দশ মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে তছনছ চড়িলামের বহু বাড়ি

নিজস্ব প্রতিনিধি, বিশালগড়/চড়িলাম, ১৬ জুন৷৷ প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা কমিটির বৈঠকের নির্ধারিত দিনেই ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড করে দেয় চড়িলাম ব্লকের বিভিন্ন এলাকার বহু বাড়িঘর ও গাছপালা৷ সকাল থেকে ঝিরঝির বৃষ্টির মাঝেই আচমকা একলহমায় ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়৷ দুপুর আনুমানিক একটায় হঠাৎ এক বিশাল কুন্ডলীপাক বিকট শব্দে আছড়ে পড়ে চড়িলাম ব্লকের অধীন দক্ষিণ চড়িলাম পঞ্চায়েতের কড়ইমুড়া এলাকার ১ নং ওয়ার্ডের উত্তরাংশে ও পার্শ্ববর্তী উত্তর চড়িলাম এলাকার হাপাজিয়ামুড়া এলাকায়৷ কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিমেষে উড়িয়ে নিয়ে যেতে থাকে একের পর এক টিনের ছাউনি, দুমড়ে মুচড়ে দিতে থাকে ঘরের অবশিষ্ট কাঠামো৷ সমূলে উৎপাটিত করে ধরাশায়ী করতে থাকে একের পর এক বিশাল গাছ৷ আধা মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে এই ক্ষণস্থানীয় ঘূর্ণিঝড় তছনছ করে দিয়ে যায় গোটা এলাকা৷ বাকরোদ্ধ করে রেখে যায় পাছে এলাকাবাসীকে৷ একে অপরের সাহায্যের জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন আবালবৃদ্ধবনিতা৷
প্রাথমিকভাবে যে তথ্য মিলেছে তাতে দেখা গিয়েছে, চড়িলাম ব্লকে মোট ক্ষতিগ্রস্থের সংখ্যা ৬৪৷ যার মধ্যে চড়িলাম পঞ্চায়েতের কড়ইমুড়া এলাকায় পাঁচটি সবতবাড়ি সম্পূর্ণভাবে এবং ৪১টি বসতবাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ উত্তর চড়িলামের হাপাজিয়ামুড়া এলাকায় দুইটি বসতবাড়ি সম্পূর্ণভাবে এবং ১৪টি বসতবাড় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ রামনগর ভিলেজের ১ নং ওয়ার্ডের খামারবাড়ি এলাকায় দুটি বসতবাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
এলাকাতে চড়িলাম ব্লক আধিকারিক শান্তনু বিকাশ দাস, তহশীলদার, বিশ্রামগঞ্জ থানায় এসআই সত্য রঞ্জন নন্দী এবং বিশালগড় থানায় পুলিশ পুরো এলাকাটি ঘুরে ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা তৈরি করে সরকারি ভাবে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার আশ্বাস দেন৷ ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে যদিও কোন হতাহতের খবর নেই৷ তবে বিস্তর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জালাল মিঞা৷ তার বসত ঘর এবং রান্নাঘর ভেঙ্গে ঘরের চাল গাছের উপর আটকে পড়ে৷ ঘরের মধ্যে অবুঝ তিন বছরের একটি শিশু অল্পেতে প্রাণে বাঁচে৷ তবে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের অসুবিধার কথা চিন্তা করে খুব দ্রুত সরকারি সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছেন বিডিও শান্তনু বিকাশ দাস এবং পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান দীলিপ রায়৷ ঘূর্ণিঝড়ে কড়ইমুড়া এলাকায় বিরামহীন বৃষ্টি ও ঝড়ে ফললাদি, বহুগাছপালা ভেঙ্গে থুবড়ে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ তাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ কাঁচা রাস্তা বৃষ্টির জল জমে গত হয়ে বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে৷ সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে কড়ইমুড়া হাইসুকলের একটি শ্রেণীকক্ষের চাল উড়ে গিয়ে অন্যবাড়ীতে পড়েছে৷ যদিও শ্রেণীতে কোন ছাত্র-ছাত্রী ছিলনা৷ বহু গাছপালা ভেঙ্গে বিদ্যুতের খঁুটিতে পড়ে যাওয়া তার ছিড়ে গিয়েছে৷ বিদ্যুৎ ব্যবস্থারও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷ বহু স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে৷ খবর লেখা পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আশ্রয়ের জন্য ইতিমধ্যে এসডিএম নান্টুরঞ্জন দাস এলাকা ঘুরে আশ্রয় কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা নিয়েছেন৷ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপি দলের কর্মকর্তাগন ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *