কলকাতা, ১ অক্টোবর (হি.স.) : দিল্লী থেকে পশ্চিমবঙ্গের সক্রিয় জেহাদি গোষ্ঠীগুলির কাজকর্ম জানতে অনেক ক্ষেত্রেই অসুবিধায় পড়ছে দিল্লি পুলিশ। অনেক খবরই তাদের কাছে সময়ে পৌঁছাচ্ছে না। এই কারণেই এখানে তারা শিবির করতে চাইছে কলকাতায় ।
পশ্চিমবঙ্গের কিছু জঙ্গি সংগঠনের গতিবিধির হদিশ পেতেই দিল্লি পুলিশ। এখানে তারা ঘাঁটি গড়তে চাইছে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় স্বাধীনভাবে কাজ করতে। অভিযানের ক্ষেত্রে বারবার যাতে রাজ্য পুলিশের অনুমতি চাইতে না হয়, তাই চাইছে দিল্লির উর্দিধারীরা। ইতিমধ্যেই এই আরজি জানিয়ে তাদের তরফে একটি চিঠি রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টরেটে পাঠানো হয়েছে বলে খবর।
রাজ্যে যে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষনেতারা কাজকর্ম চালাচ্ছে, তা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তরের রিপোর্টে বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করা হয়েছে। মালদহে জাল নোটের কারবারের আড়ালে জেহাদিরা এখানে যাতায়াত করছে। এরাজ্য থেকেই দেশের অন্যপ্রান্তে চলে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতাদের এখানে থাকার জন্য বাড়িভাড়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা। এমনটাই অভিযোগ উঠছে।
এছাড়া অভিযোগ, কিছু নেতার সাহায্যে জঙ্গিরা বিভিন্ন শংসাপত্র থেকে শুরু করে ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ড পর্যন্ত তৈরি করে ফেলছে। যাকে হাতিয়ার করেই জেহাদিরা বৈধ পাসপোর্ট তৈরি করে ফেলছে। এর ফলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তাদের অনেক সুবিধা হচ্ছে। যে বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য হাতে এসেছে দিল্লি পুলিশের। সম্প্রতি যে দুই জঙ্গিকে তারা গ্রেপ্তার করে, তাদের এখানে থাকার ক্ষেত্রে কারা সাহায্য করছিল, তা জেনেছে দিল্লি পুলিশ।
কারা এদের মদতদাতা, তা চিহ্নিত করাই উদ্দেশ্য। কারণ দিল্লি থেকে সমস্ত তথ্য ঠিকভাবে পাওয়া সম্ভব নয়। কোনও জেহাদি গোষ্ঠীর নেতা এখানে বৈঠক এবং যাতায়াত করছেন বলে খবর হঠাৎ করে তাদের কাছে চলে এলে, সঙ্গে সঙ্গে তল্লাশি করা যাচ্ছে না। এই অসুবিধা দূর করতে চাইছেন তারা। এখানে শিবির থাকলে যে কাজ করা সম্ভব। কিন্তু তাদের হাতে থাকা বিশেষ তথ্য অন্যদের দিতে আগ্রহী নন দিল্লি পুলিশ কর্তারা। এতে গোপনীয়তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা। এই কারণেই রাজ্যের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাইছে দিল্লি পুলিশ। যাতে তৃণমূল স্তরের সমস্ত তথ্য তাদের কাছে চলে আসে। তার ভিত্তিতে পরিকল্পনা ঠিক করা যায়।
দিল্লি পুলিশকে এখানে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য রাজি হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে পুলিশ মহলে। প্রশাসনিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, আসলে নিজের নিয়ন্ত্রণাধীন চালাতে চাইছে কেন্দ্র। কারণ দিল্লি পুলিশ সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে।
অভিযোগ, বিভিন্ন কারণে রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ জোগাড়ের পরও এগতে গিয়ে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এই কারণেই দিল্লি পুলিশের কর্তারা চাইছেন, রাজ্যে বসে কাজকর্ম চালাতে। যাতে গোড়া থেকে শিকড় উচ্ছেদ করা যায়। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন সময়ে জেহাদিদের বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরিতে সাহায্য করছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তার সরেজমিনে তদন্ত করা যায়।
প্রশাসনিক কর্তাদের বক্তব্য, রাজ্য পুলিশের সাহায্য তাদের নিতেই হবে। আর রাজ্যের মধ্যে কোথাও তল্লাশিতে গেলে, সেখানকার পুলিশকে জানিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক। দিল্লি পুলিশ চাইছে না তল্লাশিতে তাদের সঙ্গে কেউ যাক। এখানেই জটিলতা তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে রাজ্যের পক্ষে তাদের এই দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ অন্য রাজ্যের পুলিশ এসে এখানে খবরদারি চালিয়ে যাবে, তা কোনও রাজ্যই মেনে নেবে না।
প্রশাসনিক মহলের অনেকের মতে, জঙ্গি সংগঠনের কাজকর্ম নিয়ে তদন্তের ছুতোয় কেন্দ্র নিজের পুলিশকে রাজ্যে ঢুকিয়ে, এখানকার সরকারের বিভিন্ন কাজকর্মের উপর নজরদারি চালানোর কৌশল নিয়েছে। একইসঙ্গে কেন্দ্র বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য রাজ্যগুলিকে যে টাকা পাঠাচ্ছে, তা দিল্লি পুলিশকে হাতিয়ার করে জানতে চাইছে তারা। যাতে তাদের পাঠানো রিপোর্টের ভিত্তিতে রাজ্যকে বিপাকে ফেলা যায়।