চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের নিয়োগই ছিল অবৈধ, নতুন ১৩ হাজার পদে পুনর্বাসন নিয়ে প্রশ্ণ বিরোধীদের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ মে৷৷ ১৩ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করা হলেও, চাকুরীচ্যুত ১০৩২৩ জনকে পুনর্বাসন দেওয়া আদৌ সম্ভব হবে কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ণ তুলে দিল বিরোধী দলগুলি৷ বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ১০৩২৩ জন শিক্ষকের নিয়োগ বেআইনী এবং অসাংবিধানিক বলা হয়েছে৷ ফলে, তাঁদের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা বিবেচনা করা যাবে না৷ বিজেপি’র বক্তব্য, অশিক্ষক পদে নিয়োগে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ ভূ-ভারতে এমন কোথাও নেই বলে দাবি করেছে বিজেপি৷ এদিকে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা বলেন, এই ১৩ হাজারে পদে নিয়োগের পর মামলা যাতে না হয়, সে ব্যবস্থা রাজ্য সরকারকে নিতে হবে৷ কারণ, সরকারের ভুলে ১০৩২৩ জনের চাকুরি বাতিল হয়েছে৷ নতুন করে কেউ যেন পুণরায় বিড়ম্বনার শিকার না হন, তা রাজ্য সরকারকে সুনিশ্চিত করতে হবে৷
বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভায় ১৩ হাজার নতুন অশিক্ষক পদ সৃষ্টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ তাতে শিক্ষা দপ্তরের অধীন একাডেমিক কাউন্সেলার, স্টুডেন্ট কাউন্সেলার, সুকল লাইব্রেরী এসিসটেন্ট, হোস্টেল ওয়ার্ডেন এবং সুকল এসিসটেন্ট এই পাঁচটি ক্যাটাগরিতে পদ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরে আর্লি চাইল্ডহুড কো-অর্ডিনেটর পদ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ এই পদগুলিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক করেছে রাজ্য সরকার৷ এই সিদ্ধান্তে স্পষ্ট যে, রাজ্য সরকার চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যেই এতগুলি পদ সৃষ্টি করেছে৷ আর তাতেই প্রশ্ণ তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন৷ এদিন তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ১০৩২৩ জন শিক্ষকের নিয়োগ বেআইনী এবং অসাংবিধানিক বলেছে৷ ফলে, তাঁদের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা বিবেচনা করা কোনভাবেই সম্ভব নয়৷ কারণ, আদালত যেখানে তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়াকেই বাতিল করে দিয়েছে, সেক্ষেত্রে চাকুরীর অভিজ্ঞতা ধর্তব্যের মধ্যে আসে না৷ তিনি আরো বলেন, রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভারতের সংবিধানের ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদ লঙ্ঘিত হয়েছে৷ তিনি জানান, সংবিধানের ১৬ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সুযোগের বেলায় সকলের সমানাধিকার রয়েছে৷ কিন্তু, রাজ্য সরকার নতুন পদ সৃষ্টি করে শিক্ষকতা অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক করেছে৷ তাতে, রাজ্যের বেকাররা বঞ্চিত হবেন৷ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলেও, বেকাররা তাতে উপকৃত হবেন না৷ তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত আবারও আইনী গ্যাড়াকলে পড়তে হবে৷
সুদীপবাবু এদিন বলেন, নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র শুরু করেছে রাজ্য সরকার৷ চাকুরীর নামে টোপ দেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, আদালতের রায়ে চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পূরণে তাঁদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে৷ তাঁর কটাক্ষ, বেকার সমাজের সাথে রাজ্য সরকার জালিয়াতি করছে৷ জালিয়াতির সাহায্যে চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের জীবনজীবীকা নিয়ে নোংরা খেলায় নামার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার৷ তাই তিনি সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির কাছে আবেদন জানিয়েছেন, সকলে মিলে একজোট হয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠুন৷
এদিকে, সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদেশ বিজেপি মুখপাত্র বলেন, অশিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শর্ত রাখা হয়েছে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক, তা ভূ-ভারতে কোথাও নেই৷ পাশাপাশি তিনি আরো বলেন, কাউন্সেলার পদে রাজ্য সরকারের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ কিন্তু, কাউন্সেলার হতে গেলে ন্যুনতম যোগ্যতার মাপদন্ড রয়েছে৷ যে কোন ডিগ্রিধারি কাউন্সেলিংয়ের কাজ করতে পারেন না৷ রাজ্যে যতজন শিক্ষক রয়েছেন, তাঁদের কারোরই কাউন্সেলার হওয়ার মতো যোগ্যতা নেই৷ তিনি বলেন, রাজ্য সরকার আবারো চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের অনিশ্চিয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে৷
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে নিয়োগের নামে কাউকে যেন বিড়ম্বনায় পড়তে না হয় সেবিষয়ে রাজ্য সরকারকে সতর্ক করেছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *