জমি ফিরে পেলেন সিঙ্গুরের কৃষকরা, বিজয় মঞ্চ থেকেই শিল্পের ডাক মমতার

সিঙ্গুর, ১৪ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : অবশেষে জমি ফিরে পেলেন সিঙ্গুরের কৃষকরা | টাটার হাত থেকে ফিরিয়ে আনা সিঙ্গুরের জমি mamata bannerjeeৱুধবার কৃষকদের ফিরিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় | এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০৮ সালের সেই প্রতিবাদ মঞ্চের স্থানে তৈরি বিজয় মঞ্চ থেকে সিঙ্গুরের কৃষকের হাতে তুলে দেন জমির পরচা ও ক্ষতিপুরনের চেক| আর ওই মঞ্চ থেকেই এদিন শিল্পায়নের ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী | যে টাটাদের গাড়ি কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণকে ঘিরেই সিঙ্গুরে আন্দোলনের সূত্রপাত, সিঙ্গুরের চাষিদের জমি ফেরত দিতে গিয়ে সেই টাটাদেরই রাজ্যে কারখানা গড়ার আমন্ত্রণ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী| বলেন, আমাদের কাছে জমি আছে| টাটা, বিএমডব্লউ যে কেউ আসতে পারে|
আজ সভামঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, হাওড়া ও পানাগড়ে সরকারি জমি আছে| তিনি টাটদের উদ্দেশে বলেন, গোয়ালতোড়ে আমাদের ১০০০ একর জমি আছে| ল্যান্ড ব্যাঙ্ক থেকে জমি দেব| এক মাস সময় দিলাম| ভেবে দেখুন কারখানা করবেন কি না| তিনি আরও বলেন, ওই জমিতে যদি কেউ গাড়ি কারখানা করতে চান, সে টাটাই হোক বা বিএমডব্লউ, তা হলে আমাদের শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রর সঙ্গে যোগাযোগ করুন|
ন্যানো কারখানার জন্য টাটাদের নেওয়া ৯৯৭ একরের মধ্যে অনিচ্ছুক ইচ্ছুকদের জমি ছিল ৪০০ একর| ওই ৪০০ একর জমি ফিরিয়ে দিতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল সিঙ্গুর আন্দোলন| রাজ্যে পালাবদলের ক্ষেত্রে যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল| তাই সিঙ্গুরের কৃষকের জন্যও এ দিন নতুন অনুদান ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী| নতুন করে চাষ শুরুর জন্য সরঞ্জাম কেনার জন্য প্রত্যেক কৃষক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেবে রাজ্য সরকার| যত দিন না জমি চাষযোগ্য করে দেওয়া হচ্ছে, তত দিন পর‌্যন্ত যে কৃষকদের পরিবারপিছু মাসিক ২০০০ টাকা ভাতা এবং ২ টাকা কিলো দরে চালও যে মিলবে, তাও মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আবার ঘোষণা করেন|
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে এ দিন রাজ্যের প্রায় গোটা মন্ত্রিসভা হাজির ছিলেন| ছিল সুশীল সমাজের এক বিরাট অংশও| সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম নিয়ে মমতার উত্তাল আন্দোলনের দিনে যে শিল্পী-বিদ্বজ্জন-মানবাধিকার কর্মীদের দেখা যেত মমতার পাশে, তাঁদের বড় অংশকেই এ দিন সিঙ্গুরের মঞ্চে দেখা গিয়েছে| মেধা পাটেকর, যোগেন চৌধুরী, দেব, অর্পিতা ঘোষ, ইন্দ্রনীল সেনরা দলের সাংসদ| তাঁদের উপস্থিতি প্রত্যাশিতই ছিল| সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কবীর সুমন, প্রতুল মুখোপাধ্যায়, শুভাপ্রসন্ন, শাঁওলি মিত্র, মেধা পাটকর এবং আরও অনেকে|
এদিকে, এদিন সকাল থেকেই সভাস্থলকে ঘিরে যে উন্মাদনা দেখা গেল সিঙ্গুরে, তা প্রত্যাশাকেও অনেকটা ছাপিয়ে গেল| সিঙ্গুর শুধু নয়, অন্যান্য এলাকা থেকেও লোকজন এ দিন হাজির হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থলে| তবে সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটির মিছিল স্বাভাবিক ভাবেই এ দিন অন্য সব মিছিলের আকারকে ছাপিয়ে যায়| বেড়াবেড়ি, খাসেরভেড়ি হয়ে টাটার প্রকল্প এলাকার মধ্যে দিয়ে সভামঞ্চের দিকে এগোয় সে মিছিল| ১০ বছর হাতছাড়া থাকা জমির ৱুক চিরে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির এ দিনের মিছিলকে এগোতে দেখে অনেককেই আবেগবিহ্বল হয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে সিঙ্গুরে|

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *