুখপত্রে নিবন্ধ লিখে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্য প্রদেশ কংগ্রেসকে সুবিধাবাদী ও বাগাড়ম্বরসর্বস্ব দল বলে তুলোধোনা করেছেন! তাঁর মন্তব্য, অধীর চৌধুরী-আব্দুল মান্নানদের ‘পাম্প দিয়ে’ তৃণমূলের বিরুদ্ধে ময়দানে নামানো হচ্ছে।
বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দোসর হিসাবে কংগ্রেসকে তাঁরা ‘অচ্ছুৎ’ মনে করছেন, এমন কোনও কথা বলেননি সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক। দেশ জু়ড়ে ক্রমশ প্রতাপ বাড়িয়ে চলা গেরুয়া শিবিরের মোকাবিলা করতে কংগ্রেসকে সঙ্গে নেওয়া হবে কি না, সেই প্রশ্নে এখন সিপিএমের অন্দরে বিতর্ক তুঙ্গে। পার্টি কংগ্রেসের দলিল তৈরি উপলক্ষে সাম্প্রতিক কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় দলীয় নেতারা ধর্মনিরপেক্ষ জোটের পক্ষে সওয়াল করেছেন। এই পরিস্থিতিতে বাংলায় এসে কংগ্রেসকে সঙ্গে নেওয়ার সম্ভাবনা কারাট যে এক কথায় খারিজ করে দেননি, তাকেই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটে বামেরা কংগ্রেসকে সহযোদ্ধা করবে কি না, সেই সিদ্ধান্তের ভার রাজ্য কমিটির উপরে ছেড়ে দিয়েছেন কারাট। হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসের আগে তাঁর এ বারের বক্তব্যকে নমনীয়তার ইঙ্গিত হিসাবেই দেখছে দলের একাংশ। তবে বিজেপি-র বিরুদ্ধে অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিলেও কারাট আলাদা করে দিয়েছেন তৃণমূলকে। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি-র মতোই পশ্চিমবঙ্গে আমাদের লড়াই তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দু’টো দলের বিরুদ্ধেই আমরা লড়ব।’’
আবার গৌতমবাবুর বক্তব্য, স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়ে সনিয়া গান্ধীর বৈঠক আলো করে বসে থাকছেন! অন্য দিকে প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতো নেতারা হাইকম্যান্ডকে বোঝাচ্ছেন সিপিএমের দিকে একেবারেই নয়, জোট করলে তৃণমূলের দিকে যাওয়ার জন্য!
এর পরে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কি কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াই হবে? কারাটের জবাব, ‘‘নির্বাচনী কৌশল নির্বাচনের সময়ে তৈরি হবে। এখন গণতান্ত্রিক শক্তি একসঙ্গেই লড়াই করছে।’’ বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটে বামেরা কি কংগ্রেসের হাত ধরবে? কারাট বলেন, ‘‘রাজ্যের পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজ্য কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। লড়াইয়ের ময়দানে বামপন্থীরা আছে। যখনই পঞ্চায়েত ভোট হোক, আমরা তৈরি।’’
কারাটদের হাতে সদ্য ভর্ৎসনার জেরেই গৌতমবাবুর অন্য সুর কি না, প্রশ্ন উঠেছে দলেই!
2017-10-23