ত্রিপুরায় রাজনীতির মঞ্চ দিনে দিনেই উত্তপ্ত হইয়া উঠিতেছে৷ এই উত্তাপ আগামী ২০১৮ সালের রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রাখিয়াই৷ প্রদেশ বিজেপি সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব যেভাবে বিপ্লব দেখাইতেছেন সেই তুলনায় তৃণমূল কংগ্রেস আসর গরম করিতে পারিতেছে না৷ প্রদেশ বিজেপি সভাপতির বাসভবনে ক্লাব সদস্যদের হামলার ঘটনা ঘিরিয়া পরিস্থিতি তপ্ত হইয়া উঠে৷ বিপ্লববাবুকে বাঁচাইতে তাহার দেহরক্ষী শূন্যে এক রাউন্ড গুলি ছঁুড়িয়াছে৷ প্রকাশিত সংবাদে জানা গিয়াছে, কৃষ্ণনগরের একটি ক্লাবের সদস্যরা কৃষ্ণনগর নতুনপল্লী রোডের বিপ্লববাবুর বাড়ীতে ঢুকিয়া তাঁহার গাড়ী ভাঙচুর করিয়াছে৷ তাঁহার চালককে বেধরক মারধোর করিয়াছে৷ চালককে পিটাইবার পরেই বিপ্লববাবুর দিকে আগাইয়া যায় ক্লাব সদস্যরা৷ তখন ব্যক্তিগত দেহরক্ষী শূন্যে গুলি চালায়৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করিয়া থানাায় মামলা পাল্টা মামলা হইয়াছে৷ ঘটনার পরের দিনই বিজেপি কর্মীরা শহরে বিক্ষোভ দেখায় এবং পুলিশের নজর এড়াইয়া মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সরকারী বাসভবনের সামনেও বিক্ষোভে ফাটিয়া পড়ে৷
যেকোনও হামলার ঘটনাই নিন্দনীয়৷ কৃষ্ণনগরের ক্লাবের সদস্যরা একজন রাজনৈতিক দলের প্রদেশ সভাপতির উপর হামলা চালানোর পিছনে কি কারণ রহিয়াছে তাহাও গবেষণার বিষয় হইয়া দাঁড়াইয়াছে৷ একথা ঠিক, প্রত্যেকেই আত্মপক্ষ সমর্থন করিয়া বক্তব্য রাখিবে৷ ক্ষমতাসীন সিপিএম দলও মুখ্যমন্ত্রীর সরকারী বাসভাবনের সামনে বিক্ষোভ আন্দোলনের নিন্দা জানাইয়াছে৷ শহরে বিক্ষোভ মিছিল করিয়াছে৷ সোজা কথায়, রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত হইয়া উঠিয়াছে৷ উত্তপ্ত রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেস অনেকটাই যেন ম্রিয়মান৷ ত্রিপুরায় তৃণমূলের স্টিয়ারিং এখন সুদীপ রায় বর্মনের হাতে৷ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো আশা করিয়াছিলেন একটি জবরদস্ত টিম পাইয়াছেন৷ কিন্তু, সিপিএম এই টিমের লীডার দেখিয়া নিশ্চিন্তে কাটাইতেছে৷ হাতে নাতেই তাহার প্রমাণ মিলিল৷ কর্ণেল চৌমুহনীতে নিজের স্ত্রীর নামে কেনা বাড়ী উদ্ধার করিতে গিয়া সুদীপবাবু নিজের অনুগামীদের নিয়া যে বীরত্ব দেখাইয়াছেন তাহাতে রাজ্যে তৃণমূল অনেক যোজন পিছাইয়া গেল৷ রাজ্যের মানুষ যে ভরসায় তৃণমূলকে গ্রহণ করিতে আগ্রহী হইয়াছে তাহা বিরাট ধাক্কা খাইয়াছে৷ নিজের বাড়ী জমি উদ্ধার করিবার অনেক আইনী পথ আছে৷ সেই পথে না গিয়া দলীয় পদাধিকারীদের সঙ্গে নিয়া যেভাবে ‘বিপ্লব’ করিয়াছেন তাহা একজন রাজনৈতিক নেতার পক্ষে বেমানান শুধু নহে ইহাতে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হইতে বাধ্য৷ এই বিপ্লবের ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেস ত্রিপুরায় একটু ধাক্কা খাইয়াছে৷ আর এই অবস্থায়, বিপ্লববাবুর দল বিপ্লব দেখাইয়া চলিয়াছে৷ এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিল রাজ্যের রাজনীতি অনেক বেশী হিংসার পথ ধরিতেছে৷ রাজনীতি যদি হিংসাত্মক হইয়া উঠে তাহা হইলে গণতন্ত্রের মহিমাই ভূলুন্ঠিত হইবে৷ সব রাজনৈতিক দলগুলি যদি নিজেদের সংযত রাখিতে না পারে, হিংসার আগুন জ্বালাইয়া রাজনীতির ফায়দা তুলিতে চায় তাহা হইলে ত্রিপুরায় গণতন্ত্র দূর্বল হইবে৷ মানুষের অধিকার হইবে ভূলুন্ঠিত৷ নিরাপত্তাহীনতায় জনমনে আতংক সঞ্চারিত হইবে৷
2016-10-17