নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৯ মে৷৷ রাজ্য সরকার ক্রমাগত সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক কাজ করে চলেছে৷ আদালতের নির্দেশে

লেজেগোবরে হয়ে উন্নয়নের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে৷ ফলে, মাসাধিককাল সময় ধরে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের অধীন নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে৷ মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এই সমস্ত অভিযোগ এনেছেন বিধায়ক রতনলাল নাথ৷ এদিন তিনি আরো বলেন, গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের বাস্তুকাররা কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন৷ রাজ্য সরকারের নির্দেশে নিয়মনীতি উলঙ্ঘন করে কাজ করতে গেলে বিপদের মুখে পড়ার আশঙ্কায় তারাও কাজ করতে চাইছেন না৷
এদিন রতনবাবু বলেন, গ্রামোন্নয়ন দপ্তর জিএফআর(জেনারেল ফিনান্সিয়াল রুলস) মানছে না৷ টেন্ডার ছাড়া কোন কাজ করা যাবে না৷ সে নির্দেশিকা গ্রামোন্নয়ন দপ্তর মানছে না৷ ফলে, কোটি কোটি টাকার কাজ বিনা টেন্ডারেই করে চলেছে গ্রামোন্নয়ন দপ্তর৷ নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডার ছাড়া কাউকে কাজ দিতে পারে না রাজ্য সরকারের দপ্তরগুলি৷ ২০১৬ সালে ১৪ মে অর্থ দপ্তরের সার্কুলারে বলা হয়েছে বিভিন্ন দপ্তর বিনা টেন্ডারে কাজ করছে৷ ফলে, রাজ্য সরকারের উপর বোঝা বাড়ছে৷ সার্কুলারে বলা হয় এখন থেকে টেন্ডার ছাড়া কোন কাজ করা যাবে না৷ কিন্তু গ্রামোন্নয়ন দপ্তর সেই সার্কুলার মানছে না বলে অভিযোগ করেছেন রতনবাবু৷ তিনি জানান, সমাজসেবক সন্তোষ দে বিনা টেন্ডারে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কাজ হচ্ছে এবিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন৷ মামলার রায়ে গত ১ মার্চ উচ্চ আদালত গ্রামোন্নয়ন দপ্তরকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে নিয়ম বহির্ভূত কোন কাজ করা যাবে না৷ রতনবাবু আরো জানান, গত ১৭ এপ্রিল মুখ্যসচিব, গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব এবং পশ্চিম জেলার জেলাশাসকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়৷ এদিকে, পশ্চিম জেলার জেলাশাসক গত ৩১ মার্চ এক নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছেন, রেগা, বিধায়ক উন্নয়ন তহবিল, সাংসদ উন্নয়ন তহবিল সহ বিভিন্ন নির্মাণ কাজ ১ এপ্রিল থেকে সারা রাজ্যে বন্ধ থাকবে৷ এবিষয়ে রতনবাবু প্রশ্ণ তুলে বলেন, উন্নয়নের কাজ বন্ধ করার অধিকার রাজ্য সরকারকে কে দিয়েছে৷ তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকার চাইছে উন্নয়নের কাজ বন্ধ করার দায় কেন্দ্র এবং আদালতে ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে৷
এদিন তিনি আরো বলেন, রাজ্য সরকার দুর্নীতির কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছে গ্রামোন্নয়ন দপ্তর এবং পঞ্চায়েত দপ্তরকে৷ বাজেটে এই দুটি দপ্তরের জন্য ১৫৮৯ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ এর একটা অংশ পার্টি ফান্ডে এবং নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করতে চাইছে রাজ্য সরকার৷ তিনি জানান, গত ২৫ এপ্রিল জেনারেল ফিনান্সিয়াল রুলস সংশোধন করেছে রাজ্য সরকার৷ তাতে, বলা হয়েছে, কেবলমাত্র গ্রামোন্নয়ন দপ্তর এবং পঞ্চায়েত দপ্তরের কোন নির্মাণ কাজে টেন্ডারের প্রয়োজন হবে না৷ রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে শ্রীনাথ অসাংবিধানিক বলে উষ্মা প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, এই ধরনের সংশোধনী বিধানসভা বিল পাশ না করে আনা যায় না৷ এদিন তিনি জানান, ২০১৫ সালে ৩ এপ্রিল উচ্চ আদালতের তদানীন্তন মুখ্যবিচারপতি দীপক গুপ্তা এক রায়ে বলেছেন, সরকারি আমলারা মিথ্যা কথা বলেন৷ তা কাম্য নয়৷ শ্রীনাথ জানান, বাজেটে বরাদ্দ প্রচুর টাকা প্রতি বছর রাজ্য সরকার খরচ করতে পারে না৷ এক তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৮১৬ কোটি ৯৩ লক্ষ, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৮০৮ কোটি ৫২ লক্ষ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৪৬৭ কোটি ৪৭ লক্ষ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৬০৭ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা রাজ্য সরকার খরচ করতে পারেনি৷
রতনবাবুর অভিযোগ, নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে শাসক দলকে ক্ষমতা হারানোর ভয় তাড়া করছে৷ ফলে, রাজ্য সরকার আরো বেশি দেওয়ালি হয়ে উঠেছে৷ অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রশাসনকে নগ্ণভাবে ব্যবহার করে নির্বাচনে দাদন বিলির ফান্ড তৈরি করতে ব্যস্ত রাজ্য সরকার৷ তাঁর অভিযোগ পুরো সরকারটাই শেষবারের মত কমিশন বাণিজ্যে কোটি কোটি টাকা কামাতে নেমেছে৷ এবিষয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা গ্রামীণ এর অন্তর্গত এক সার্কুলার জারি করে গ্রামোন্নয়ন দপ্তর বিডিওদের বলেছে সমস্ত সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে টিন ক্রয় বাবদ ১৮ হাজার ৪৬০ টাকা করে নেওয়ার জন্য৷ তাঁর অভিযোগ, সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে এই টাকা নিয়ে কমিশন আদায় করবে রাজ্য সরকার৷ একটি তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, গ্রামীণ এলাকায় ২৩ হাজার ৭২৩টি পরিবারকে ঘর দেবে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তাতে মোট বরাদ্দ অর্থ ৩০৮ কোটি ৩৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা৷ এর থেকে টিন ক্রয় বাবদ ৪৩ কোটি ৭৯ লক্ষ ২৬ হাজার ৫৮০ টাকা রেখে দেবে রাজ্য সরকার৷ তাঁর দাবি, সারা দেশে কোথাও এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি৷ কমিশন আদায়েই এই পথ অবলম্বন করছে রাজ্য সরকার৷