রাজ্যপালের আবেদনে তের ঘন্টা পর মুখ্যমন্ত্রীকে ঘেরাও মুক্ত করল বিজেপি

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ জুলাই ৷৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে টানা ১৩ ঘন্টা অবরুদ্ধ রাখার পর রাজ্যপালের অনুরোধে বিজেপি আন্দোলন সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছে৷ ফলে রাজধানী আগরতলা সহ সমগ্র রাজ্যের রাজনৈতিক টানা পোড়ন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে৷ বিজেপির প্রদেশ কার্যালয়ে রাজ্য কমিটির বৈঠকের পর সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে বিগত ১৩ ঘন্টা যাবত তার সরকারী আবাসে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল৷ রাজ্যের রাজ্যপাল তথাগত রায় বিজেপির প্রতিনিধিদের ডেকে সামগ্রিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তিনি সক্রিয় ভূমিকা নেবেন বলেও আশ্বাস দেন৷ তিনি বিজেপির প্রতিনিধি দলের কাছে আবেদন জানান পার্টি যাতে মুখ্যমন্ত্রীকে যাতে আর অবরুদ্ধ করে না রাখে৷ একেই সঙ্গে রাজ্যপাল দুই ঘন্টার মধ্যে আইপিএফটির প্রতিনিধিদের সাথেও কথা বলার আশ্বাও দেন৷ বিপ্লব দেব আরও বলেন, রাজ্যপালের আবেদন নিয়ে পার্টির রাজ্য কমিটির পদাধিকারীদের মধ্যে বিস্তর আলোচনা হয়েছে একেই সঙ্গে বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও জানানো হয়৷ সার্বিক সিদ্ধান্তক্রমে বিজেপি আপাতত আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়ে আইপিএফটিক্যে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেবার আবেদন জানিয়েছে৷ বিজেপির প্রদেশ সভাপতি বিপ্লব কুমার দেবের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিজেপির কর্মসূচিতে ইতি টানা হয়েছে৷ তবে রাজ্যের উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রীকেই দায়ী করেছে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে আইপিএফটির সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আলোচনা সংক্রান্ত যে সরকারী বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভাবে মিথ্যা বলে অভিযোগ করা হয়েছে৷
বিজেপির কর্মী সমর্থকরা মঙ্গলবার সাতসকালেই মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি আবাসে আসা-যাওয়ার সকল অলিগলি পথ অবরুদ্ধ করে দিয়েছে৷ যদিও বিজেপি এমনটা করতে পারে এমন আগাম সূচনা পেয়ে পুলিশ প্রসাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়৷ রাত আড়াইটা থেকে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি আবাসে আসা-যাওয়ার প্রধান পথ গুলোতে মজবুত বেরিকেইড তৈরি করে৷ যথারীতি সাতসকালে কর্মীরা এসে হাজির হয়৷ প্রথমত তারা মূল পথের পুলিশি বেরিকেডের সামনেই এসে বসে পড়ে৷ শুরু হয় মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবীতে শ্লোগান৷ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির প্রায় ৫০ মিটার দূরে এই বেরিকেইড তৈরি করা হয়৷ তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মী সমর্থক দের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷
আইপিএপটির টানা নয় দিনের অবরোধের জেরে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের ভূমিকা নিয়ে তীব্র আক্রোশ ব্যক্ত করে বিজেপি আজ সাত সকালে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি আবাস অবরোধ করেছে৷ বেলা বাড়ার সাথে সাথে কর্মী সমর্থকদের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েই চলছে৷ রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এখন কমপক্ষে ৭ হাজার লোক মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি অবরোধ করে বসে আছে৷ আরও লোক আসে৷ পরিস্থিতি উত্তপ্ত৷ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে যাওয়ার সমস্ত অলিগলি পথ গুলিও ঘিরে ফেলেছে বিজেপির সমর্থকরা৷ এদিকে জানা গেছে, আগরতলার বাইরে থাকা রাজ্য বিজেপির সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব এবং রাজ্য প্রভারী সুনীল দেওধর অবরোধ স্থলে এসে পৌঁছেছেন৷ কর্মী সমর্থকদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সুরক্ষা কর্মীদের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হচ্ছে৷ এদিকে রাজ্য প্রশাসনের একক শীর্ষ স্থানীয় আধিকারিক জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার জটিল সমস্যার মধ্যে পড়েছে৷ কারণ আজ মন্ত্রীসভার বৈঠক হবার কথা ছিল৷ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আজকের মন্ত্রীসভার বৈঠকে উত্থাপিত হওয়ার কথা৷ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় বৈঠকের এজেন্ডাও মন্ত্রীসভার সদস্যদের মধ্যে বিলি করে দেওয়া হয়৷ তবে মুখ্যমন্ত্রী তার সরকারী আবাস থেকে বেড়িয়ে সচিবালয়ে আসার মত কোন পরিস্থিতি নেই৷ শুধু মুখ্যমন্ত্রীই নন, মুখ্যমন্ত্রীর সরকারী আবাসের পাসে আরও চার জন মন্ত্রীর সরকারী আবাস রয়েছে তারাও অবরোধের মুখে পড়েছেন৷ অন্যদিকে অবরোধের জেরে রাজধানী আগরতলায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে৷ পুলিশ কর্মীরা সামগ্রিক পরিস্থিতির সামাল দিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের পদত্যাগের দাবী করেছেন বিজেপির রাজ্য প্রভারী তথা সর্বভারতীয় সম্পাদক সুনীল দেওধর৷ অসম-আগরতলা জাতীয় সড়ক ও রেলপথ অবরোধ মুক্ত করা না হলে বিজেপি আর কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলেও তিনি ঘোষণা করেছেন৷ সুনীল দেওধর মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন৷ এতদিন শাসক দলীয় গুন্ডাদের দিয়ে কাজ চালানো হয়েছে৷ কিন্তু এখন তার আর সম্ভব হবে না৷ সাধারণ মানুষ জাগ্রত হয়েছেন ফলে সিপিআইএম’র পতন আসন্ন৷ তিনি আরও বলেন, রাজ্যের মানুষ টানা অবরোধের জেরে বিস্তর সমস্যার মুখে পরেছেন৷ কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে পারছে না৷ অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম লাগাম হীন ভাবে বেড়ে চলেছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর তাঁর দায়িত্ব পালন করতে না পেরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ফোন করে দায়িত্ব এড়াতে চাইছেন৷ এখন মুখ্যমন্ত্রীর উচিত দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে পদত্যাগ করা৷ মুখ্যমন্ত্রীকে মৌনি -বাবা-বলে কটাক্ষ করে তিনি অভিযোগ করেন মানিক সরকার নিজেই প্রমান করেছে, তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ৷ ফলে পদ ধরে রাখার কোনও অর্থ নেই৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *