ঢাকা, ১০ই সেপ্ঢেম্বর৷৷ বাংলাদেশের টঙ্গীতে একটি কারখানায় বিস্ফোরণে চবিবশ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে৷ শনিবার সকালে অগ্ণিকাণ্ডের পর ট্যাম্পাকো ফয়েলস নামে ওই কারখানা থেকে লাশ উদ্ধার করে টঙ্গী হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিেেকলে নেওয়া হয়৷ ফলে বিভিন্ন স্থান থেকে তথ্য আসছিল৷ উত্তরা মেডিকেলে থাকা লাশ দুটি দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে মর্গে পাঠানো হলেও সেখানে দুজনের মৃতদেহ রয়েছে বলে হিসাব করেছিলেন গণমাধ্যমের কর্মীরা৷ বিকালে সব লাশ ঢাকা মেডিকেল কলে মর্গে নেওয়ার পর জানানো হয়, টঙ্গীর ওই কারখানায় অগ্ণিকান্ডে মোট নিহতের সংখ্যা ২৪ জন৷ ট্যাম্পাকো ফয়েলসের পাঁচ তলা ওই কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের পর আগুণ ধরে যায় বলে জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের অফিসার মো রফিকুজ্জামান জানান৷ দুপুরে আগুণ নেভানোর আগে বেশ কয়েকজনের লাশ বের করে আনা হয়ে, কয়েকজন হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান৷ এদের কেউ অগ্ণিদগ্দ হয়ে মারা গেছেন৷ আগুণে কারখানার কাঠামো ভেঙ্গে পড়ে তার নিচে চাপা পড়ে মারা যান৷ কেউ কেউ আহত অন্তত ৩৫ জনকে টঙ্গী সরকারী হাসপাতালে, ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল ও উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়৷ গাজীপুর জেলা প্রশাসন নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে এবং আহতদের ৫ হাজার টাকা করে দিচ্ছে৷ কারখানার মালিক সিলেটের সাবেক বিএনপি সাংসদ সৈয়দ মো মকবুল হোসেন হতাহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ এই ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন৷ কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক এস এম আলম৷ মকবুল জানান, ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত তার এই কারখানায় সাড়ে ৪শর মত শ্রমিক রয়েছে৷ সবার ঈদের বোনাসসহ বেতন-বাতা কয়েকদিন আগেই পরিশোধ করা হয়েছিল৷ শুক্রবার রাতের পালায় ৭৫ জনের মতো কাজ করছিলেন৷ শনিবার ঈদের ছুটি হওয়ার কথা ছিল৷ সকাল ৬টায় আগুণের খবর পেয়ে জয়দেবপুর, টঙ্গী, কুর্মিটোলা, সদর দপ্তর, মিরপুর ও উত্তরাসহ আশে-পাশের ফায়ার স্টেশনের ২৫ ইউনিট নেভানোর কাজ শুরু করে বলে জানান জয়দেবপুরের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান৷ ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, সকাল ৬টার দিকে কাজ চলার সময় চি তলায় বয়লার বিস্ফোরণের পর কারখানা পুরো ভবনে আগুণ ছড়িয়ে পড়ে৷
নিহত প্রকৌশলী অনিসুর রহমানের স্ত্রী নিগার সুলতানা জানান, পৌনে ৬টার দিকে একটি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান৷ কারখানার পাশে গোপালপুর এলাকায় তার বাসা৷ শব্দ শুনে বেরিয়ে স্বামীর কারখানা থেকে কালো ধোয়া বের হতে দেখে ছুটে যান নিগার৷ গিয়ে দেখেন তার স্বামীসহ কয়েকজনের লাশ বের করা হচ্ছে৷ টঙ্গী রেল স্টেশনের কর্মী লিখন জানান, পাঁচ তলায় কারখানার চতুর্থ তলায় বেশ কিছু শ্রমিক জানালা দিয়ে হাত নেড়ে তাদের বাঁচানোর আকুতি জানাচ্ছিলেন৷ এসময় স্থানীয়রা মই নিয়ে শ্রমিকদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায়৷ কিন্তু ধোঁয়া ও তাপের কারণে তাদের ওই চেষ্টা ব্যর্থ হয়৷ কিছুক্ষণ পরে ওই তলায় থাকা শ্রমিকদের আর কোন সাড়া দেখা যায়নি৷ ততক্ষণে আগুণ পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে৷ কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে আশপাশের এলাকাও অন্ধকারচ্ছন্ন হয়ে পড়ে৷
2016-09-11