পদ্মবনে গেলেন জীতেন ও জয়কিশোর

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ জুন৷৷ একাধিকবার দল পাল্টানোর পর এবার প্রাক্তন অধ্যক্ষ জীতেন সরকার বিজেপিতে গিয়ে ভিড়েছেন৷ এদিকে, সিপিএম থেকে বহিসৃকত ত্রিপুরা স্ব-শাসিত জেলা পরিষদের এমডিসি জয়কিশোর জমাতিয়াও বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন৷ একাধিকবার দল পাল্টানো রাজনৈতিক জীবনে তাঁর নেওয়া ভূল সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে অন্যতম বলে স্বীকার করেছেন জীতেন্দ্র বাবু৷ তিনি বলেন, সিপিএম ছেড়ে কংগ্রেসে এবং পরবর্তীতে কংগ্রেস ছেড়ে ফের সিপিএমে যাওয়াটা তাঁর ভূল সিদ্ধান্ত৷ তবে, এক্ষেত্রে যেহেতু তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতারও অভাব রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, তাই আগামীদিনে ফের বিজেপি ছাড়বেন কিনা সেই প্রশ্ণে স্পষ্ট করে কোন জবাব দেননি তিনি৷ এদিকে, জয়কিশোর জমাতিয়ার বক্তব্য, দলের বিরুদ্ধে সুর চড়ানোতে কলংকিত করে তাঁকে সিপিএম থেকে বের করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, যখনই কেউ বিদ্রোহী হয়েছেন, দলের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন সিপিএম তখনই এই সহজ পন্থা অবলম্বন করেছে৷ শুধু তিনি নন, আরো অনেক বিদ্রোহীদের কলংকিত করে দল থেকে বের করেছে সিপিএম, দাবি জয়কিশোর জমাতিয়ার৷
রবিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দিলেন সিপিআইএম’র প্রবীণ নেতা ছয় বারের বিধায়ক তথা বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ জীতেন সরকার এবং ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য জয় কিশোর জমাতিয়া৷ বিজেপির সর্বভারতীয় সংগঠন মন্ত্রী রামলাল তাদের বরণ করে নিয়েছেন৷ বিজেপিতে যোগ দিয়ে বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ জীতেন সরকার বলেন, মানুষের স্বার্থেই এখন সিপিআইএম পরিচালিত সরকারের পতন দরকার৷ দুর্নীতি এখন চরমে উঠেছে৷ আর এই লক্ষেই তিনি কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন৷ কিন্তু কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল কাল হয়েছে৷ তাই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে না গিয়ে বিজেপিতে যাবার চেষ্টা করে ছিলেন তিনি৷ কিন্তু সুদীপ রায় বর্মণের জন্য তা হয়নি৷ শুধু মাত্র তাঁর ব্যক্তি স্বার্থের জন্য৷ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় তাঁকে এবং দিলীপ সরকারকে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে৷ তাই আত্মরক্ষায় পুনরায় সিপিআইএম যোগ দিতে বাধ্য হয়েছিলাম৷ কিন্তু মনে প্রাণে এই দলকে আর সমর্থন করতে পারছিলাম না৷
এদিন তিনি স্বীকার করেন, দলবদলের সিদ্ধান্তগুলি ভূল ছিল৷ তবে তিনি মনে করেন, বিজেপিই পারবে সিপিএম কে ক্ষমতা থেকে দূরে সরাতে৷ কংগ্রেস বিধায়করা যারা তৃণমূলে গেছেন তাঁরা এর আগে বিজেপিতে যোগ দেবার চেষ্টায় দিল্লী ঘুরে এসেছিলেন৷ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ তাদের যথেষ্ট সম্মানও দিয়েছিলেন৷ কিন্তু তৎকালীন বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে না মানা এবং তাঁকে সরিয়ে দেবার দাবি অগ্রাহ্য করে দিয়েছিল৷ অন্যদিকে ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের সিপিএম সদস্য জয়কিশোর জমাতিয়া বলেন, এই রাজ্যের মন্ত্রী নরেশ জমাতিয়ার নির্বাচনী ক্ষেত্রেও বহু গ্রাম আছে যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া পরেনি৷ উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদকে দেওয়া অর্থ আটকে রেখেছে রাজ্য সরকার৷ নীতি আয়োগের সুপারিশে এডিসি’র উন্নয়নে বরাদ্দ ১৮৬ কোটি টাকা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আটকে রয়েছে৷ তাই তিনি মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছিলেন৷ তাঁর দাবি, দলের বিরুদ্ধে সুর চড়ানোতে তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়েছে৷ তাঁতে কলংকিত করে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে৷ অবশ্য, সিপিএম বরাবরই বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এই সহজ পন্থা অবলম্বন করে থাকে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ তিনি জানান, আগেও অনেককে কলংকিত করে দল থেকে বহিস্কার করেছে সিপিএম৷ উল্লেখ্য, জয় কিশোর জমাতিয়াকে সিপিআইএম আগেই দল থেকে বহিষ্কার করেছে৷ কিন্তু জীতেন সরকারের বিষয়ে সিপিআইএম এখনোও কোন ঘোষণা দেয়নি৷
এছাড়া এদিন বিজেপি যোগ দিয়েছেন ঈশান বাহাদুর ক্ষত্রিয়, ডাঃ রমেশ দাস, আইনজীবী চন্দ্রশেখর সিনহা, আইনজীবী সিরাজ আলি, কংগ্রেসের এসসি সেলের নেতা রতন কান্তি রায়, কানাই বল সহ ৩৬৫ জন অবিজেপি রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থক৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *