নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ জুলাই ৷৷ গভীরতর সংকটে ত্রিপুরার মানুষ যখন দিশেহারা, গোটা রাজ্যকে যখন ভয়ঙ্কর দুর্র্যেগের মাঝে ঠেলে দেয়া হয়েছে তখন রাজ্য প্রশাসন ও রাজ্য মুখ্যমন্ত্রীকে কিছুটা তৎপর হতে দেখা গেল৷ অবরোধকারী দলের নেতৃত্ব যখন সম্মানজনক শর্তে আন্দোলন থেকে সরে আসতে মরিয়া তখন আইপিএফটি দলের দুই প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সাক্ষাত চেয়ে দিল্লিতে পড়ে রয়েছেন৷ আগামীকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর সঙ্গে তারা সাক্ষাতকারের সময় পেয়েছেন বলে জানা গেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার অবরোধের ফলে রাজ্যের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সাথে কথা বলে তাঁর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন৷ বিজেপি প্রদেশ কমিটি ও কংগ্রেসের প্রদেশ কমিটির মুখ্যমন্ত্রীকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে৷ সবমিলিয়ে রাজ্যের টাল-মাটাল পরিস্থিতিতে রাজনীতির লাভ কোন দল ঘরে তুলবে আজ সেই প্রশ্ণটাই বড় হয়ে উঠেছে৷
রবিবার মহাকরণে মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক আইপিএফটির প্রতিনিধিদের ডেকে এনে অবরোধ আন্দোলন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন৷ কিন্তু, অবরোধ নিয়ে কেন্দ্রের সাথে কোনো আলোচনা করা সম্ভব হচ্ছেনা৷ তাই কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে বিনা আলোচনায় অবরোধ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবেনা, স্পষ্ট জানিয়েছেন বিভাজিত আইপিএফটির সভাপতি এনসি দেববর্মা৷ একই সাথে কেন্দ্রের সাথে আলোচনায় কোন ইতিবাচক সাড়া না মিললে, অবরোধ প্রত্যাহারের বদলে আগামী দিনে রাজ্যের বিকল্প সড়ক গুলিও অবরুদ্ধ করার বিষয়টি উড়িয়ে দেননি এনসি বাবু৷ বিকল্প সড়কও অবরোধ করা হবে কিনা প্রশ্ণের উত্তরে তাঁর জবাব, সমস্ত কিছুই নির্ভর করছে কেন্দ্রের সাথে আলোচনা কোন দিকে গড়ায়৷
শনিবার রাতে পশ্চিম জেলার জেলা শাসক ডঃ মিলিন্দ রামটেকে বিভাগীত আইপিএফটির সভাপতি এনসি দেববর্র্মকে চিঠি দিয়ে রবিবার দুপুর সাড়ে এগারটায় মহাকরণে রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জিব রঞ্জন এবং রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক একে শুক্লা তাদের সাথে বৈঠক করতে চাইছেন বলে জানান৷ এরই পরিপ্রেক্ষিতে এদিন এনসি দেববর্র্মর নেতৃত্বে আইপিএফটির নয়জনের এক প্রতিনিধি দল মহকরণে মুখ্যসচিব ও রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের সাথে বৈঠক করতে যান৷ বৈঠকে জাতীয় সড়ক এবং রেল অবরোধের জেরে রাজ্যের মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি তুলে ধরেন মুখ্যসচিব৷ তাছাড়াও এই অবরোধ আন্দোলনকে ঘিরে রাজ্যে অস্থির পরিবেশ কায়েম হয়েছে সেই বিষয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ তাই আইপিএফটিকে অবরোধ আন্দোলন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়৷ কিন্তু আইপিএফটির সভাপতি এনসি দেববর্র্ম রাজ্য সরকারের এই অনুরোধ রাখা সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন৷ তিনি বলেন, আইপিএফটির দুইজন প্রতিনিধি বর্তমানে দিল্লিতে অবস্থান করছেন৷ কেন্দ্রের সাথে অবরোধ আন্দোলন নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করছেন কিন্তু কোনো মন্ত্রীর সাথেই যোগাযোগ সম্ভব হয়ে উঠছে না৷ তবে আগামী কাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর সাথে দেখা করার সুযোগ মিলবে৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সাথে বৈঠকে ফলাফলের উপর নির্ভর করবে আগামী দিনে অবরোধ আন্দোলন কর্মসূচী, মুখ্যসচিব ও রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশককে একথা জানান এনসি বাবু৷
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এনসি দেববর্র্ম জানান, রাজ্য সরকারের আহ্বানে অবরোধ আন্দোলন নিয়ে মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের সাথে আলোচনা হয়েছে৷ অবরোধ আন্দোলন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছিল রাজ্য সরকার৷ কিন্তু তা এখনই মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তিনি জানান, আগামীকাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর সাথে বৈঠক হবে আইপিএফটির প্রতিনিধি দলের৷ ওই বৈঠকের ফলাফলের উপর সমস্ত কিছু নির্ভর করছে৷ কেন্দ্রের সাথে আলোচনায় ইতিবাচক ফল না মিললে অবরোধ আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে না, তা তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন৷ শুধু তাই নয় আগামী দিনে রাজ্যের বিকল্প সড়ক গুলিও অবরুদ্ধ করার বিষয়টি উড়িয়ে দেননি এনসি বাবু৷ বিকল্প সড়ক অবরোধ করার কোন পরিকল্পনা রয়েছে কিনা এই প্রশ্ণের জবাবে এনসির বক্তব্য, এখনই কিছু নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়৷ সমস্ত কিছু নির্ভর করছে কেন্দ্রের সাথে আলোচনা কোন দিকে গড়ায়৷
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার আই পি এফ টি’র অনির্দিষ্ট কালের জাতীয় ও রেল অবরোধ নিয়ে আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর সাথে টেলিফোনে কথা বলেন৷ মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, আই পি এফ টি-র এক প্রতিনিধি দল দিল্লি গেছেন তাদের দাবী নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আলোচনা করতে৷ মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য ও অবস্থান স্পষ্ট করার অনুরোধ জানান৷ মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আরও বলেন, তিনি যেন আই পি এফ টি দলের প্রতিনিধিদের অবিলম্বে বর্তমানে চলা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ তুলে নিতে আবেদন জানান৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি বিষয়টি দেখবেন৷ আজ সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার তাঁর বাসভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানান৷
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত ১০ জুলাই থেকে আই পি এফ টি দল ত্রিপুরাকে ভাগ করে নতুন রাজ্যের দাবী নিয়ে জাতীয় সড়ক ও রেলপথ অবরোধ শুরু করেছে৷ আজ এই অবরোধ সপ্তম দিনে পড়েছে৷ তিনি বলেন, অবরোধ কর্মসূচি শুরুর আগে আই পি এফ টি দল বিষয়টি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নজরে আনে৷ আমরা রাজ্য সরকারের বক্তব্য তাদের আগেই জানিয়েছি-রাজ্য সরকার আই পি এফ টি’র এই দাবী সমর্থন করে না৷ রাজ্যের মানুষও এই দাবী সমর্থন করেন না৷ তিনি বলেন, অনির্দিষ্ট কালের অবরোধ শুরুর আগেই রাজ্য সরকার এক বিবৃতিতে রাজ্যবাসী ও রাজ্যের স্বার্থে তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেবার জন্য আবেদন জানিয়েছিল৷ এমনকি গত মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরও অর্থমন্ত্রী ভানুলাল সাহা পুনরায় রাজ্য সরকারের বক্তব্য জানান এবং অবরোধ তুলে নেবার জন্য আহ্বান জানান৷ সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সড়ক ও রেল আমাদের লাইফ লাইন৷ অবরোধের ফলে রাজ্যের মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে৷ মানুষ অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, আজ রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জীব রঞ্জন ও রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক এ কে শুক্লা ও উচ্চ পদস্থ আধিকারিকগণ সকালে সচিবালয়ে আই পি এফ টি’র এক প্রতিনিধি দলের সাথে আলোচনায় বসেন৷ এই সভায় আই পি এফ টি দলের পক্ষে এন সি দেববর্মা, অনন্ত দেববর্মা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন৷ সভায় রাজ্য সরকারের তরফে মুখ্য সচিব ও রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক রাজ্যবাসীর স্বার্থে তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেবার জন্য আবেদন জানান৷ সভায় আই পি এফ টি দলের প্রতিনিধিরা জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আলোচনার জন্য তাদের দু’জন প্রতিনিধি দিল্লিতে গেছেন৷ আগামীকাল দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীর সাথে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে৷ এই আলোচনার পর তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করবেন৷ মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য সরকার ও রাজ্যের জনগণের পক্ষ থেকে রাজ্য ও রাজ্যবাসীর স্বার্থে এই অবরোধ তুলে নেবার জন্য আবারো আবেদন জানান৷
2017-07-17