নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৬ সেপ্ঢেম্বর৷৷ রাজ্যে সিপিএম মহা ফাঁপরে পড়েছে৷ অন্তত, এই মুহুর্তে সিপিএমের অবস্থা দেখে তাই মনে হচ্ছে৷ একদিকে রাজ্যে বিজেপি সিপিএমের ঘাড়ে শ্বাস ফেলছে৷ অন্যদিকে, নতুন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে দলের গঠনতন্ত্র৷ বুধবার নয়াদিল্লিতে এ কে গোপালন ভবনে সিপিএম পলিটব্যুরোর বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি দলীয় গঠনতন্ত্র মনে করিয়ে দিয়ে সংসদীয় পদের প্রতি মোহ স্বাস্থ্যকর নয় বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ তাঁর মতে, সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে তা অশুভ৷ অবশ্য সীতারামের এই বক্তব্যের কারণ হল, দলীয় সদস্যদের একাধিকবার বিধায়ক কিংবা মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে সুযোগ সুবিধা ভোগ করা৷ দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, পার্টির কোন সদস্য তিনবারের বেশি সংসদীয় পদে থাকতে পারবেন না৷ সিপিএমের শেষ পার্টি কংগ্রেসে এই নিয়ম সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদনের ভিত্তিতে লাগু করা হয়েছে৷
সূত্রের খবর, এদিনের পলিটব্যুরো বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরি ত্রিপুরার উপর একটি রিপোর্ট পেশ করেন এবং দিনভর এই রিপোর্ট নিয়েই আলোচনা হয়েছে৷ তাতে মূল বিষয় ছিল, পার্টির একই সদস্য একাধিকবার বিধায়ক কিংবা মন্ত্রী হয়েছেন৷ রিপোর্টে সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সহ একাধিক মন্ত্রী এবং বিধায়কদের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে, যাঁরা তিনবারের অধিক সংসদীয় পদে রয়েছেন৷ মানিক সরকার ছাড়া রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য বাদল চৌধুরী, তপন চক্রবর্তী, খগেন্দ্র জমাতিয়া, এমনকি বিধানসভার উপাধ্যক্ষ পবিত্র কর তিনবারের অধিক সংসদীয় পদে রয়েছেন৷ তাছাড়া বেশ কয়েকজন বিধায়কও রয়েছেন যাদের তিনবারের অধিক সংসদীয় পদে থাকার সুযোগ হয়েছে৷
সূত্রের খবর, এই বিষয়টি সীতারাম ইয়েচুরি দলের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী বলে দাবি করেছেন৷ বৈঠকে সীতারাম বলেন, সংসদীয় পদের মোহ স্বাস্থ্যকর নয়৷ তা সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষেও শুভ নয়৷ তাঁর মতে, এজন্যই পার্টির নির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র তৈরি করা হয়৷ সংসদীয় পদের প্রতি মোহ কমানোর উদ্দেশ্যেই এই অবস্থান নিয়েছে দল৷ কিন্তু, সারা দেশের মধ্যে একমাত্র ত্রিপুরাতে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ ত্রিপুরা এবিষয়ে রেকর্ড করেছে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরাতেই দলীয় সদস্যরা সবচেয়ে বেশি সময় ধরে সংসদীয় পদ আকড়ে বসে রয়েছেন৷
সূত্রের খবর, পলিটব্যুরোতে দিনভর বিষয়টি নিয়ে চর্চা হলেও কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি৷ ধারণা করা যাচ্ছে, পলিটব্যুরোর আগামী বৈঠকে দলের ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির কাছে এবিষয়ে মতামত চাওয়ার উপর আলোচনা হতে পারে৷ তাই মনে হচ্ছে, রাজ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচন সিপিএমের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে৷ কারণ, দলের গঠনতন্ত্র মেনে সীতারাম ইয়েচুরিকে রাজ্যসভাতে পাঠায়নি সিপিএম৷ সিপিএমের কেরল লবির তীব্র আপত্তির ফলেই রাজ্যসভায় সিপিএমের আসন আরো একটি কমে গিয়েছে৷ এদিকে, মানিক সরকার চারবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন৷ সংসদীয় ক্ষেত্রে প্রথম জীবনে তিনি একবার দুই বছরের জন্য বিধায়ক হয়েছিলেন৷ দ্বিতীয়বার পাঁচ বছরের জন্য বিধানসভায় মুখ্য সচেতকের দায়িত্ব সামলেছেন৷ সমালোচকদের মতে, মানিক সরকারের স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকে পুঁজি করে আগামী ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচন উৎরাতে চাইছে সিপিএম রাজ্য কমিটি৷ কিন্তু, দলীয় গঠনতন্ত্রের গ্যাড়াকলে এখন এই ইস্যুতে সিপিএম বিভাজিত হয়ে পড়ে কিনা, তা নিয়েই বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে৷
2017-09-07