নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ আগস্ট৷৷ সর্বশিক্ষায় নিযুক্ত শিক্ষকদের নিয়মিতকরণের বিষয়টিকে কেন্দ্রের কোর্টে ঠেলে দিয়ে আন্দোলনকারীদের আমরণ অনশন প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছে রাজ্য সরকার৷ প্রশাসনের তরফ থেকে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক – অশিক্ষক কর্মচারীদের নিয়মিতকরণ সম্পর্কে প্রেস নোট জারী করা হয়েছে বুধবার৷ তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, সর্বশিক্ষা মিশন ও রাজ্য সরকার এই প্রকল্পে নিযুক্ত চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের জীবন ও জীবিকার প্রতি সম্পূর্ণভাবে সহানুভূতিশীল৷ চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক-কর্মচারীদের যাবতীয় সমস্যা সরকার মানবিক ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়েই বিবেচনা করছে৷ কিন্তু এই চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক শিক্ষিকাদের চাকুরীর নিয়মিতকরণের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে৷ বলা হচ্ছে, এই শিক্ষকদের নিয়মিত দেখিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে অর্থ আনা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণভাবে অসত্য ও ভিত্তিহীন৷ রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত কোন চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক-শিক্ষিকাকেই নিয়মিত করেনি৷ শুধুমাত্র চাকুরীর মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হলে তাদের জন্য নিয়মিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সমহারে বেতন প্রদান করার জন্য বার্ষিক পরিকল্পনাতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অর্থ বরাদ্দ করার জন্য প্রস্তাব করা হয়৷ এর অর্থ এই নয় যে, রাজ্য সরকার তাদেরকে নিয়মিত করে ফেলেছে৷ অন্যদিকে এরকমও বলা হচ্ছে যে, দেশের বিভিন্ন রাজ্য সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের নিয়মিত করা হয়েছে, শুধুমাত্র ত্রিপুরা সরকার এদের নিয়মিত করছে না৷
রাজ্য সরকারের তরফে দেশের ১২ টি রাজ্যের প্রকল্প অধিকর্তাদের থেকে সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের নিয়মিত করণের বিষয়ে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহের জন্য চিটি লেখা হয়েছিল৷ এখন পর্যন্ত ৭টি রাজ্য থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা গেছে৷ রাজ্যগুলি হল অন্ধ্রপ্রদেশ, চন্ডীগড়, তামিলনাড়ু, মেঘালয়, গুজরাট, বিহার এবং কেরালা৷ এর মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশে নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগ করে সর্বশিক্ষা প্রকল্পে ডেপুটেশনে রাখা হয়েছে, তামিলনাড়ু এবং কেরালাতে রাজ্য সরকারের শিক্ষকদের ডেপুটেশনের মাধ্যমে সর্বশিক্ষার বিদ্যালয়ে শিক্ষাদান কার্য চালানো হচ্ছে৷ অবশিষ্ট চন্ডীগড়, গুজরাট, বিহার এবং মেঘালয়ে সর্বশিক্ষা প্রকল্পে শিক্ষকদের চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত করা হয়েছে৷ এই শিক্ষকদের উক্ত রাজ্যগুলিতে এখনও নিয়মিত করা হয় নাই৷
উপরিউক্ত তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, বিভিন্ন মহল থেকে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যেই শিক্ষকদের নিয়মিতকরণের বিষয়ে ভিত্তিহীন কথা ছড়ানো হচ্ছে৷
সর্বশিক্ষা রাজ্যমিশন তথা রাজ্য সরকার চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মচারীদের জীবন ও জীবিকার প্রশ্ণে তাদের চাকুরীর নিয়মিতকরণের বিষয়ে নীতিগতভাবে আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল৷ তা না হলে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মচারীদের বর্তমানে আর্থিক ও অন্যান্য যাবতীয় সুযোগ সুবিধা যা প্রদান করা হয়েছে তা আশাই করতে পারতেন না৷ রাজ্য সরকারের উদার দৃষ্টিভঙ্গীর কারণেই তা সম্ভব হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকার যদি চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের নিয়মিতকরণ সহ অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা প্রদানের জন্য, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করে এবং এ সি টি ই এর গাইড লাইনস অনুযায়ী যদি চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ উপযুক্ত বিবেচিত হয় তাহলে সরকার তাদের চাকুরীর নিয়মিতকরণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করবে৷
সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্প একটি কেন্দ্রয়ী প্রকল্প৷ সেই দৃষ্টিভঙ্গীকে সামনে রেখে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক – শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মচারীদের নিয়মিত করার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সুযোগ ও ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ তবে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মচারীদের চাকুরী নিয়মিত করণের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করে৷ ইতিমধ্যেই রাজ্য বিধানসভা থেকেও একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে যাতে সর্বশিক্ষা প্রকল্পে নিযুক্ত সমস্ত শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের চাকুরী নিয়মিত করনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়৷ রাজ্য সরকারের তরফে আবারো কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জরুরী আবেদন রাখছি যাতে এই সমস্যার আশু সমাধান কল্পে জাতীয় স্তরে একটি অভিন্ন পন্থা ও পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়৷ সর্বশিক্ষা প্রকল্পের অনশনকারী ও অন্যান্য সকল চুক্তিবদ্ধ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের কাছে আবেদন রাখছি, তারা যেন রাজ্য সরকারের মত কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবী যাতে তাদের চাকুরীর নিয়মিত করণের সমস্যার সমাধান কল্পে জাতীয় স্তরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে অনশনকারী সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মচারীদের কাছে আবেদন রাখছি, রাজ্যের হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করে তারা যাতে অতিসত্ত্বর অনশন প্রত্যাহার করে নেয়৷
2017-08-03