সুপ্রীম কোর্টের রায় মেনেই নয়া পশু আইন, সিপিএম বিভ্রান্ত করছে, অভিযোগ বিজেপির

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ মে৷৷ সুপ্রীম কোর্টের রায় মেনেই পশু আইন ২০১৭ তৈরি হয়েছে৷ তাতে কোথাও বলা হয়নি গো হত্যা নিষিদ্ধ৷ নয়া নিয়ম প্রণয়ণের মুখ্য উদ্দেশ্য গরু পাচার বন্ধ করা৷ কিন্তু, সিপিএম সাম্প্রদায়িক বিভাজনের উদ্দেশ্যেই জেনেশুনে মিথ্যা প্রচার করছে৷ বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে এইভাবেই বিজেপির বিরুদ্ধে পশু আইন নিয়ে উত্থাপিত সমস্ত অভিযোগের খন্ডন করেন দলের রাজ্য কমিটির মুখপাত্র ডাঃ অশোক সিনহা৷ এদিকে, রাজ্য সরকার কেন্দ্রের গো-রক্ষণ সংক্রান্ত বিধি রাজ্যে কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ কারণ, বিষয়টি জনগণের স্বার্থ বিরোধী বলে মনে করে ত্রিপুরা সরকার৷
গো-রক্ষা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত বিধির পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিপুরার ক্ষমতাসীন দল যে অবস্থান নিয়েছে তাতে শান্তি-সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ্ হবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিজেপি রাজ্য কমিটি৷ কেন্দ্রীয় বিধির অপব্যখ্যা করা হচ্ছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দল৷ বিজেপি রাজ্য কমিটির মুখপাত্র ডাঃ অশোক সিনহা জানিয়েছেন, ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কোন ব্যবস্থা নেয়নি৷ এখন সিপিআইএম এই নিয়ে অপ্রচার শুরু করেছে৷ বিজেপি মুখপাত্র অরুণ কান্তি ভৌমিক বলেন, ১৯৬০ সালে সংসদে পশু আইন পাশ হয়৷ কিন্তু এতদিন তা কার্যকর হচ্ছিলো না৷ বিষয়গুলি এতদিন উপেক্ষিত ছিল৷ গবাদি পশু রক্ষা করা বিশেষ প্রয়োজন৷ এর সঙ্গে ধর্মীয় বিষয়গুলিকে যুক্ত করা অপ্রাসঙ্গিক৷
ডাঃ অশোক সিনহা বলেন, ২০১৪ সালে একজন মহিলা নেপালে গবাদি পশু পাচার হয়ে যাওয়া নিয়ে সুপ্রীম কোর্টে একটি মামলা করেছিলেন৷ এই মামলায় উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড, ওড়িশা, হরিয়ানা, বিহারের পাশাপাশি ত্রিপুরাকেও যুক্ত করা হয়৷ এরপর কেন্দ্রীয় সরকার এসএসবি’র তৎকালীন মহানির্দেশককে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটি গঠন করেছিল এবিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য৷ ত্রিপুরার তরফ থেকেও এই কমিটিতে মতামত দেওয়া হয়৷ সে অনুযায়ী এখন কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে৷ তিনি বলেন, গো মাংস খাওয়া না খাওয়া এখানে অপ্রাসঙ্গিক৷ ধর্মীয় কারণে পশু বলি এখানে নিষিদ্ধ করা হয়নি৷ বর্তমানে আইনে এর স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে৷
ডাঃ সিনহা জানান, নয়া বিধিতে বলা হয়েছে, বাজারে কোন পশু বধ করার জন্য বিক্রি করা যাবে না৷ মাংস ব্যবসায়ীর জন্য গবাদি পশু বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ তবে, বাজারের বাইরে ব্যক্তিগত বিক্রিতে কোন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি৷
তিনি জানান, পশুপাখীদের অবৈধ বেচাকেনা রোধ করা নয়া নিয়মের মুখ্য উদ্দেশ্য৷ পাশাপাশি বাজারে দালালচক্রকে দমানো এই নতুন অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য৷ ডাঃ সিনহা জানান, নয়া নিয়মে বলা হয়েছে সুস্থ পরিকাঠামোর মধ্য দিয়ে বৈধ কেনাবেচায় কোন বিধি নিষেধ নেই৷ তাঁর দাবি, নয়া নিয়ম কার্যকরে গবাদি পশু পাচার আটকানো সম্ভব হবে৷
এদিকে, রাজ্য সরকার কেন্দ্রের গো-রক্ষণ সংক্রান্ত বিধি রাজ্যে কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ বিষয়টি জনগণের স্বার্থ বিরোধী বলে মনে ত্রিপুরা সরকার৷ ত্রিপুরার কৃষি এবং প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী অঘোর দেববর্মা জানিয়েছেন, গরুর বেচাকেনা এবং গরু হত্যা করার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে না৷ কেন্দ্রীয় সরকার সারা দেশের জন্য এই নির্দেশ জারি করলেও রাজ্যে সরকার এরাজ্যের মানুষের স্বার্থ বিরোধী কাজ করবে না৷ যদিও রাজ্য সরকারকে এখনো নতুন বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়নি কেন্দ্রীয় সরকার৷ এমনকি রাজ্য সরকারের সঙ্গে এই নির্দেশ জারির আগে আলোচনাও করা হয়নি৷ তিনি বলেন, রাজ্যে গরুর কেনাবেচা বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা গরুর বাজারগুলি বন্ধ হয়ে গেলে নতুন সমস্যা সৃষ্টি হবে৷ কারণ যাদের কাছে অতিরিক্ত গরু আছে তারা তা বিক্রি করতে পারবে না আবার যাদের প্রয়োজন তারাও কিনতে পারবে না৷ ফলে রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশের লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাঘাত ঘটবে৷ এর আগে রাজ্যের ক্ষমতাসীন সিপিআইএম এর সাধারণ সম্পাদক বিজন ধর এই বিধির বিরোধিতা করে বলেছিলেন, রাজ্যের তপশিলি জাতি অংশের জনগনের মধ্যে চারটি সম্প্রদায় পশু চামড়ায় ব্যবসা এবং শিল্পের সঙ্গে যুক্ত৷ একেই সঙ্গে এই বিষয়টি কৃষকদের স্বার্থ বিরোধী৷ রাজ্যের ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণ গবাদি পশুর মাংস প্রোটিন হিসাবে নিয়ে থাকে৷ ফলে জনস্বার্থে বিরোধী সিদ্ধান্ত এরাজ্যে কার্যকর করা যাবে না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *