আইপিএফটির অবরোধ প্রত্যাহার, আজ দিল্লীতে রিজিজুর সাথে নেতাদের বৈঠক

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ জুলাই৷৷ টানা ১১ দিনের অবরোধ আন্দোলন প্রত্যাহার৷ বড়মুড়ার খামতিং বাড়িতে জাতীয় সড়ক অবরোধ তুলে নিল আই পি এফ টি৷ পুলিশ প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে এবং রণসাজে সজ্জিত ছিল ভোর পাঁচটা থেকে৷ সকাল ৯টার আগেই অবরোধ প্রত্যাহার ঘোষণা করেন এন সি দেববর্মা৷ এদিকে, দলের সাধারণ সম্পাদক মেবার কুমার জমাতিয়ার নেতৃত্বে গঠিত আইপিএফটির একটি টিম শুক্রবার দিল্লীতে যাচ্ছেন৷ সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব (এনই) সত্যেন গর্গের সাথে সকাল এগারটায় বৈঠক করবেন নেতারা৷ তারপর বিকাল তিনটা নাগাদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেন রিজিজুর সাথে বৈঠক করবেন বলে জানা গিয়েছে৷ যদিও, রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের হস্তক্ষেপের কারএেণ রিজিজুর সাথে একটি আলোচনা ভেস্তে গিয়েছিল ইতিপূর্বে৷
এদিকে, কোন ধরনের বল প্রয়োগ ছাড়াই অবরোধ তুলে নেয় আই পি এফ টি৷ সকাল থেকেই বড়মুড়ার পাদদেশ খামতিং বাড়িতে থমথম পরিবেশ৷ একদিকে প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারি অন্যদিকে রণসাজে সজ্জিত পুলিশ, টিএসআর ও সিআরপিএফ জওয়ান৷ ঘটনা স্থলে হাজির, ডিএম, এস পি ওয়েস্ট, আই জি লো এবং অর্ডার, এস ডি পি ও সহ চম্পকনগর ও জিরানীয়া থানার পুলিশ৷ ছিলেন টি এস আর বাহিনীর কমান্ডেন্ট ও পুলিশের পদস্থ আধিকারিক সহ মেজিস্টেট৷ ভোর ৫ টায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷ সেইসঙ্গে অবরোধ তুলতে প্রস্তুতি নেয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা৷ তাদের সঙ্গে মহিলা পুলিশও ছিল৷ তখনও ব্রিজের ওপাড়ে পৃথক তুইপ্রাল্যান্ডের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন আই পি এফ টি-র কর্মী সমর্থকরা৷ পুলিশ প্রশাসন মাইকে ১৪৪ ধারা ঘোষণা করে অবরোধ মুক্ত করার আহ্বান জানায়৷ ঘন্টা দুয়েক পর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মঙ্গল দেববর্মাএেবং আই পি এফ টি-র সম্পাদক শুক্লাচরন প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন৷ তারা অবরোধ আন্দোলন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চালিয়ে যাবার দাবি জানান৷ অজুহাত দিল্লীতে এদিন তাদের বৈঠক হবে৷ প্রশাসন তাদের দাবি নাকচ করে দেন৷ সকাল ৮টায় প্রশাসন পরিস্কার ভাবে জানিয়েদেয়, এক ঘন্টার মধ্যে অবরোধ প্রত্যাহার করে জাতীয় সড়ক স্বাভাবিক করার৷ অন্যথায় পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে৷ আই পি এফ টি’র নেতৃত্বের কাছে এই বার্তা পৌঁছানোর বিছুক্ষণ পর সভাপতি এন সি দেববর্মা সুর পাল্টে ফেলেন৷ কেন্দ্রীয় সরকার তাদের দাবির প্রতি সাড়া দিয়ে আলোচনা বসতে চলছে বলে উল্লেখ করেন এবং অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন৷ এন সি বাবুর ঘোষণার পরই কর্ম সমর্থকরা উল্লাসিত হয়ে উঠে৷ কেন্দ্র তাদের পৃথক ল্যান্ডের দাবি মঞ্জুর করেছে৷ অবাঞ্চিত দাবি নিয়ে অনির্দিষ্ট কালের অবরোধে বসা, আর মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার৷ রাজ্য রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে এই গটাপ নাটক৷ সৌজন্যে অবশ্যই বিজেপি দাবি সিপিআইএম-র ময়দান সরগরম করেছে আই পি এফ টি-র এন সি গোষ্ঠী৷ পৃথক রাজ্যের দাবি জানিয়ে বড়মুড়া পাহাড়ের খামতিং বাড়ি এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জাতীয় সড়ক অবরোধ আন্দোলনে বসে আই পি এফ টি৷ পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী তাদের এই আন্দোলন হলেও তাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতে রং চড়িয়েছে৷ শাসক দল সিপিএম এই আন্দোলনের প্রতিবাদে মাঠে নামে৷ বিজেপিকে জড়িয়ে বিক্ষোভ জানায়৷ চন্েল মিছিল ও সভা, কংগ্রেস আরো একধাপ এগিয়ে ১২ ঘন্টার ত্রিপুরার বনধর ডাক দেয়৷ আই পি এফ টি ও বিজেপি যোগ সাজসের অভিযোগ তোলে৷ এরই মাঝে ১১ দিন যাবত জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধ আন্দোলন প্রত্যাহার করতে হস্তক্ষেপ করেন রাজ্যপাল৷ সব কিছুর পরও যখন অবরোধ চলছিল, তখন বিশেষ ভূমিকা নেয় রাজ্য পুলিশ প্রশাসন৷ ১১ দিনের মাথায় ভোর ৫টায় অবরোধ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে৷ তারপর চার ঘন্টা আবার ও নাটক চলে বড়মুড়ার পাদদেশে৷ শেষ পর্যন্ত রাজ্য পুলিশ প্রশাসনে গর্জনে, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করেন এন সি দেববর্মা৷ বলা হয়, কেন্দ্র তাদের দাবি মেনে নিয়েছে৷ যার কোন সারবত্তা নেই৷ সবটাই ধোয়াশা৷
এদিকে, আজ আন্দোলন স্থলে গিয়ে নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা বলেন, রাজ্যপাল তাদের দাবি মেনে নিয়েছেন৷ এই খবর শোনামাত্র অবরোধ স্থল ছাড়তে শুরু করেন একাংশ৷ সেসময়ই পুলিশ প্রশাসনের তরফে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে বাকিদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়৷ এদিকে দেববর্মা সাংবাদিকদের বলেন, যে রাজ্যপাল তাদের দাবিগুলি কেন্দ্রকে জানাবেন৷ কিছুদূর যেতেই রাজ্যপাল তাদের দাবি মেনে নিয়েছেন এই খবর সত্য নয় জানার পরই আন্দোলনকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে গঙ্গানগর ও অম্পিরোড এলাকায় অবরোধ শুরু করে৷ ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি৷ তবে গঙ্গানগর ও অম্পিরোড এলাকায় আন্দোলনকারীরা সংখ্যায় কম থাকায় সিআরপিএফ তাদের হটিয়ে দেয়৷ এই মূহূর্তে সারা রাজ্যের মিশ্রজনজনবসতিপ্ এলাকাগুলিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *